[email protected] বুধবার, ২৫শে ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ই পৌষ ১৪৩১

রিকশাচালক বাবার ঘরে বিসিএস ক্যাডার ছেলে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:
৮ আগষ্ট ২০২৩, ০৭:৫৪

জিল্লুর রহমান

রাজশাহী দুর্গাপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের চুনিয়াপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র রিকশাচালক আকতার আলী। এক বুক স্বপ্ন নিয়ে রিকশা চালিয়েই দুই ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছেন পরিশ্রমী বাবা।

নিজে দুঃখ-কষ্ট নিরবে সয়ে সন্তানদের মানুষ করতে ছুটে চলেন হাসিমুখে। স্বপ্ন দেখেন হয়তো কষ্টগুলো একদিন ঘুঁচবে। আড়াই শতক জমির ওপর টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি দুইটা ঘরই তার শেষ সম্বল।

তবে সব কষ্ট দূর হতে চলেছে রিকশাচালক বাবার। এখন বুঝি অবসরের সময় এসেছে তার। বড় ছেলে জিল্লুর রহমান ৪১তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েছেন। রিকশাচালক থেকে বিসিএস ক্যাডারের বাবা। শত কষ্টের অবসান ঘটিয়ে ঈদের চাঁদন যেন ধরা দিয়েছে খুশির সংবাদে।

জিল্লুর রহমান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) থেকে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন। সম্প্রতি প্রকাশিত ৪১তম বিসিএস পরীক্ষার ফলে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে উপজেলার শ্রীধরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পান তিনি। তার ছোট বোন জুলেখা খাতুন রাজশাহী কলেজের অর্থনীতি বিভাগে স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত আছেন।

শিক্ষা ক্যাডার জিল্লুর রহমানের বাবা আকতার আলী বলেন, টিনের চালার বাড়িটি ছাড়া আর কিছুই নেই আমার। দুই সন্তানের পড়ালেখা ও পরিবারের খরচ চালাতে নিজ গ্রামে কৃষিশ্রমিক ও দিনমজুরি করতে হয়।

বড় সন্তান জিল্লুর রহমান হাটকানপাড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শহরে কোচিংয়ে ভর্তি করেছিলাম। শহরে প্রতিদিন কোচিংয়ে যাতায়াত খরচ চালাতে কষ্টসাধ্য হয়ে উঠলে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে পরিবার নিয়ে রাজশাহী শহরে চলে আসি।

সেখানে মহাজনদের কাছ থেকে ভাড়ায় রিকশা নিয়ে দিনরাত রিকশা চালিয়ে ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচসহ সংসার চালিয়েছি। মেধাবী জিল্লুর রহমান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সে পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশনি করে পরিবারের খরচে সহযোগিতা করতো। ২০১৭ সালে মাস্টার্স শেষ হলে সে সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করার পাশাপাশি বিসিএসের জন্য নিয়মিত পড়াশুনা চালিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জিল্লুর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পেলে দুর্গাপুর উপজেলা শ্রীধরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জানুয়ারি মাসে যোগদান করে। এরপর ৪১তম বিসিএসের চূড়ান্ত পরীক্ষায়ও শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ পেল।

ছেলে বিসিএস ক্যাডার হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে রিকশাচালক বাবা বলেন, আজ আমার ছেলে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পেছনে গ্রাম ও এলাকাবাসীর অবদান সবচেয়ে বেশি। কারণ মেধাবী ছেলে জিল্লুর রহমান যেন ঝরে না যায় সেজন্য এলাকার বিত্তবানরা শুরুতে অর্থনৈতিকভাবে নানা সহযোগিতা করেছেন।

এছাড়া ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালাতে ১৫ বছর ধরে রাজশাহী শহরে রিকশা চালিয়েছি। আমার কষ্টের অর্জন হিসেবে আজ আমার ছেলে বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। এতে আমি সবচেয়ে খুশি ও আনন্দিত। ছেলের মতো মেয়েকেও বিসিএস ক্যাডার হিসেবে দেখার আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিসিএস ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত জিল্লুর রহমান বলেন, আমি হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। আমার বাবা রিকশা চালিয়ে আমাকে বিসিএস ক্যাডার বানিয়েছে এটা আমার গর্ব। ভবিষ্যতে আমিও দরিদ্র মেধাবীদের পাশে দাঁড়াতে চাই।

এ বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল রানা বলেন, এটা অবশ্যই দুর্গাপুরবাসীর গর্বের বিষয়। তাদের দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হবে। তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই।

তাদের জন্য অনেক শুভ কামনা। তারা যেন প্রকৃত সিভিল সার্ভেন্ট হয়ে দেশের জন্য সেবা করতে পারে সে কামনাও করেন এই কর্মকর্তা।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর