প্রকাশিত:
২৬ নভেম্বার ২০২৩, ১১:১৭
দেড় মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলের বোমা হামলায় গাজার মানবিক পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল পর্যায়ে পৌঁছেছে। বোমা ও গোলাবর্ষণে শত শত ভবন ধসে পড়ে এক অবর্ণনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট।
লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ডায়রিয়াসহ নানা সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে উপত্যকাটিতে। এ পরিস্থিতিতে চার দিনের যুদ্ধবিরতিকে যথেষ্ট মনে করছেন না অনেকেই। দাবি উঠছে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলছেন, যুদ্ধবিরতির সময়সীমা আরও বাড়ানোর প্রকৃত সুযোগ রয়েছে।
গতকাল শনিবার ফিলিস্তিনের মেডিকেল রিলিফ সোসাইটির পরিচালক আইদ ইয়াঘি বলেন, উপত্যকায় থাকা মানুষের জন্য চার দিনের যুদ্ধবিরতি যথেষ্ট নয়। গাজার খান ইউনিস থেকে আলজাজিরাকে তিনি বলেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল।
তিনি দক্ষিণ গাজার ১৬ লাখ মানুষের কথা বলেছেন। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। বাস্তুচ্যুত ১০ শতাংশ ফিলিস্তিনির জন্যও এগুলো পর্যাপ্ত নয়। এগুলোতে কোনো বিশুদ্ধ পানি নেই, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও একেবারে বাজে। তিনি জানান, তাদের ত্রাণ সংস্থার একটি দল যুদ্ধের কেন্দ্রস্থল উত্তর গাজায় রয়েছে। ওই দলের সঙ্গে তারা এখন আর যোগাযোগ করতে পারছেন না। এ নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
এ অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, যুদ্ধবিরতির সময়সীমা বাড়ার প্রকৃত সুযোগ রয়েছে। তবে তিনি ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, হামাসকে নিধন করতে ইসরায়েলের অভিযান ‘বৈধ’। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে তিনি বেসামরিক লোকজনের মৃত্যু কমানোর পরামর্শও দিয়েছেন। সূত্র জানায়, ইসরায়েল ও হামাস উভয়পক্ষই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চাইছে। তবে ইসরায়েল বলছে, প্রতি ১০ দিন পরপর তারা বন্দিমুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত আছে।
এএফপি জানায়, গাজায় হামলার সমালোচনা করায় ইসরায়েলে নিযুক্ত স্পেন ও বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছে। শুক্রবার ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের তলব করে এসব মন্তব্যের ব্যাখা দাবি করে। এ দিন গাজা ও মিসরের মধ্যকার রাফা সীমান্ত ক্রসিং পরিদর্শন করেন বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্দার ডি ক্রো। সেখানে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গাজায় ইসরায়েলের অভিযান আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে হওয়া উচিত। গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানোকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলেও বর্ণনা করেন তিনি।
এ সময় পাশে থাকা স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ তাঁর কথার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে বেসামরিক মানুষের বেপরোয়া হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। দুই নেতাই গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানান। ইসরায়েল তাদের এ দাবির প্রতি অবজ্ঞা দেখিয়ে বলেছে, তারা ‘সন্ত্রাসবাদ’কে সমর্থন করছেন। নেতানিয়াহু ইউরোপীয় নেতাদের কঠোর নিন্দা জানান।
যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দিনে রাফা ক্রসিং হয়ে গতকাল গাজায় প্রবেশ করেছে ত্রাণবাহী গাড়ির বহর। সেই সঙ্গে ডিজেলবাহী ট্যাঙ্কার ও এলপি গ্যাস নিয়ে চারটি করে গাড়ি প্রবেশ করেছে।
বিবিসির পল অ্যাডামসও মনে করেন, যুদ্ধবিরতির সময়সীমা বাড়তে পারে। তবে তা নির্ভর করবে কত সংখ্যক জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস তার ওপর। ইসরায়েলের বিশেষজ্ঞ বলছেন, বিরতির পর আবার যুদ্ধ শুরু হলে তা আরও এক সপ্তাহ বা ১০ দিন দীর্ঘ হতে পারে।
কাতারের মধ্যস্থতায় শুক্রবার থেকে গাজায় চার দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। চুক্তির শর্ত হিসেবে শুক্রবার ২৪ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। ইসরায়েল তাদের কারাগারে থাকা ৩৯ ফিলিস্তিনিকে মুক্ত করেছে। গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় ১৪ হাজার ৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন।
বাংলা গেজেট/এফএস
মন্তব্য করুন: