[email protected] শুক্রবার, ১লা নভেম্বর ২০২৪, ১৭ই কার্তিক ১৪৩১

দুলাভাইয়ের খরচে এমপি নির্বাচন করবেন পরিচ্ছন্নতা কর্মী

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত:
৩ ডিসেম্বার ২০২৩, ১৯:৪৩

ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) গণমুক্তি জোট থেকে প্রার্থী হয়েছেন রোকেয়া বেগম নামে এক নারী। তিনি পেশায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী (ঝাড়ুদার)। শনিবার (২ ডিসেম্বর) ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) মনোনয়ন বাছাইয়ে তিনি এমপি প্রার্থী হিসেবে টিকে আছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হালুয়াঘাট উপজেলার গাজিরভিটা ইউনিয়নের বোয়ালমারা গ্রামের মোছা. রোকেয়া বেগম। স্বামী ফারুক দীর্ঘদিন আগে ২ সন্তানসহ রোকেয়াকে ছেড়ে চলে যান। সরকারি খাস জায়গায় ছোট্ট একটি কুঁড়ে ঘরে বৃদ্ধ মা আছিয়া খাতুন ও ১ ছেলে, ১ মেয়েকে নিয়ে রোকেয়ার বাস। অভাবেব সংসারে তিনি হালুয়াঘাট পৌর শহরের একটি ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে পরিচ্ছন্নতা কর্মী (ঝাড়ুদার) হিসেবে কাজ করে সংসার চালাতেন।

কিন্তু সেই ডায়াগনোস্টিক সেন্টারটি বন্ধ হয়ে গেলে সেখান থেকে চাকুরির সুবাদে বর্তমানে তিনি বিভিন্ন ডাক্তারের বাসা বাড়িতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বিভিন্ন পরিচিত রোগীদের ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করান। এভাবেই চলছে তার সংসার।

তবে হঠাৎ করেই তার দুলাভাইয়ের কথায় ও আর্থিক সহযোগিতায় তিনি গণমুক্তি জোটের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে এমপি পদে প্রার্থী হয়েছেন। এনিয়ে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে আলোচনা সমালোচনার। যেখানে নিজের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী কীভাবে তাকে করা হয়েছে তার উত্তর জানে না তার এলাকার সাধারণ মানুষ।

বোয়ালমারা এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ আব্দুল মালেক বলেন, রোকেয়ার স্বামী দীর্ঘদিন আগে তাকে রেখে চলে যায়। অভাবের কারণে যেখানে তার সংসার চলেনা সেখানে সে কীভাবে এমপি প্রার্থী হয়েছে তা আমার জানা নেই। তাকে কোনোদিন রাজনীতি বা জনসেবা করতেও দেখি নাই।

আরেক বাসিন্দা শহিদ মিয়া বলেন, আমার জানামতে সে ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে চাকুরি করেন। নিজের কোনো থাকার জায়গা নেই। সরকারি খাস জায়গায় ছনের ঘরে থাকেন। তার মনে কীভাবে এমপি হওয়ার খায়েশ জাগলো তা আমি জানি না। কোনোদিন আমাদের বলেও না। এলাকায় কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, মাঠে অবস্থান নেই, এভাবে চাইলেও যে এমপি প্রার্থী হওয়া যায় তা দেখে আমরা এলাকাবাসী সত্যিই খুব অবাক হয়েছি।

মোছা. রোকেয়া বেগমের বৃদ্ধ মা আছিয়া খাতুন বলেন, আমার মেয়ে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। তার দুলাভাই (ময়মনসিংহ-৪ আসনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি থেকে মনোনীত এমপি প্রার্থী হামিদুল ইসলাম) তাকে এমপি পদে দাঁড় করিয়েছে। তারাই সকল খরচ দিবে। আমরা এতো টাকা কোথায় পাবো। আমার মেয়ের কষ্টের টাকায় ২ বেলা খেয়ে বেঁচে আছি।

এবিষয়ে গণমুক্তি জোট এর মনোনীত প্রার্থী মোছা. রোকেয়া বেগম বলেন, আমি আগে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে ইনসাফ ডায়াগোনস্টিক সেন্টারে চাকুরি করতাম। বর্তমানে এখানে সেখানে কাজ করে সংসার চালাই। গত ২৮ তারিখ আমাকে প্রার্থী হওয়ার জন্য আমার আত্মীয় ময়মনসিংহ সদর আসনের ন্যাশনাল পিপলস পার্টির এমপি প্রার্থী হামিদুল ইসলাম অনুরোধ করেন। আমার সকল খরচ তিনিই বহন করেন। আমি উনাকে বলেছিলাম, আমি তো আওয়ামী লীগের কর্মী। এ ক্ষেত্রে আমার কোনো সমস্যা হবে কিনা?

তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের সাথেই আছি, তোমার কোনো সমস্যা নেই। পরে আমার সকল কাগজপত্র তিনিই রেডি করে আমাকে প্রার্থী হতে সহযোগিতা করেন। আমার নির্বাচনের সকল খরচ উনারাই দিবেন। আমি নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত থাকবো।

এবিষয়ে জানতে ময়মনসিংহ-৪ সদর আসনের ন্যাশনাল পিপলস পার্টি থেকে মনোনীত এমপি প্রার্থী হামিদুল ইসলাম বলেন, রোকেয়া খাতুন সম্পর্কে আমার শালিকা। আমি তাকে এমপি প্রার্থী হওয়ার জন্য বলি এবং সকল সহযোগিতা করি। তাছাড়া গণমুক্তি জোট আওয়ামী লীগের শরিক দল হিসেবে রয়েছে। তাদের অবস্থান বেশ শক্তিশালী। তাই আমি আমার শালিকাকে প্রার্থী করেছি। এ বিষয়ে আমি সকলের সহযোগিতা চাই।

বাংলা গেজেট/ এসএডি-৩


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর