প্রকাশিত:
৪ ডিসেম্বার ২০২৩, ১৩:১৩
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী থানার ওসি রদবদলের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন রেঞ্জ, মহানগর পৃথক এই তালিকা করে পুলিশ সদরদপ্তরে পাঠিয়েছে। রদবদলের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য আজকালের মধ্যে ইসিতে পাঠানো হবে। খবর সমকাল।
বর্তমানে যে নির্বাচনী এলাকায় রয়েছেন, সেখান থেকে সরিয়ে একই জেলায় অন্য আসনের থানায় ওসিদের বদলি করা হচ্ছে। জেলার কোনো থানায় সমন্বয় করা না গেলে তাঁকে অন্য জেলা ও মহানগরে পদায়ন করার চিন্তাভাবনা চলছে। পুরোনো বলয় ভেঙে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ভোট গ্রহণের জন্য এই রদবদল কাজে আসবে বলে সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করছেন।
একাধিক ডিআইজি ও মহানগর পুলিশ কমিশনারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইসির নির্দেশনার আলোকে প্রথমে তারা ৬ মাসের বেশি দায়িত্ব পালন করেছেন, এমন ওসিদের নাম-তালিকা বাছাই করেছেন। এর পর কাকে কোন জায়গায় পদায়ন করা যেতে পারে, সেই প্রস্তাব করে মাঠ পর্যায় থেকে পুলিশ সদরদপ্তরে পাঠানো হয়। পুলিশ সদরদপ্তর যাচাই-বাছাই করে এটি ইসিতে পাঠাবে। সেখান থেকে অনুমোদনের পর বদলির আদেশ জারি করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা রেঞ্জের ৯৮ থানার মধ্যে ৫৮টিতে নতুন মুখ আসছে। সিলেট রেঞ্জে থানার সংখ্যা ৩৯। এর মধ্যে ২০ থানার ওসি ৬ মাসের বেশি দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের রদবদলের প্রস্তাব এরই মধ্যে পুলিশ সদরদপ্তরে গেছে। এ ছাড়া সিলেট মহানগর পুলিশের দুই থানার ওসিকে রদবদলের প্রস্তাব গেছে। খুলনা রেঞ্জে ৬৪ থানার মধ্যে ৩৮টির ওসি রদবদল হচ্ছেন। খুলনা মহানগর পুলিশে ৮টি থানা রয়েছে। এর মধ্যে চার থানার ওসি বদলির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। রাজশাহী মহানগরে ১২ থানার মধ্যে রদবদলের তালিকায় আছেন ৬ থানার ওসি।
সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমান বলেন, ইসির নির্দেশনার আলোকে রদবদলের প্রস্তাব পুলিশ সদরদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। যারা বর্তমানে ওসি পদে রয়েছেন, তাদের জেলার ভেতরে অন্য নির্বাচনী এলাকায় বদলির প্রস্তাব করা হয়েছে। সিলেট মহানগর পুলিশ থেকে দুই ওসিকে রেঞ্জের আওতাধীন দুটি থানায় দেওয়ার কথা বলা হয়। আবার রেঞ্জ থেকে দু’জনকে মহানগর পুলিশে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রদবদলের ক্ষেত্রে জেলা বা ইউনিটের ভেতরে আসন বদলে অন্য আসনে ওসি পদে পদায়নের প্রস্তাব করা হচ্ছে। জেলার ভেতরে কোনো থানায় সমন্বয় করা না গেলে, অন্য ইউনিটে ওসি পদে রদবদলের প্রস্তাব করা হয়েছে। একেবারেই ব্যতিক্রম ছাড়া নতুন কাউকে ওসি পদে পদায়ন করা হচ্ছে না।
গতকাল সন্ধ্যায় ডিএমপির মিডিয়া বিভাগ থেকে খুদেবার্তায় জানানো হয়, গত ৩০ নভেম্বর ইসির চিঠির পর ঢাকা মহানগর পুলিশের যেসব থানার ওসি বর্তমান কর্মস্থলে ৬ মাসের বেশি দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের অন্যত্র বদলির প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য শিগগিরই ইসিতে পাঠানো হবে।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশের থানা রয়েছে ৩৩টি। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব থানার মধ্যে ৯টি থানার ওসি ৬ মাসের বেশি সময় দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে সরকারি নিয়ম অমান্য করে একই পদে ৩ বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালন করা ওসিও রয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগে বিভিন্ন থানার ওসি বদলি হলেও সেই ‘প্রভাবশালী’ ওসিরা আছেন বহাল তবিয়তে।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের ১৭ থানার মধ্যে ৬ থানার এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ১৬ থানার মধ্যে ৩ থানার ওসি ৬ মাসের বেশি সময় একই পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের মধ্যে রাউজান থানায় আবদুল্লাহ আল হারুন ৩ বছর ৩ মাস ১৭ দিন এবং বাঁশখালী থানায় কামাল উদ্দিন ২ বছর ১ মাস ২১ দিন ওসি পদে আছেন। ২০১৫ সালের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী, একই পদে ৩ বছরের বেশি নিয়োজিত সরকারি কর্মচারীদের অন্য জায়গায় বদলি করতে হবে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অন্য ওসিদের মধ্যে জোরারগঞ্জ থানার ওসি জাহিদ হোসেন দায়িত্ব পালন করছেন ১ বছর ধরে। মিরসরাই থানার ওসি কবির হোসেন দায়িত্বে আছেন ১ বছর ৯ মাস। সীতাকুণ্ড থানায় ১ বছর ১ মাস ২১ দিন ধরে ওসির দায়িত্বে আছেন তোফায়েল আহমেদ। ১ বছর ৩ মাস ১৮ দিন সন্দ্বীপ থানার ওসির দায়িত্বে আছেন মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম। এ ছাড়া হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া, ভুজপুর, ফটিকছড়ি, পটিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া থানার ওসির কর্মকাল একই থানায় ৬ মাস পূর্ণ হয়নি।
এদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের আকবরশাহ থানার ওসি পদে ওয়ালী উদ্দিন আকবর টানা ১ বছর ৬ মাস ১৮ দিন দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ ছাড়া সদরঘাট থানার ওসি গোলাম রব্বানী ১০ মাস ১০ দিন ও বন্দর থানার ওসি সঞ্জয় সিনহা ৮ মাস ১৯ দিন একই পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
সিএমপির উপপুলিশ কমিশনার আব্দুল ওয়ারীশ সমকালকে বলেন, সিএমপির ১৬ থানার মধ্যে অধিকাংশ থানায় ওসি সম্প্রতি বদল হয়েছে। যে কয়টি থানায় এখনও বদলি হয়নি, নির্দেশনা পেলে বদলি করা হবে।
নির্বাচনের আগে ওসি বদলি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে মাঠ পর্যায়ে। এক পক্ষ বলছে, নির্বাচনী মাঠে দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে একই দলের লোকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও হয়েছেন। এতে নতুন কর্মস্থলে ওসিরা দায়িত্ব পালনে হিমশিম খাবেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বলছেন, এটি নির্বাচন কমিশনের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। কারণ, অনেক ওসি নির্বাচনী এলাকায় বর্তমান এমপিদের ‘নিজস্ব মানুষ’ হিসেবে পরিচিত। ওই এমপিরা এবারও দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। তাই তাদের পছন্দের ওসিরা নির্বাচনী মাঠে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবেন কিনা– প্রশ্ন রয়েছে।
চট্টগ্রাম-১৫ (বাঁশখালী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে ওসিদের বদলি একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। এটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভূমিকা রাখবে।’
বাংলা গেজেট/এফএস
মন্তব্য করুন: