[email protected] বুধবার, ১৫ই জানুয়ারী ২০২৫, ২রা মাঘ ১৪৩১

বিবর্ণ বিশ্বকাপ সফর, ভবিষ্যতে আশার গান

খেলাধুলা ডেস্ক

প্রকাশিত:
১১ নভেম্বার ২০২৩, ২১:১০

ফাইল ছবি

দুর্দান্ত কয়েকটি শট। খানিকটা আগ্রাসন। টাইমিং মিলিয়ে কখনো মেলে বাউন্ডারি। কখনো ডাউন দ্য উইকেটে এসে হাওয়ায় বল ভাসানোর চেষ্টা। ভালো শুরুতে ফুটে উঠে আত্মনিবেদন, সামর্থ্য। ড্রেসিংরুমে বয়ে যায় শীতল হাওয়া। কিন্তু এরপরই থমকে যাওয়া।

প্রতিশ্রুতিশীল ইনিংস থেমে যায় প্রচন্ড বাজে শটে কিংবা পথ ভুলে। প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে আসা তানজিদ হাসান তামিমের সফর ছিল এমনই। কখনো করতালি পেয়েছেন। কখনো বিরক্তি ধরিয়েছেন। কিন্তু ছোট হলেও ভালো কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন ২২ বছর ৩৪৫ দিন বয়সী তানজিদ। ভারতের বিপক্ষে তার ক্যারিয়ার সেরা ৫১ রানের ইনিংসটি ছিল মুগ্ধতা ছড়ানো। ঠিক একই মাঠে শনিবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করা ৩৬ রান দলের দাবি মিটিয়েছে প্রবলভাবে। কিন্তু লম্বা ইনিংস খেলার সুযোগ হেলায় ভাসিয়েছেন।

তানজিদ বিশ্বকাপে আসার আগে নিশ্চয়তা পেয়েছিলেন সবকটি ম্যাচ খেলার। তার থেকে দলের তেমন চাহিদাও ছিল না। দুয়েকটি ম্যাচে নিজের ঝলক দেখাবেন তাহলেই হবে। কিন্তু বড় মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরার যে সুযোগ পেয়েছিলেন তা হাতছাড়া করেছেন।

বিশ্বকাপে কোনো তৃতীয় ওপেনার নিয়ে না আসার কারণ ছিল একটিই, যাদের ওপর আস্থা রাখা হচ্ছিল তাদেরকেই লাগাতার সুযোগ দেবে টিম ম্যানেজমেন্ট। তামিম ইকবাল বিশ্বকাপে না থাকায় তানজিদের ওপরই ছিল সব আলো। কিন্তু ফ্রি লাইসেন্সে এবং সব ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েও আড়ালে থেকে যান বাঁহাতি ওপেনার।

৯ ম্যাচে রান করেছেন কেবল ১৪৫। যেখানে তার ব্যাটিং গড় ১৬.১১। স্ট্রাইক রেট ৯৫.৩৯। এক ফিফটির সঙ্গে নামের পাশে রয়েছে এক ডাক। ২২ চার ও ৩ ছক্কায় ভালো কিছুর আশা দেখিয়েছিলেন। কিন্তু নামের পাশে যে রান তা একদমই বিবর্ণ।


বিশ্বকাপের আগে চার ইনিংস খেলেছিলেন তানজিদ। যুব বিশ্বকাপজয়ী এই ব্যাটসম্যানকে ঘিরে অনেক প্রত্যাশা থাকলেও নিজের অভিষেক ইনিংসেই রানের খাতা খুলতে পারেননি। এরপর জায়গা হারানোর পর তাকে এশিয়া কাপের শেষ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে নামানো হয়। ১৩ রানের সেই ইনিংসেও ডানা মেলতে পারেননি তানজিদ। আস্থা রাখা হয় ঘরের মাঠে নিউ জিল্যান্ড সিরিজে। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে তার শেষ দুই ইনিংসে রান ছিল কেবল ১৬ ও ৫।

ওপেনিং নিয়ে দোলাচাল ছিল শুরু থেকে। সাকিব ও তামিমের দ্বন্দে তামিমের বিশ্বকাপ দলে সুযোগ না পাওয়ায় তানজিদ চাপে ছিল বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু নিজের প্রথম বিশ্বকাপের ম্যাচ থেকেই তানজিদ পথ ভোলা নাবিক। কিভাবে চাপ সামলে রান করবেন, কিভাবে মেলে ধরবেন নিজেকে সবটাই ছিল তালগোল পাকানো। রানের খোঁজে থাকা এই ক্রিকেটার আলোর দেখা যান পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে। বুমরাহ, শার্দুল, সিরাজদের বিপক্ষে ৪৩ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় সাজানো ৫১ রানের ইনিংসটিতে তানজিদ বুঝিয়ে দেন বড় কিছুর প্রত্যাশাতেই তার ওপর আস্থা রাখা হয়েছিল।

নিজের উইকেট উপহার দিয়ে এসে তানজিদ পরে আবার আড়াল হয়ে যান। এরপর আর পাওয়া যায়নি। আজও ভালো শুরুর পর অ্যাবোটের শর্ট বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছেন। সেখানেই থেমে যায় তার বিশ্বকাপ সফর। পরিসংখ্যানে আশার গান শোনাবে না। যেভাবে তানজিদ নিজেকে মেলে ধরেছেন সেটাও পর্যাপ্ত না। কিন্তু অতীত ইতিহাস বলছে, তানজিদ খারাপ করেননি একদমই।

ওপেনারদের প্রথম বিশ্বকাপের দৌড়ে আছেন তানজিদও। দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল ২০০৭ সালে নিজের প্রথম বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচে ১৭২ রান করেছিলেন। গড় রান ছিল ১৯.১১। ইমরুল কায়েস ২০১১ বিশ্বকাপে ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে ৬ ম্যাচে করেছিলেন ১৮৮ রান। সৌম্য সরকার ২০১৯ বিশ্বকাপে ওপেনিং পজিশনে নেমে ৭ ম্যাচে করেছিলেন ১৬৩ রান। তানজিদের ১৪৫ রান সেখানে খুব বড় কিছু না হলেও ভবিষ্যতের জন্য প্রেরণার হতে পারে।

বিবর্ণ বিশ্বকাপ শেষে নতুন মিশনে নামার আগে ভুলগুলো শুধরে নিতে পারলে এবং বড় ক্ষুধায় মগ্ন হতে পারলে তানজিদ হতে পারেন লম্বা রেসের ঘোড়া।

 

বাংলা গেজেট/এমএএইচ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর