প্রকাশিত:
২৮ সেপ্টেম্বার ২০২৩, ১৪:২৪
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ একাধিক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে গোপনীয়তার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকারের বিরুদ্ধে।
এসব পদের জন্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে কোন কিছুই বলা হচ্ছে না। এ নিয়ে স্কুলের শিক্ষক ও কর্মচারীদের সঙ্গেও গোপনীয়তা রাখা হচ্ছে।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে গোপনীয়তার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকারকে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে একাধিক প্রশ্ন করা হলে তিনি ‘কিছুই জানি না, এ ব্যাপারে কিছু বলতেও পারবো না’ বলে এড়িয়ে যান।
তিনি জানান, সহকারী প্রধান শিক্ষক, নিরাপত্তা কর্মী, আয়া এবং অফিস সহকারী পদে একজন জন করে মোট ৪ জন জনবল নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো। তবে বিষয়টি এখন স্থগিত রয়েছে। নিয়োগ কমিটির সিদ্ধান্তে লিখিতভাবে স্থগিত করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি মৌখিকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মৌখিকভাবে স্থগিত করার সুযোগ আছে কিনা এবং এই প্রক্রিয়ার কতদূর অগ্রসর হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না, জানলেও বলবো না।
কেন বলবেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সভাপতির (ম্যানেজিং কমিটি) পরামর্শে আমাকে এব্যাপারে চুপ থাকতে বলা হয়েছে। আপনারা তার (ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি) সঙ্গে কথা বলেন। নিয়োগ প্রক্রিয়া কতদূর এগিয়ে স্থগিত হয়েছিল, কোন কোন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিলো, বিষয়টি গোপনীয়তার সঙ্গে ঘটছে কিনা এসব প্রশ্নের জবাবও এড়িয়ে যান তিনি।
এছাড়াও নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক প্রশ্ন করলেও কোন উত্তর দিতে রাজি হননি এই প্রধান শিক্ষক। নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকে অনেক কথাই বলবে। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন কোনটা সঠিক।
নিজ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ সম্পর্কে জানেন না খোদ শিক্ষকেরাও। একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ ব্যপারে কিছুটা কানাকানি হলেও বিস্তারিত জানা নাই তাদের। এমনকি বিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ডেও এ ব্যাপারে কোন নোটিশ দেয়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ইংরেজি বিষয়ের সাধারণ শিক্ষক আজহারুল ইসলাম বলেন, নিয়োগ হবে শুনেছি একজনের কাছে। কবে নিয়োগ, কোন কোন পদে নিয়োগ, কবে আবেদন করতে হবে এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান।
এদিকে, কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিস থেকে সংগৃহীত চলতি বছরের গত ২৭ আগস্টের জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শামছুল আলম সাক্ষরিত একটি অফিস আদেশে (স্মারক নং-জেশিঅ/কুড়ি/২০২৩/৫৬৬) বলা হয়েছে, কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলাধীন দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এই মর্মে আবেদন করেন যে, বিদ্যালয়ে শূন্য পদে সহকারী প্রধান শিক্ষক-একজন ও সৃষ্ট পদে 'অফিস সহায়ক'-একজন, 'নিরাপত্তাকর্মী'-একজন এবং 'আয়া' - একজন নিয়োগে সরকারি বিধি মোতাবেক নিয়োগের জন্য আবেদন পত্র আহবান করায় আবেদন পত্র জমা হয়েছে যা বাছাই ও নিয়োগ সংক্রান্ত কাজে ডিজি মহোদয়ের প্রতিনিধি মনোনয়ন প্রয়োজন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং- ৩৭.০০.০০০০.০৪.০৩০.০০১.২০১৭ (অংশ-১),১২১, তারিখ - ২৮/০৩/২০২১ খ্রি. মোতাবেক পরিপত্রসহ বিদ্যমান সকল সার্কুলার ও সকল বিধি বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ পূর্বক সংশ্লিষ্ট পদের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হয়ে যাচাই ও নিয়োগ সংক্রান্ত কাজে ডিজি মহোদয়ের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব শর্ত সাপেক্ষে আপনাকে মনোনয়ন দেয়া হলো।
অফিস আদেশ মোতাবেক মনোনীত ডিজি প্রতিনিধি এবং অফিস আদেশের প্রাপক উলিপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আলী। নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি এ ব্যপারে কিছুই জানি না। এখনও কোন চিঠি হাতে পায়নি। আমাকে কিছু জানানো হয়নি। অফিস আদেশের অনুলিপিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, রংপুর অঞ্চলের উপপরিচালক, উলিপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের নাম উল্লেখ রয়েছে।
উলিপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ্ মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে আমার জানা নাই। বিষয়টি নিয়ে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলতে পারেবেন।
দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি খায়রুল ইসলাম বাবলু বলেন, প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনেই আমরা নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করি। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় নিয়োগ প্রক্রিয়াটি আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। আমরা আবার প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যাবো।
প্রধান শিক্ষককে নিয়োগের তথ্য দিতে মানা করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে খায়রুল ইসলাম বাবলু বলেন, তাকে মানা করা হয়নি, এ ব্যাপারে তিনি কি বলেছেন এটা তার এখতিয়ার। ম্যানেজিং কমিটি তো আর প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতা ছাড়া নিয়োগ সম্পন্ন করতে পারবে না। নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে ওঠা আর্থিক লেনদেনের অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
বাংলা গেজেট/এমএএইচ
মন্তব্য করুন: