প্রকাশিত:
২৯ মে ২০২৪, ১৬:৫৬
দরজায় কড়া নাড়ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এবারে দ্বিতীয়বারের মত ওয়েস্ট ইন্ডিজে আয়োজিত হতে যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এই বৈশ্বিক আসর। সাথে প্রথমবারের মতো আয়োজক হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০১০ সালের পর আবার বিশ্বকাপ বসবে আটলান্টিকের পাড়ে। ২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরু হয় এই আসর। এবারের নবম আসরে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে ২০ দল। একই সাথে এবার আয়োজক হিসেবে থাকছে দুই দেশ। এর আগে শুধুমাত্র একবারই একের অধিক আয়োজক দেখা গিয়েছে। ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া সেই বিশ্বকাপে আয়োজক ছিলো সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান। যদিও সেই বিশ্বকাপটির আয়োজক হিসেবে থাকার কথা ছিলো ভারতের।
ক্রিকেটের সীমিত ওভারের এই সংস্করণ মানেই রানের ফোয়ারা। বিশ ওভারের এই ম্যাচে রানের উৎসবই বড় কথা। বিগত আট আসরে কেবল দুবার ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার গিয়েছে অলরাউন্ডার কিংবা বোলারের কাছে। বাকি সবটা সময় ব্যাটাররাই পেয়েছেন ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার।
বিগত আট আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকা দেখে নেওয়া যাক এক নজরে
ম্যাথু হেইডেন (অস্ট্রেলিয়া) (২০০৭)
দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হওয়া প্রথম আসরে সর্বোচ্চ রান করেছিলেন বিধ্বংসী অজি ওপেনার ম্যাথু হেইডেন। দল ভারতের কাছে হেরে সেমিফাইনালে বিদায় নিলেও ব্যাট হাতে তিনি ছিলেন সবার সেরা। ৬ ইনিংসে ৮৮.৩৩ গড়ে ও ১৪৪.৮০ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ২৬৫ রান। সর্বোচ্চ ইনিংসটি ছিলো ৭৩ রানের। ৩২টি চার ও ১০টি ছয়ের পাশাপাশি করেছিলেন চারটি অর্ধশতক। হেইডেন সেমিফাইনাল হেরেছেন ভারতের কাছে। পরবর্তীতে সেই ভারতই হয় চ্যাম্পিয়ন। হেইডেনের পর একইরকম ভাগ্য হয়েছিল আরও অনেকেরই।
তিলকারাত্নে দিলশান (শ্রীলংকা) (২০০৯)
এবারের আসর ক্রিকেটের জন্মভূমি ইংল্যান্ডে। অল এশিয়ান ফাইনালে শিরোপা উঁচিয়ে ধরে পাকিস্তান। তবে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন শ্রীলংকান অলরাউন্ডার তিলকারাত্নে দিলশান। ৭ ইনিংসে ৫২.৮৩ গড়ে ও ১৪৪.৭৪ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ৩১৭ রান। সর্বোচ্চ ইনিংসটি ছিলো ৯৬ রানের। চার মেরেছিলেন ৪৬টি, ছয় ৩টি। এক ম্যাচ অপরাজিত থাকার পাশাপাশি অর্ধ শতক করেছিলেন তিনটি।
তবে ফাইনালের মঞ্চে ব্যর্থ হয়েছিলেন দিলশান। প্রথম ওভারেই মোহাম্মদ আমিরের বলে আউট হয়েছিলেন তিনি। ফাইনালে শ্রীলঙ্কার হারের পেছনেও অনেকেই সেদিনের দিলশানের ব্যাটিং ব্যর্থতাকে দায়ী করেন। ফাইনাল হারলেও ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পেয়েছিলেন দিলশান।
মাহেলা জয়াবর্ধনে (শ্রীলংকা) (২০১০)
প্রথমবারের মতো বিশ্ব আসর বসলো ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। এবারের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক আরেক শ্রীলংকান মাহেলা জয়াবর্ধনে। ৬ ইনিংসে করেন ৩০২ রান। ৬০.৪০ গড় ও ১৫৯.৭৮ স্ট্রাইক রেটে এই রান করেন তিনি। ১টি শতকের পাশাপাশি ছিলো দুইটি অর্ধ শতক। জয়াবর্ধনের দল সেবার সেমিফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিল। শেষ চারের ওই ম্যাচে জয়াবর্ধনে ব্যর্থ হন। ৯ বলে ১০ রান করে আউট হয়েছিলেন। এই ব্যর্থতার পর লংকানরাও খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। জয় পায় ইংল্যান্ড। ফাইনালেও জয় পেয়েছিল ইংলিশরাই।
শেন ওয়াটসন (অস্ট্রেলিয়া) (২০১২)
প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজিত হয় এশিয়ায়। দল সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিলেও সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় সবার ওপরে ছিলেন শেন ওয়াটসন। ৬ ইনিংসে ৩ অর্ধ শতকের সাহায্যে ৪৯.৮০ গড় ও ১৫০ স্ট্রাইক রেটে ২৪৯ রান করেন তিনি। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতে ক্যারিবীয়রা। ওয়াটসনের গল্পটাও বলতে গেলে আগের আসরের জয়াবর্ধনের মতোই। আসরের সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওপেনার ওয়াটসন আউট হন ৭ রানে। অস্ট্রেলিয়া হারে ৭৪ রানে। ফাইনালে উইন্ডিজরা শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে শিরোপা উঁচিয়ে ধরে। সেবারের ম্যান অব দ্য সিরিজও হয়েছিলেন ওয়াটসন।
বিরাট কোহলি (ভারত) (২০১৪)
এবারের বিশ্বকাপ বাংলাদেশে। মিরপুরের সেই অল এশিয়ান ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে প্রথমবার শিরোপা উঁচিয়ে ধরে শ্রীলংকা। বিশ্বকাপ জিততে না পারলেও সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন কোহলি। ৬ ইনিংসে ১০৬.৩৩ গড়ে ৩১৯ রান করেন তিনি। যা এখন পর্যন্ত এক আসরে করা কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রান। ১২৯.১৪ স্ট্রাইক রেটে ৪ অর্ধ শতকের সাহায্যে এই রান করেন তিনি। সর্বোচ্চ ইনিংস ছিলো ৭৭ রানের।
১/ একমাত্র ব্যাটার হিসেবে দুবার বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক বিরাট কোহলি।
২/ এশিয়ার বাইরে কেবল অস্ট্রেলিয়া থেকেই সর্বোচ্চ ব্যাটারের কীর্তি শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের।
৩/ একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে এই তালিকায় নাম আছে তামিম ইকবালের।
ফাইনালেও দুর্দান্ত ছিলেন কোহলি। তবে লঙ্কান কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারার দুর্দান্ত ইনিংসে ভারতকে হারের স্বাদ দেয় লঙ্কানরা। দিলশান এবং ওয়াটসনের মতোই সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের সুবাদে ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছিলেন কোহলি।
তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ) (২০১৬)
ভারতে আয়োজিত এই বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন একজন বাংলাদেশি। তামিম ইকবাল ৬ ইনিংসে করেন ২৯৫ রান। দল যাচ্ছেতাই খেললেও ব্যাট হাতে ঠিকই উজ্জ্বল ছিলেন তিনি। ১৪২.৫১ স্ট্রাইক রেট ও ৭৩.৭৫ গড়ে এক শতক ও এক অর্ধ শতকের সাহায্যে এই রান করেন তিনি। ২৪টি চারের বিপরীতে ছয় মেরেছেন ১৪টি। তামিম ইকবাল এই আসরেই একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে সেঞ্চুরি করেন। ওমানের বিপক্ষে এসেছিল সেই সেঞ্চুরি। যদিও মূলপর্বে তামিমের ব্যাট সেই অর্থে হাসেনি। বাংলাদেশও ব্যর্থ হয় সেবারে। আসরের চ্যাম্পিয়ন হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বাবর আজম (পাকিস্তান) (২০২১)
প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজন করে দুই সহযোগি দেশ। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে আয়োজিত সেই বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান করেন বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বাবর আজম। ৬ ইনিংসে ৬০.৬০ গড়ে ও ১২৬.২৫ স্ট্রাইক রেটে ৩০৩ রান করেন তিনি। কোনো শতকের দেখা না পেলেও অর্ধ শতক করেন ৪টি। ওয়ানডে বিশ্বকাপের সফলতম দল অস্ট্রেলিয়া প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে ওই আসরে।
বিরাট কোহলি (ভারত) (২০২২)
গত আসরের শিরোপাজয়ী অস্ট্রেলিয়া এবারের আয়োজক। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন বর্তমান সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। ৬ ইনিংসে তার সংগ্রহ ছিলো ২৯৬ রান। ৯৮.৬৬ গড়ের পাশাপাশি ১৩৬.৪০ স্ট্রাইক রেট। অর্ধ শতক ৪টি। সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি ৮২ রানের। পাকিস্তানকে হারিয়ে এক যুগ পর আবার শিরোপা উঁচিয়ে ধরে ইংল্যান্ড। বিরাট কোহলির ভাগ্যটাও বাবর, ওয়াটসন, জয়াবর্ধন কিংবা হেউডেনের মতো। এদের প্রত্যেকেই বিদায় নিয়েছিলেন সেমিফাইনালে। আর সবক্ষেত্রেই তাদের সেমিতে হারানো দলই ফাইনাল জিতেছিল। ভারতও ২০২২ সালে হেরেছিল পরবর্তীতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া ইংল্যান্ডের কাছেই।
মন্তব্য করুন: