মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা ও সাবেক এমপি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় পাবনায় ছাত্রলীগের ৭জন নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে জেলা ছাত্রলীগ। পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান সবুজ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান সবুজ ও সাধারণ রাব্বিউল ইসলাম সিমান্ত স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্তভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য সুপারিশ করা হয়।
সাময়িক বহিষ্কৃতরা হলেন- পাবনা সদরের ভাঁড়ারা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম শেখ রকি, গয়েশপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমন খান, চাটমোহরের ফৈলজানা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক মামুন হোসেন, আতাইকুলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক আশিক খান, আতাইকুলা থানার ভূলবাড়িয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের ৮ নং ওয়ার্ড সভাপতি সাদ্দাম হোসেন,চাটমোহর উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মী রাকিবুল হাসান, বেড়া উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মী আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্স।
এদিকে দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর জন্য শোক প্রকাশ করায় আপত্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হওয়ায় গতকাল বুধবার (১৬ আগষ্ট) রাতে পাবনার ভাঁড়ারা ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক শেখ রকি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন, প্রিয় ভাঁড়ারা ইউনিয়নবাসি। আমি মুসলমান হয়ে একজন মুসলমান মারা যাওয়াতে যদি আমি ইন্না-লিল্লাহ বলতে না পারি। ওই সংগঠন আমার দরকার নেই । আমি নিজ ইচ্ছায় আজ থেকে ভাঁড়ারা ইউনিয়ন এর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করলাম। ভালো থাকবেন সবাই । আল্লাহ হাফেজ।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় ভাঁড়ারা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদ্য বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসাস শেখ রকির সঙ্গে। তিনি বলেন, আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পরে শোক জানিয়ে তাৎক্ষণিক ফেসবুকে পোস্ট দেই। শুধু তাই নয় আমরা যে চারজন একসঙ্গে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করি ওরাও সাঈদী সাহেবের জন্য শোক জানিয়ে পোস্ট দেয়। এসব পোস্ট নিয়ে আপত্তিকর দেখা দিলে ওদের তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়।
এরপর নেতাকর্মী বলতে লাগল আমাকেউ নাকি বহিষ্কার করা হবে। চিন্তা করলাম বহিষ্কার করলে কেমন হয় এর আগে নিজে থেকে পদত্যাগ করি। এজন্য আমি ভেবে চিন্তা করেই বহিষ্কারের ২১ ঘন্টা আগে পদত্যাগ করেছি। অন্যকোন দলের সঙ্গে যুক্ত হবেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন এটা পরবর্তী কোন সিদ্ধান্তে জানানো হবে। আপাতত অন্য কোন চিন্তা নেই।
পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান সবুজ বলেন, দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী একজন আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন। তিনি একজন সত্যিকারের যুদ্ধাপরাধী ছিলেন। তাকে নিয়ে কিছু ছাত্রলীগের নামধারী নেতাকর্মী শোক জানিয়ে পোস্ট দেয়। এটা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে। বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিতে এসেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া ছাত্রলীগ এমন নীতি আদর্শহীন কাজ কোনভাবেই করতে পারে না।
মূলত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পরামর্শেই তাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সময়ে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদকে অবগত করা হয়েছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত এলে বহিষ্কারের চিঠি পাঠানো হবে। এ জেলায় আরও কোন নেতাকর্মী যদি পোস্ট দিয়ে থাকে তাহলে আমাদের নলেজে আসলে এমন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, রোববার (১৩ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বুকে ব্যথাজনিত সমস্যার কারণে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে প্রথমে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রাত ১০টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয় সাঈদীকে। সোমবার (১৪ আগস্ট) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
বাংলা গেজেট/এফএস
মন্তব্য করুন: