প্রকাশিত:
২৯ অক্টোবার ২০২৩, ১৭:৫৭
বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা হরতাল চলছে। তবে দিনের শুরুতে এখন পর্যন্ত হরতালের তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। অন্যান্য দিনের মতোই রাজশাহীতে চলছে গণপরিবহনসহ সব ধরনের যানবাহন। তবে অন্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম। নগরীর বিভিন্ন এলাকার ঘুরে দল দুটির কোনো নেতাকর্মীকে সড়কে দেখা যায়নি।
নগরীর মালোপাড়ায় তালাবদ্ধ দেখা গেছে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ও। তবে সকাল থেকেই নগরীর ১২টি পয়েন্টে সতর্ক অবস্থানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
বিভাগীয় এই শহরে মানুষ নিজ নিজ প্রয়োজনে রাস্তায় বের হচ্ছেন। দোকানপাটও খুলতে থাকে। এমনকি সড়কগুলোতে আস্তে আস্তে সব ধরনের যানবাহন নামতে শুরু করেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কর্ম-চাঞ্চল্যের পাশাপাশি বাড়তে শুরু করেছে ব্যক্তিগত ও গণপরিবহন। চলছে রিকশা-অটোরিকশা। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত রাজশাহীর কোথাও বিএনপির নেতাকর্মীদের পিকেটিং করার খবর পাওয়া যায়নি। তবে যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে বাসে। ফলে রাজশাহী-নাটোর, রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী-নওগাঁসহ আশপাশের জেলাগুলোর সঙ্গে বাস চলাচল কমে গেছে। এসব জেলা থেকে বাস আসছেও কম বলে জানান রাজশাহী সড়ক পরিবহনের নেতৃবৃন্দ।
রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটো বলেন, ‘আমরা হরতালের মাঝেও বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সকাল থেকে দু’একটা করে বাস ছেড়েও গেছে। কিন্তু মানুষের মধ্যে একটু আতঙ্ক আছে বলে যাত্রীর সংখ্যা কম হচ্ছে। এ জন্য বেশিসংখ্যক বাস ছাড়া যাচ্ছে না। যাত্রী হলেই আমাদের বাস চলবে। হরতালে গাড়ির কিংবা অন্য কোনো ক্ষতি হলে সেই দায়-দায়িত্ব মালিক হিসেবে আমরা নিয়েই গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুনুর রশীদ বলেন, আমাদের হরতাল চলছে আর চলবে। আমাদের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে কর্মসূচি পালন করছে। তবে প্রশাসনের চক্ষু এড়িয়ে কৌশলগতভাবে সবাই অবস্থান করছে। যেখানে জনস সমর্থন রয়েছে সেখানে আসলে কর্মীর প্রয়োজন হয় না খুব একটা। জনগণই আমাদের হরতাল সফল করে দিচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণ এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে সতর্ক অবস্থানে আছে।
হরতাল পালন করছেন অথচ মাঠে কোন ধরনের নেতাকর্মী দেখা যাচ্ছে না বা চোখে পড়ছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি উত্তরে বলেন, হরতাল তাহলে কি আমরা জোর করে করব? আমরা জোর করে হরতাল করবো কেন? আমরা জনগণের দাবি নিয়ে হরতাল আন্দোলন করছি। জনগণের অধিকার আদায়ে আমরা হরতাল করবো আর জনগণ পাশে থাকবে না এমনটা তো হতে পারে না। জনগণ আমাদের পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে। এখানে জোর করে, পিকেটিং করে, ভয়-ভীতি দেখে হরতাল-অবরোধ করার কোনো দরকার নেই।
এদিকে হরতাল নিয়ে মানুষের জান-মালের ক্ষতি করলে তা প্রতিহতের জন্য প্রস্তুত রয়েছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা নগরীর বিনোদপুর, তালাইমারী, ভদ্রা, শালবাগান, আমচত্বর, সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, লক্ষ্মীপুর মোড়, কোর্ট স্টেশনসহ ১২টি পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছেন। নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু ছিলেন তালাইমারী মোড়ে। তিনি বলেন, ‘বিএনপি হরতালের নামে নৈরাজ্য করলে প্রতিহত করা হবে। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে আমরা মাঠে প্রস্তুত রয়েছি।
এর আগে সকাল ৮টায় নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকাবারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য অবস্থান নেয়। পরে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে তারা নগরীতে টহল শুরু করে।
রাজশাহী নগর পুলিশের মুখপাত্র জামিরুল ইসলাম বলেন, বিএনপির হরতাল নিয়ে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক আছি। সকাল থেকে নগরীতে পুলিশের ট্রাফিক ও মোবাইল ডিউটি শুরু হয়েছে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিও চলছে। হরতালের নামে কোথাও নৈরাজ্য করা হলে পুলিশ তা প্রতিহত করবে।
এর আগে রাজশাহীতে হরতালের আগে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৭৬ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে রাজশাহী মহানগর পুলিশই (আরএমপি) গ্রেফতার করেছে ৭০ জনকে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে। অন্য ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে জেলা পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান জেলা পুলিশ।
বাংলা গেজেট/এমএএইচ
মন্তব্য করুন: