[email protected] শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

এই কোচেই বদলে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভেতর

খেলাধুলা ডেস্ক

প্রকাশিত:
১৭ সেপ্টেম্বার ২০২৩, ০৪:০২

ফাইল ছবি

ক্রিকেটের মানুষ তিনি, তবে ভাবেন সারাদেশের তরুণদের নিয়েই। চান খেলাধুলা হোক ক্যারিয়ারের এক নির্ধারিত অংশ। অন্য পেশাকে যেমন মানুষ মূল ক্যারিয়ার হিসেবে নেয়, ঠিক তেমনি তিনিও চান খেলাধুলাও হোক কারও কারও মূল ক্যারিয়ার। মানুষটি সুপরিচিত। কোচ সালাহউদ্দিন। আজকের সাকিব-তামিম-মুশফিকদের গুরু তিনি, খুব আপনজন। খবর জাগোনিউজের

‘ধন্যবাদ স্যার’-৮ জুন ২০১৯ সালে ক্ষুদে বার্তাটি এসেছিল দেশের অন্যতম সফল ক্রিকেট কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের মুঠোফোনে। কেউ মুঠোফোনে ধন্যবাদ দিতেই পরেন- এতে আর এমন বিশেষ কি আছে?

তবে বিশেষত্ব একটি আছে বটে! ক্ষুদে বার্তাটি যে পাঠিয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টারবয় খ্যাত, বর্তমানে টাইগারদের তিন ফরম্যাটেরই অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে ইংলেন্ডের বিরুদ্ধে ১১৯ বলে ১২১ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলার পর নিজের ক্রিকেট শিক্ষকের প্রতি কৃতজ্ঞতা থেকেই ক্ষুদে বার্তাটি পাঠিয়েছিলেন সাকিব।

দেশসেরা এই ক্রিকেট কোচের কোচিং ক্যারিয়ার শুরু হয় দেশের ক্রীড়াবিদ তৈরির আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত বিকেএসপি (বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) থেকে। শৈশবে গাজীপুরে বেড়ে ওঠা মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ১৯৮৬ সালে ক্রিকেটার হওয়ার তীব্র স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন বিকেএসপিতে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন মাত্র ২৩ বছর বয়সেই বিকেএসপিতে পার্ট টাইম কোচ হিসেবে যুক্ত হলেন। এরপর ১৯৯৯ সালে চাকরি স্থায়ী হয় তার। বিকেএসপিতে কোচ হিসেবে থাকাকালীন সময়েই সালাউদ্দিনের জহুরি চোখ খুঁজে নেয় তামিম, সাকিব, মুশফিকদের মত বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেটের মহতারকাদের।

তখনও ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন কিংবা নেশা কোনটিই কমেনি তার। ১৯৯৯ সালে প্রিমিয়ার লিগে আশানুরূপ ফলাফল না করতে পেরে এবং ইনজুরি জটিলতা থাকায় বিকেএসপির আরেক বর্ষিয়ান কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিমের পরামর্শে মনস্থির করলেন কোচিংকেই পেশা হিসেবে বেছে নেবেন।

ভারতের পাতিলায়া ক্রিকেট একাডেমি থেকে রেকর্ড সংখ্যক নাম্বার পেয়ে সম্পন্ন করেন ক্রিকেটের লেভেল ‘এ’ কোচিং ট্রেনিং। পেশাদার কোচিং-এ পদার্পণ করা হয় ২০০২ সালে প্রিমিয়ার লিগের দল ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে। দায়িত্ব নিয়ে প্রথম দুই আসরেই চ্যাম্পিয়ন করেন দলকে।

ওই সময়টাই দেশের ক্রিকেটপাড়ায় হইচই পড়ে যায় এ ক্রিকেট কোচকে নিয়ে। যা চোখ এড়ায়নি বিসিবিরও। ঘরোয়া লিগের এমন সাফল্যের ফলস্বরূপ ২০০৫ সালে বিসিবি থেকে প্রস্তাব আসে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে যুক্ত হওয়ার। তরুণ বয়সেই লুফে নেন সেই প্রস্তাব!

বিকেএসপির চাকরি ছেড়ে ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ডেব হোয়াটমোর এবং জেমি সিডন্সের সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে। এক বছর কাজ করেন ফিল্ডিং কোচ হিসেবেও।

বিসিবির সঙ্গে চুক্তি শেষ হলে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। প্রবাসে পাড়ি জমালেও ক্রিকেট কোচিং পেশা তার পিছু ছাড়েনি। সেখানেও এক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট কোচ হিসেবে যুক্ত হন। মালয়েশিয়ায়ও সুনাম ও খ্যাতির সঙ্গে কাজ করেন ৫ বছর।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ছাড়তে না চাইলেও দেশের ক্রিকেটকে আবারও সময় দেয়ার সুপ্ত ইচ্ছে থেকে বলতে গেলে এক প্রকার জোর করেই বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি। মালয়েশিয়া থেকে এসে দায়িত্ব নিলেন প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সে।

শিরোপা জয় যেন এই কোচের সবচেয়ে বড় নেশা! ২০১৬-১৭ মৌসুমেই দলকে এনে দেন প্রথম শিরোপা জয়ের স্বাদ। গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স একাডেমির কোচও ছিলেন তিনি।

মাঝে কিছুদিন সহকারী কোচ ছিলেন সিঙ্গাপুর জাতীয় ক্রিকেট দলের। তবে কোচ হিসেবে সবচেয়ে বেশি খ্যাতি অর্জন করেছেন দেশের ঘরোয়া আসরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় মঞ্চ বিপিএলের মাধ্যমে।

অন্য দলগুলো যেখানে বিদেশী কোচদের পিছনে লাখ লাখ ডলার খরচ করেও আশানুরূপ ফল পায়নি, সেখানে ২০১৫ বিপিএলে নবাগত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ভরসা রাখেন স্বদেশি কোচ মোঃ সালাউদ্দিনের ওপর।

সালাউদ্দিনও আস্থার প্রতিদান দেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে বিপিএলে তাদের অভিষেকেই শিরোপা উপহার দেন তিনি। এখন পর্যন্ত দলকে চারবার (২০১৫, ২০১৯, ২০২২ ও ২০২৩) চ্যাম্পিয়ন করে বিপিএল ইতিহাসের সফলতম কোচদের মধ্যে তিনিই শীর্ষে রয়েছেন!

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার ভাষায়- ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে সালাউদ্দিনের মতো কোচ কখনও জন্মায়নি।’

ক্রিকেট অঙ্গনে কথিত আছে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের তিন মহাতারকা সাকিব,তামিম ও মুশফিকের উত্থানের পেছনে সবচেয়ে বড় কারিগর হলেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তবে এমন এক প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন বলেন, ‘কোনো নির্দিষ্ট কোচ বা কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য নয় বরং পরিশ্রম এবং নিজ মেধায়ই আজকের এই অবস্থানে এসেছে তারা।’

তবে তিনি অস্বীকার করলেও সাকিব তামিম কিংবা মুশফিকসহ দেশের সব শ্রেণির ক্রিকেটার আজও কোন টেকনিক্যাল সমস্যায় পড়লে ধারস্থ হন মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের কাছে। তিনিও সকবাইকে দেখেন সমান চোখেই।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে দেশি কোচদের অবহেলার চোখে দেখা যেন একটি রীতিতেই পরিণত হয়েছে। ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে তাকে জাতীয় দলের সঙ্গে অন্তর্ভূক্ত করা হবে কি না, তা নিয়েও আলোচনা তৈরি হয়। কিন্তু সালাউদ্দিন নিজেই অনাগ্রহ প্রকাশ করেন।

আবারো জাতীয় দলের সাথে কাজ করার ইচ্ছা আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখুন, এ মুহূর্তে আমি দেশেই ক্রিকেট কোচিং করাচ্ছি। এখান থেকে যদি পাঁচটা ছেলেও উপকৃত হয়, আল্টিমেটলি দেশের ক্রিকেটেই সেখান থেকে উপকৃত হবে। তবে হ্যাঁ, স্বপ্ন সবারই আছে আমারও আছে। ভবিষ্যতে যদি আবার সুযোগ আসে আমি অবশ্যই ভেবে দেখব।’

বর্তমানে দেশের অন্যতম সেরা এই কোচ কাজ করছেন, ‘মাস্কো সাকিব ক্রিকেট একাডেমির’ প্রধান কোচ হিসেবে। 

 

 

বাংলা গেজেট/এমএএইচ

 

বাংলা গেজেট/এমএএইচ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর