প্রকাশিত:
১৬ আগষ্ট ২০২৩, ০২:৩৭
বগুড়ার শেরপুর থানার সাবেক এসআই মিঠুন সরকারের বিরুদ্ধে ‘৯৯৯’ নম্বরে কল পেয়ে এক তরুণীকে (২৩) সহযোগিতা করতে গিয়ে নিজের ধর্মীয় পরিচয় গোপন করে তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে। ওই ছাত্রী এ ব্যাপারে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় পুলিশ সুপারের আদেশে তাকে প্রথমে আদমদীঘি থানায় বদলি করা হয়। এরপর সাময়িক বরখাস্তের পর তাকে বগুড়া পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযুক্ত এসআই মিঠুন সরকার ওই তরুণীর সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার অভিযোগটি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।
তদন্তকারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুর রশিদ ওই এসআইকে বরখাস্তের কথা নিশ্চিত করলেও বিষয়টি স্পর্শকাতর বলে অন্য তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ওই তরুণী বগুড়ার শেরপুরের মির্জাপুরের আড়ংশাইল গ্রামের বাসিন্দা। তিনি জাতীয় একটি দৈনিকের পাঠক ফোরামের সদস্য থাকাকালে অপর সদস্যের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে বিয়েও হয়।
বনিবনা না হওয়ায় তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। প্রায় দুই বছর আগের ওই ঘটনার পর প্রেমিক অন্যত্র বিয়ে করেন। বিয়ের কথা গোপন রেখে তিনি ঢাকায় গিয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে আবারো সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সেখানে তারা একত্রে বসবাস করতে থাকেন।
তিনি তরুণীর কাছে কিছু টাকা হাতিয়ে নেন। এরপরও তিনি তরুণীকে বিয়ে না করায় তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে তরুণী বিয়ের দাবিতে একই এলাকার ওই প্রেমিকের বাড়িতে গিয়ে অনশন করেন। এসব নিয়ে বগুড়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যস্থতায় বৈঠক হলেও সুরাহা হয়নি।
সম্প্রতি ওই তরুণী প্রেমিকের কাছে পাওনা টাকা উদ্ধারে সহযোগিতা চেয়ে ‘ জাতীয় জরুরী সেবা-৯৯৯’ নম্বরে ফোন দেন। তখন শেরপুর থানার এসআই মিঠুন সরকার তার বাড়িতে যান। পুলিশ কর্মকর্তা সহযোগিতার নামে নিজের ধর্মীয় পরিচয় (সনাতন) গোপন রেখে তরুণীর সঙ্গে প্রথমে প্রেম ও পরে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরপর বিয়ের দাবি প্রত্যাখ্যান করায় তরুণী গত ২২ জুলাই বিষয়টি লিখিতভাবে বগুড়ার পুলিশ সুপারকে অবহিত করেন।
পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী এ ব্যাপারে তদন্ত করতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুর রশিদকে দায়িত্ব দেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলায় গত ৮ আগস্ট এসআই মিঠুন সরকারকে আদমদীঘি থানায় বদলি করা হয়। এরপর ৯ আগস্ট তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে বগুড়া পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করেন।
বগুড়ার শেরপুর থানার ওসি বাবু কুমার বিশ্বাস ও আদমদীঘি থানার ওসি রেজাউল করিম রেজা অভিযুক্ত এসআই মিঠুন সরকারের সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করলেও এ ব্যাপারে তারা কোনো কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।
বগুড়া পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র ও শেরপুরের মির্জাপুর এলাকার জনগণ জানান, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ওই তরুণীর সঙ্গে এসআই মিঠুন সরকারের আপস-মীমাংসা হয়ে গেছে। এরপরও বিভাগীয় শাস্তি হিসেবে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
অভিযোগকারী তরুণী বগুড়ার শেরপুরের বাড়িতে না থাকা ও মোবাইল ফোন বন্ধ রাখায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলা গেজেট/এফএস
মন্তব্য করুন: