[email protected] শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বঙ্গোপসাগরের তীরে ‘থালা ধোনি’র সাম্রাজ্যে

খেলাধুলা ডেস্ক

প্রকাশিত:
১২ অক্টোবার ২০২৩, ২২:১৮

ছবি: সংগৃহীত

দুটি শব্দ জানলে তামিল ভাষার কথোপকথনে একটু এগিয়ে যেতে পারেন? এক, আন্না। দুই, থালা।


এমনিতে কোনোভাবেই তামিল ভাষা আপনি বুঝবেন না। বলিউড সিনেমা আর সিরিয়ালের কারণে হিন্দি শব্দটা শুধু টুকটাক নয়, অনেক ভালো বুঝতে পারলেও তামিলটা আপনার দুর্বোধ্য হবে। তবে এখন অনেক তরুণ-তরুণী দেখছি তামিল ছবির প্রতি আলাদা টান অনুভব করছে। এজন্য ভাষাটাও রপ্ত করছে। যা নিশ্চিতভাবেই সংস্কৃতিমনা বাংলাদেশিদের পরিচয়ের আরেকটি বড় গুন।

ওহ, আন্না অর্থ বড় ভাই। আর থালা মানে প্রধান। সহজ ভাষায় নেতা।


মাদ্রাজ নাকি চেন্নাই। কোনটা বেশি পরিচিত? ১৬৩৯ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একটি স্থায়ী উপনিবেশ স্থাপনের জন্য মাদ্রাজপত্তনমকে নির্বাচন করে। চেন্নাপত্তনম নামে একটি গ্রাম এর দক্ষিণে অবস্থিত ছিল। পরবর্তীকালে এই দুই শহর একত্রিত করা হয় এবং ব্রিটিশদের পছন্দের কারণে মাদ্রাজ নামে পরিচিত হয়। ১৯৯৬ সালের আগস্ট মাসে এই শহরের নাম মাদ্রাজ থেকে পরিবর্তন করে চেন্নাই করা হয়, কারণ মাদ্রাজ শব্দটিকে পর্তুগিজ শব্দ মনে করা হত। ব্যস, মাদ্রাজ থেকে হয়ে গেল চেন্নাই।

বাংলাদেশিদের কাছে মাদ্রাজ পরিচিত ছিল চিকিৎসার কারণে। এছাড়া ভারতীয় ফিল্মের সুপারস্টার রজনীকান্তের ভক্ত না কে? এখনও তাই। চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে বাংলাদেশিদের ভিড়টাই যেন বেশি। এজন্য আশেপাশে ছোট বড় কত হোটেল যে তৈরি হয়েছে। ব্যবসার জন্য মালিকেরা কলকাতা থেকে বাঙালি ছেলেও ধরে এনেছে।

৩৬৮ বছরের পুরোনো এই শহরটির সঙ্গে সমুদ্র-জলসীমার কারণে অদ্ভুত টান রয়েছে বাংলাদেশের। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রাজধানী চেন্নাই বঙ্গোপসাগরের কোরোমন্ডের উপকূলে অবস্থিত। আর বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর বঙ্গোপসাগরের উত্তর দিকে বাংলাদেশ। বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেষা এই শহরেই এখন রয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ২৫ বছর পর গোটা দল প্রথমবার খেলতে এসেছে তপ্ত গরমের শহরে। যা অস্বস্তি ছড়াচ্ছে বেশ। সঙ্গে ডেঙ্গুর উপদ্রব তো আছেই।

১৯৯৮ সালে এখানে বাংলাদেশ দল একটি ওয়ানডে খেলেছে সে সময়ের অন্যতম প্রতিপক্ষ কেনিয়ার বিপক্ষে। ২৫ বছর আগে সেই ম্যাচে হারের পর এখন যে দলটি বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে তাদের জন্য অচেনা চেন্নাই। তবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের কারণে কিন্তু এই চেন্নাই অচেনা নয় কারোই। ক্রিকেটের ‘রজনীকান্ত’ মাহেন্দ্র সিং থালা। যার জন্য গোটা এম. এ. চিদম্বরম স্টেডিয়াম কেঁপে উঠে। শুধু মাঠের খেলার দিন-ই নয়। ধোনি চেন্নাইয়ে পা রাখলে শহর জেনে যায়, ‘ধোনি আ গ্যায়া।’

বলছিলেন এয়ারপোর্ট থেকে চিপকে নামিয়ে দেওয়া টেক্সি ড্রাইভার। গলায় আইসিসির কার্ড দেখে ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। সেই আলোচনার সারমর্ম, ‘ধোনি আমাদের না হয়েও আমাদের। রাঁচির ছেলে কিন্তু চেন্নাইয়ের থালা।’ আইপিএলের সুবাদেই ধোনির এতো এতো সমর্থক চেন্নাইয়ে। ২০০৮ সালে সে সম্পর্ক শুরু হয়েছিল, ২০২৩-এ এসেও অটুট। চেন্নাইকে নেতৃত্ব দিয়ে পাঁচটি আইপিএল শিরোপা ও দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন ধোনি। চেন্নাইয়ের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় আর নেতা হতে ধোনির আর কি চাই। তাইতো এই শহরটায় ধোনির পোস্টার, ফেস্টুন বাঁধানো ছবি পাওয়া যায়।

ধর্মশালার মিষ্টি আবহাওয়া থেকে চেন্নাইয়ের গা ছোঁয়া গরম কষ্ট দিচ্ছে। কিন্তু এখানকার ক্রিকেট সংস্কৃতি মন ভরাচ্ছে। ধর্মশালায় বিশ্বকাপের প্রচারণার সবটা জুড়েই ছিলেন ক্রীড়া মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর। তার ছবি, পোস্টার, শোভা পেয়েছিল স্টেডিয়ামের দেয়াল। আর চেন্নাইয়ে থালা ধোনি-ই সব। বিশ্বকাপের ঠিক আগে তার বিশাল এক ছবি নতুন করে আঁকা হয়েছে স্টেডিয়ামের দেয়ালে।

গতকাল চেন্নাইয়ে পৌঁছে রাজকীয় শুভেচ্ছা পেয়েছে দল। হোটেলের স্টাফরা করতালি, গলায় স্কার্ফ আর চেন্নাইয়ের বিশেষ ড্রিংকস দিয়ে স্বাগত জানান। হোটেলের তরফ থেকে দেওয়া তোয়ালেতে ছিল তাদের নাম লেখা। যেখানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের লোগোও শোভা পেয়েছে।

আজ সন্ধ্যায় অনুশীলনে নামবেন সাকিবরা। প্রতিপক্ষ নিউ জিল্যান্ড দুই ম্যাচের দুটিতেই জিতেছে। কিন্তু কিউইরা জানে বাংলাদেশ পাল্টে দিতে পারে সব ছক। এজন্য বাড়তি সতর্কবার্তা তাদের শিবিরে। কোচ শেন জার্গেনসন যেমন বলছিলেন, ‘বাংলাদেশ বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের ম্যাচগুলোতে নিজেদেরকে বেশ ভালোভাবে প্রমাণ করেছে। আমরা দলগতভাবে তাদেরকে বেশ সম্মান করি। পূর্বে ঘরের মাঠে এবং নিউ জিল্যান্ডে তারা আমাদের বিপক্ষে ভালো করেছে। কোনো সন্দেহ নেই এই ম্যাচটাও কঠিন ম্যাচ হতে যাচ্ছে। কারণ বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে প্রত্যেক খেলোয়াড়ের মনোযোগ এবং ভালো করার তাড়না বেড়ে যায়। এটা বিশ্বকাপের একটি চরিত্র। বলার অপেক্ষা নেই কঠিন ম্যাচ হবে।’

জার্গেনসন এর আগে বাংলাদেশের কোচ হিসেবে কাজ করছেন। পুরনো শিষ্যদের শুরুর দুই ম্যাচ দেখেননি। তবে আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে রাখলেন, ‘সব কটি দলকেই সাপোর্ট করছি। আমি বাংলাদেশের ম্যাচগুলো খুব একটা দেখিনি। এজন্য কমেন্ট করতে পারছি না। বিশ্বকাপে প্রতিটি ম্যাচই ভিন্ন। এভাবেই আমরা মূল্যায়ন করি। তিনটি ম্যাচ খেলেছি মানে একটি একটি করে ম্যাচে এগিয়েছি। আশা করছি বাংলাদেশও ভালো করবে। তারা ভালো করুক।’

 

বাংলা গেজেট/এমএএইচ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর