প্রকাশিত:
২২ আগষ্ট ২০২৩, ০৩:২৫
দাম ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে ভারত ছাড়া পৃথিবীর যেকোন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
সোমবার (২১ আগস্ট) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা জানান। খবর সমকাল।
দেশের বাজারে প্রতিদিনই বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এখন প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকা। এবার পেঁয়াজের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা ১৩ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির আইপিও দিয়েছি, এসেছে মাত্র ৩ লাখ টন।
এখন ভারত তাদের পেঁয়াজ রপ্তানি নিরুৎসাহিত করার জন্য ৪০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এতে পেঁয়াজের দাম বাড়বে। পেঁয়াজ আনা হয়নি বেশি দাম দিয়ে। কিন্তু এরই মধ্যে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো শুরু করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমি জানি না আমরা এটা (বাজার নিয়ন্ত্রণ) কীভাবে করবো। আমরা জাতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য দুটি পদক্ষেপ নিয়েছি। গ্রীষ্মকালে একটা পেঁয়াজ উৎপাদন করা। গতবার থেকে এটা শুরু হয়েছে।
এবার ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ করেছি, সেটা আসবে অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের প্রথম দিকে। নভেম্বরের আগে আমরা নতুন পেঁয়াজ পাবো না। অতীতেও আমরা দেখেছি সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে।
‘ভারতের এ পদক্ষেপের কারণে যদি পেঁয়াজের দাম বাড়ে তাহলে আমরা কীভাবে সামলাবো। এখানে তো আমাদের কোনো হাত নেই।’
তিনি বলেন, এটা মোকাবিলা করার জন্য আমাদের বিকল্প হচ্ছে অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আনা। মিশর, তুরস্ক, চীন থেকে এটা আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। এটা (পেঁয়াজ আমদানি) প্রত্যক্ষভাবে আমাদের দায়িত্ব নয়।
মন্ত্রী হিসেবে আমি দায়িত্ব এড়াতে পারবো না। এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় করবে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, বাণিজ্যমন্ত্রী, সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছি। কীভাবে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়। এরই মধ্যে আমরা ঘোষণা দিয়েছি- অন্যান্য দেশ থেকে আমরা যাতে পেঁয়াজ আনতে পারি।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যা সমাধানে আমাদের হাতে কিছু নেই। একটাই আছে, তা হলো অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, বাজার শক্তভাবে মনিটর করতে হবে, নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
কবে নাগাদ আমদানি করা হবে, এ বিষয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যারা আমদানি করে তারা কাল থেকেই করতে পারে। যে কেউ ইমিডিয়েট চীন, জাপান, ইরান থেকে পেঁয়াজ আনতে চায়, আমরা তাদের আইপিও দেবো।
এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে কৃষকের ঘরে বেশি পেঁয়াজ রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়বে, কিন্তু ওই রকম আকাশচুম্বী হবে না বলে আমাদের ধারণা।
বাজার মনিটরিংয়ে দুর্বলতা রয়েছে কি না, এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, খোলাবাজার অর্থনীতি। কতটা আপনি বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন? এটা-তো রেজিমেন্টেড গভর্নমেন্ট না, রাশিয়া ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সরকার নয়। ইচ্ছা করলেই আমরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না। এটা চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। সরবরাহ বাড়লে দাম করবে।
তিনি আরও বলেন, দুটি উপায়ে আমরা এ সমস্যাটা সমাধান করতে চাচ্ছি। এক হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধি করা। দ্বিতীয় হচ্ছে, পেঁয়াজকে দীর্ঘ সময় পচন থেকে রক্ষা করা।
‘আমরা ঘর করে ঘরের মধ্যে মাচা করে পেঁয়াজগুলো রেখে ফ্যান দিয়ে রাখার পদ্ধতি চালু করেছি। ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও পাবনায় ৫০-৬০টি করে ঘর করে দিয়েছি। সেখানে পেঁয়াজ রাখা হয়েছে।
আমি আপনাদের তথ্য দিতে চাই, গতকাল পর্যন্ত আমরা আলাপ করেছি, প্রায় ১৬০-১৭০টি ঘরে পেঁয়াজ খুব ভালো আছে, রংও সুন্দর আছে, চাষিরাও খুশি, তারা কম কম করে বিক্রি করছে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, এটি আমাদের পাইলট প্রজেক্ট। আরও এক-দেড় মাস যদি পেঁয়াজ ভালো থাকে তাহলে আমরা সফল। ইনশাআল্লাহ আগামী বছর আমরা ব্যাপকভাবে এ ঘর করে দেবো। যেসব এলাকায় পেঁয়াজ বেশি হয় সেখানে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে পেঁয়াজের সেলফ লাইফ (বেশি সময় ভালো থাকবে) বেশি সময় রাখা যাবে। এটা করতে পারলে ভবিষ্যতে পেঁয়াজ নিয়ে এ সমস্যা আর থাকবে না।
ডলারের দাম বৃদ্ধির কুফল আমরা এখন ভোগ করছি জানিয়ে তিনি বলেন, আরও পাঁচ-ছয় মাস আমাদের কষ্ট করতে হবে। এরপর ইনশাআল্লাহ আমরা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবো।
বাংলা গেজেট/এফএস
মন্তব্য করুন: