প্রকাশিত:
৩১ আগষ্ট ২০২৩, ০৩:৪৪
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, যারা মনে করছে বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছে। বিএনপির ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন কোনদিন পূরণ হবে না।
বুধবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে বগুড়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মানিকচকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ উদ্দিন বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সভার খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের একটি মানচিত্র দিয়েছেন, একটি পতাকা দিয়েছেন, একটি স্বাধীন দেশ দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ছাড়া বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। একাত্তরের সাথে পরাজিত শক্তি,যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি, সেই অপশক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। আর পেছনে ছিল জিয়াউর রহমান, আরো পিছনে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এই ইতিহাস আমরা সকলেই জানি।
তত্ত্ববধায়ক সরকার প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, নির্বাচন আসলেই বিএনপি-জামায়াত সহ সরকারবিরোধী গোষ্ঠী নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারা বলছে, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।' আমরা স্পষ্ট জানিয়েছে, দেশের সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার কোন সুযোগ নেই। দেশের সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছে, দেশে আর তত্ত্ববধায়ক সরকারের দরকার নেই।
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, জিয়াউর রহমান ছাত্রসমাজের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। বাংলাদেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্র প্রথম করেছিল জিয়াউর রহমান। বিনা বিচারে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হত্যা করেছে। ৫ বছর কারফিউ দিয়ে বাংলাদেশকে জেল খানায় পরিণত করেছিল এবং হ্যা/ না এর তামাশার ভোট দিয়েছিল জিয়াউর রহমান। সেই জিয়াউর রহমানের দল বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের বড় বড় কথা মানায় না।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বিএনপির আমলে মানুষকে হত্যা, নির্যাতন করেছে, লুটপাট, তারেক জিয়ার হাওয়া ভবন, খোয়াব ভবন ইত্যাদি কারণে জনগণ বিএনপিকে প্রত্যাখান করেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ৩০টি আসন লাভ করে। সেই লজ্জা ঢাকার জন্য ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে তারা মানুষ পুড়িয়েছে, বাস পুড়িয়েছে, গাছ উপড়ে ফেলেছে। ২০১৪ নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি নিজেদের কবর নিজেই খুড়েছে। বিএনপি বলছে, ‘তারা আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাবে।’ আন্দোলনের ডাক তো খালেদা জিয়া দিয়েছিলেন, সেই আন্দোলন সফল হয়নি। বিএনপির এই আন্দোলন দিয়ে সরকারের পতন ঘটানো যাবে না।
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ড. ইউনুস গ্রামীন ব্যাংকের মাধ্যমে নারীদের ঋণ দেয়। সেই ঋণের কারণে কতজন মানুষ গলায় দড়ি দিয়েছে, সেটা পত্রিকা পড়লেই জানতে পারবেন। ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় যখন গ্রামীন ব্যাংকের কর্মীরা নারীদের গোয়াল থেকে গরু গিয়েছিল, তখন পশ্চিমারা বলেনি কোন অন্যায় হয়েছে। ড.ইউনূসের বিচার স্থগিত চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ১০০ জন নোবেল বিজয়ী সহ আরো বিশিষ্ট ব্যক্তিদের খোলা চিঠি দিয়েছে। ড. ইউনূসের বিচার স্থগিত চাওয়া, মামার বাড়ির আবদার।
রাসিক মেয়র বলেন, নারীদের কল্যানে প্রধানমন্ত্রী শেখ বিভিন্ন ভাতা চালু করেছেন। মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিধাব ভাতা, বয়স্ক ভাতা ইত্যাদি। শেখ হাসিনার কারণে নারীদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। ড. ইউনুসের কারণে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশ কখনো চলেনি, চলবেও না। রাসিক মেয়র হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করতে আসলে মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দীনের মতো পালিয়ে যাওয়ার পথ পাবেন না ।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আওয়ামী লীগের উপরে চাপ, শেখ হাসিনার উপর চাপ দিয়ে লাভ নেই। কত চাপ শেখ হাসিনা গিলে ফেলতে পারেন, সেটি আমরা দেখেছি। চাপের মধ্য দিয়েই দেশ এগিয়ে চলেছে। শেখ হাসিনা জানেন কীভাবে চেক এন্ড ব্যালেন্স করতে হয়।
রাসিক মেয়র বলেন, আমরা গর্বিত জাতি, আমাদের হৃদয়ে জাতির পিতার আর্দশে আছে, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা আছেন। আমরা কোন অন্যায় করিনি। আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নাই। বিএনপির আন্দোলনের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।
সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু এমপি। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনে আমরা তিনটি গুন দেখতে পাই। সেগুলো হচ্ছে মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সাহস ও সততা। বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষকে ভালোবাসবো, আমরা সৎ থাকবো, সাহস করে সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করবো, তাহলে বঙ্গবন্ধুর প্রতি অনেক বেশি শ্রদ্ধা জানানো হবে।'
বগুড়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আবু সুফিয়ান সফিকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান মজনু, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. মোঃ মকবুল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন দুলু, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও বগুড়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাছুদুর রহমান মিলন। সভা সঞ্চালনা করেন বগুড়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাফুজুল ইসলাম রাজ। সভায় আরো বক্তব্য দেন বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফি নেওয়াজ খান, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হাসান ববি প্রমুখ। সভায় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা গেজেট/এমএএইচ
মন্তব্য করুন: