প্রকাশিত:
৭ অক্টোবার ২০২৩, ১২:০৬
সিলেবাস জানা থাকলে আর বারবার অনুশীলন করলে পরীক্ষায় সহজে পাস করা যায়, এই সহজ সত্যিটা জানা আছে কমবেশি সবারই। তবুও পরীক্ষায় কেউ ফেল, কেউ পাস। কারণ পরীক্ষার হলে মাথা ঠান্ডা রেখে উত্তর মেলানোটা কারও কাছে সহজ, কারও জন্য কঠিন। মাস তিনেকের মধ্যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ৭টা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। আফগানদের ভাঁড়ারে কী আছে, অজানা নেই কিছু। প্রস্তুতিও নিয়েছে বাংলাদেশ, তবুও বিশ্বকাপ বলে কথা! তাই তো সোজাসাপটা জয়ের কথা বলতে লাগছে ভয়, পাছে ফলটা যদি অন্যরকম হয়!
ওয়ানডের অঙ্ক মেলালে হিসাবটা এই বছর ২-২। ঘরের মাঠে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ, এশিয়া কাপে আবার ঠিকই তারা হারিয়েছে আফগানিস্তানকে। সবশেষ ৪ ওয়ানডেতে তাই ২-২ সমতা। যে সংস্করণটা আফগানদের গর্বের জায়গা, যে টি-টোয়েন্টি সাফল্য তাদের বৈশ্বিক ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে করে তুলেছে ‘হট কেক’; সেই টি-টোয়েন্টিতেও বাংলাদেশ হারিয়েছে তাদের, ২-০ তে। সাদা বলের ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ে আফগানদের চেয়ে খানিকটা হলেও এগিয়ে বাংলাদেশ, যার প্রমাণ এশিয়া কাপে। সুপার ফোরে খেলা হয়নি আফগানদের, খেলেছে বাংলাদেশ আর হারিয়েছে ভারতকেও। কিন্তু এত কিছুর পর আজ হিমাচলের ধর্মশালায় বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ফেভারিট বলতে পারছে না মূলত দুটো কারণে। লেগস্পিনে চিরায়ত দুর্বলতা আর ইনিংসের গোড়াপত্তনে অনিশ্চয়তা।
শ্রীলঙ্কাকে যদি ‘লিটমাস পেপার’ ধরা হয়, তাহলে অ্যাসিড টেস্টে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলেছে আফগানিস্তান। চোটজর্জর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ গৌহাটির প্রস্তুতি ম্যাচে জিতেছে ২৬৩ রান তাড়া করে ৭ উইকেটে, ৮ ওভার হাতে রেখে। অন্যদিকে আফগানরা ৪২ ওভারের ম্যাচে ২৬১ রান তাড়া করে জিতেছে ৩৮.১ ওভারে। ৯২ বলে ১১৯ রান করেছেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। পাটা উইকেটে গুরবাজকে থামানো কঠিন। চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বোলাররা সেটা টের পেয়েছেন। পাল্লেকেলেতে এশিয়া কাপের আগে পাকিস্তানের হারিস-নাসিম-শাহিন ত্রয়ীকে যেভাবে পিটিয়ে ১৫১ রানের ইনিংস খেলেছেন, তাতে করে ধর্মশালায় তাকে নিয়ে ভয়টা কাটছেই না।
পরিসংখ্যান বলছে, হিমালয়ের কোলে রান উৎসব হয়। উইন্ডিজের বিপক্ষে ভারত এখানে ৩৩০ রান তুলেছিল আগে ব্যাট করে, জবাবে ক্যারিবিয়ানরাও ২৭১ করেছিল। উল্টোটাও হয়েছে। ভারত এখানে আগে ব্যাট করে গুটিয়ে গেছে মাত্র ১১২ রানে, শ্রীলঙ্কা সেটা তাড়া করেছে ২১ ওভারে। এই মাঠে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ ২০২২ সালে, ভারত-শ্রীলঙ্কার যে টি-টোয়েন্টিকে রান উৎসবের না বলার উপায় নেই, কারণ শ্রীলঙ্কার করা ১৪৬ ভারত টপকেছে ৬ উইকেট ও ১৯ বল হাতে রেখে। সবশেষ আইপিএলে এখানে হয়েছে দুটো ম্যাচ। চার ইনিংসের একটিতে দুইশোর ওপরে ও বাকি তিন ইনিংসে দুইশো ছুঁই ছুঁই রান হয়েছে। আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদি অবশ্য ধর্মশালার মাঠকে নিজেদের জন্য সহায়ক বলেই মনে করছেন, ‘এই মাঠটাকে ভারতের অন্য মাঠগুলোর চেয়ে একটু আলাদাই মনে হচ্ছে। আমরা যতটা দেখেছি, যতটা অভিজ্ঞতা আমাদের আছে, সেসব থেকে মনে হয় মাঠটা একটু বাউন্সি উইকেটের হবে আর সিমারদের জন্য সহায়ক হবে। আমরা এটা জানি, এভাবেই আমাদের মানিয়ে নিতে হবে আর চেষ্টা করতে হবে সেরা খেলাটা খেলতে।’
একটা সময়ে দেরাদুনের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়াম ছিল আফগানদের হোম ভেন্যু, সেখানে বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ডসহ বেশ কিছু দলের বিপক্ষেই খেলেছে আফগানিস্তান। ধর্মশালা থেকে মাত্র ৫০০ কিলোমিটার দূরে উত্তরাখন্ডের শৈলশহরে খেলার অভিজ্ঞতাটা কাজে দেবে বলেই মনে করেন আফগান অধিনায়ক, ‘আমাদের বেশ কিছু ক্রিকেটার আইপিএলে খেলেছে, অনেকে খেলেনি। আমরা এই কন্ডিশনে আগে খেলেছি। কারণ ভারত ছিল আমাদের ঘরের মাঠ। আমরা জানি এখানকার কন্ডিশন কেমন আর সেটাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করব গোটা বিশ্বকাপে।’
বাংলাদেশের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে গতকালের সংবাদ সম্মেলনে খেলার বাইরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনেক বিতর্কিত ইস্যু নিয়েই কথা বলতে হয়েছে বেশি। তামিম ইকবাল না থাকায় ফজল হক ফারুকিকে সামাল দেওয়া স্বস্তির কি না, বাংলাদেশ বিশ^কাপ জয়ের স্বপ্ন দেখে কি না, সাকিব আল হাসান আসার আগে টিভিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কী বলেছেন, এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়াসহ নানান কিছু। সানগ্লাস চোখে সংবাদ সম্মেলনে আসা হাথুরুসিংহে স্পষ্টই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন এসব প্রশ্নে। উইকেট দেখে হাথুরুসিংহের প্রতিক্রিয়া, ‘ওয়ানডে ম্যাচের জন্য বেশ ভালো উইকেট। বেশ শক্ত, সুন্দর ঘাসের পরত আছে। চমৎকার স্পোর্টিং উইকেট। আশা করছি রান হবে। আমরা আমাদের দল সকালে ঠিক করব। কারণ কিউরেটর বলেছে, উইকেটে সে আরেকটু কাজ করবে।’
সকালের ম্যাচে শুরুতে উইকেটে একটু আর্দ্রতা থাকে, যা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উবে যায়। বাংলাদেশ লাহোরের ব্যাটিং স্বর্গে টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে গড়েছিল বড় সংগ্রহ। এখানে হয়তো উল্টোটাই করতে হবে। তাসকিন আহমেদ, শরীফুল ইসলামদের হাতে তুলে দিতে হবে নতুন বল, কাজে লাগাতে হবে সকালের তাজা উইকেটের সুযোগটা। এই ম্যাচেও টসভাগ্য যেন সাকিবের সঙ্গে থাকে, প্রস্তুতির সঙ্গে করতে হবে এই প্রার্থনাটাও। কারণ মুদ্রাভাগ্যে বদলে যেতে পারে ম্যাচের ভাগ্যও। সূত্র: দেশ রূপান্তর
বাংলা গেজেট/বিএম
মন্তব্য করুন: