প্রকাশিত:
২২ নভেম্বার ২০২৩, ২১:০৪
বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা বিরোধী দলগুলোর ডাকা মহাসমাবেশের দিন (২৮শে অক্টোবর) থেকে গত সোমবার (২২ নভেম্বর) পর্যন্ত ২৪ দিনে সারাদেশে অন্তত ১৯৭ টি যানবাহন ও স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। আর রাজশাহী বিভাগে ২৪ টি যানে আগুন দেয়া হয়েছে। তবে জেলায় গত ২৪ দিনে আগুনে পুড়েছে ৬ টি গাড়ি। আগুন দেয়া হয়েছে প্রাইভেট কার, ট্রাক ও বাসে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে ছয়টি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে।আর রাজশাহী বিভাগে ২৪ টি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে । এতে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও আর্থিকভাবে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে কিছু গাড়ি মেরামত করে আবার রাস্তায় নামানো যাবে।
সূত্র বলছে, রাজশাহীতে সর্বপ্রথম গত ২৯ অক্টোবর বেলা ১২ টার দিকে বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের আটঘরিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া পুঠিয়া উপজেলায় দিনের বেলায় ট্রাক ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। চারঘাটে রেললাইনে দুই দফা নাশকতার চেষ্টা হয়েছে। এরপরে সোমবার (৬ নভেম্বর) দুপুর ৩ টার দিকে মোহনপুর উপজেলায় পণ্যবাহী একটি ট্রাকে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার মৌগাছি নন্দনহাট মোড়ে পেট্রোলবোমা মারা হয় ট্রাকটিতে। আর এতেই ট্রাকটি ঝলসে যায়। বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালের প্রথমদিনে বাঘায় একটি প্রাইভেট কারে আগুন দিয়েছিল পিকেটাররা। আগুনে কারটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়।
সপ্তাহখানেক আগে গত মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) দিবাগত রাতে মোহনপুর উপজেলায় পাটবোঝাই একটি ট্রাকে আগুন দেয়া হয়েছে। এতে কিছু পাট পুড়ে গেলেও ট্রাকের কোনো ক্ষতি হয়নি। স্থানীয়রাই আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছেন।
রোববার (১৯ নভেম্বর) রাত ১০টার দিকে পুঠিয়া উপজেলার ধোপাপাড়া গ্রামে একটি স্টাফ বাসে পেট্রোলবোমা মারে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার সময় বাসে চালক ও তার সহযোগী ছাড়া কোনো যাত্রী ছিলেন না। এতে বাসটি ঝলসে যায়। একই দিনে রোববার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গোদাগাড়ী উপজেলার উদপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। বাসটি আগুনে ঝলসে যায়। তবে সেখানেও কেউ হতাহত হয়নি।
সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) ভোর ৪ টার দিকে রাজশাহী নগরীতে পার্কিং করা একটি ট্রাকে আগুন নিয়ে দুর্বৃত্তরা। আগুনে পুড়ে গেছে ট্রাকের সামনের অংশ। এই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। রাজশাহী নগরীর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়াম মার্কেটের সামনে ঘটনাটি ঘটে।
নগরীতে পুড়ে যাওয়া ট্রাকটির মালিক শফিকুজ্জামান শোভন জানান, সোমবার (২০ নভেম্বর) অন্য একটি স্থান থেকে পণ্য নিয়ে এসে ট্রাক ফাঁকা করে সেখানে রেখে দেয়া হয়। মঙ্গলবার ভোরে জানতে পারি, ট্রাকটিতে আগুন দেয়া হয়েছে। ছুটে এসে দেখি, ট্রাকের কেবিনে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহী সদর দফতরের কর্মীরা ট্রাকটির আগুন নেভান। সামনের অংশ পুড়ে গেছে। এতে ইঞ্জিনের বেশ ক্ষতি হয়েছে।
চন্দ্রিমা থানার ওসি মাহবুব আলম জানান, কে বা কারা আগুন দিয়েছে, তা ওই ট্রাকের কেউ ও আশেপাশে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা দেখেননি। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
এদিকে রোববার (১৯ নভেম্বর) গোদাগাড়ী উপজেলায় পেট্রোলবোমায় পোড়া ‘শিমু নূর তাজ’ নামের যাত্রীবাহী বাস মালিকের ভাই সোহেল রানা জানান, বাসটি কেনার বয়স ছয় মাস। এরপর ধার-দেনা করে বাসের নতুন বডি করি। নতুন বডি করার বয়স তিন মাস হবে। বাস নতুনই আছে। এর মধ্যে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেলো। এই বাসটা ঠিক করে সড়কে নামাতে তার ১০ লাখ টাকার বেশি খরচ হবে।
রাজশাহী পরিবহন গ্রুপ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি নুরুজ্জামান মোহন বলেন, গোদাগাড়ীতে একটি বাস আগুনে পুড়ে গেছে। আরেকটি বাস পুড়েছে অন্য একটি কোম্পানীর। গোদাগাড়ীর পোড়া বাসের জন্য আমরা কাগজপত্র চেয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত বাসের কাগজপত্র ফেডারেশনে পাঠাবো। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান তিনি।
বাংলা গেজেট/এমএএইচ
মন্তব্য করুন: