[email protected] শুক্রবার, ২৭শে ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ই পৌষ ১৪৩১

কী ভাবছে ফেনীর তরুণ ভোটাররা?

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত:
২৭ নভেম্বার ২০২৩, ২০:৩৭

ফাইল ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন ঘিরে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একেরপর এক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে সরকার দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। ইতোমধ্যে সব আসনে প্রার্থীও ঘোষণা করেছে দলটি। যার ফলে দেশ জুড়ে বইছে নির্বাচনী আমেজ।

পাশাপাশি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক কৌশলসহ সময়ের গুরুত্বপূর্ণ এসব বিষয় ছাপিয়ে নতুন ভোটারের কাছে ভোট হয়ে উঠেছে প্রধান আলোচ্য বিষয়। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে ফেনীর তরুণ ভোটাররা তা নিয়ে একাধিক নতুন ভোটারদের সাথে কথা হয়। এতে উঠে এসেছে নতুন ও তরুণ ভোটারদের মনে রয়েছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। পাশাপাশি রয়েছে প্রথমবারের মতো ভোট দেয়ার আকাঙ্ক্ষা ও উচ্ছ্বাস। দেশে নির্বাচনী আমেজ দেখে তরুণরাও উচ্ছ্বসিত। প্রথমবার ভোট দেয়াসহ, নির্বাচন নিয়ে তাদের ভাবনার কথা জানিয়েছেন তারা।

জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, গত ২০ জুলাই পর্যন্ত ফেনীতে নতুন ভোটার বেড়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার ২৬৪ জন। এর মধ্যে তরুণ ভোটার ৬০ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ, তরুণ ভোটার সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনীর ৩টি সংসদীয় আসনে ভোটার ছিল ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭১ জন। সে হিসেবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনীতে ভোটার বেড়েছে ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। নতুন ভোটারদের বেশিরভাগই তরুণ, যারা জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে মুখিয়ে আছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ প্রসঙ্গে অভিব্যক্তি তুলে ধরে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করেন একাধিক তরুণ ও নতুন ভোটার। প্রথমবার ভোট নিয়ে তরুণদের মাঝে প্রকট আগ্রহ থাকলেও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাদের মধ্যে শঙ্কাও কাজ করছে।

শফিকুল আলম নামে ফেনী সরকারি কলেজের একজন শিক্ষার্থী এ বছর নতুন ভোটার হয়েছেন। ভোট এবং নির্বাচন নিয়ে তার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিটি নাগরিকের ভোট দেওয়ার মৌলিক অধিকার থাকা উচিত। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগে উৎসুক হয়ে আছি। তবে সেক্ষেত্রে নির্বাচন পরিস্থিতি ভোটের অনুকূলে থাকতে হবে।

তারেক উদ্দিন চৌধুরী নামে আরেকজন তরুণ ভোটার মতামত প্রকাশ করে বলেন, এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট দিলেও প্রথমবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি। নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকলে তরুণরা তাদের মতামত প্রকাশ করার সুযোগ হাতছাড়া করবে না। তবে বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিবেচনা করে ভোটপ্রদান নিয়ে আমাদের শঙ্কাও কাজ করছে।

ইফরাত জাহান নামে ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর একজন শিক্ষার্থী বলেন, আগে কখনোই ভোট দেয়ার সুযোগ হয়নি। শুনেছি নির্বাচনকেন্দ্রিক দেশে নানা হট্টগোল, অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এমন অবস্থা হলে পরিবার থেকেই ভোট দিতে দেবে না। তরুণ ভোটাররা যাতে নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেজন্য রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে হবে।

আশরাফুল আলম মাসুম নামে ফেনী কম্পিউটার ইন্সটিটিউট এর একজন শিক্ষার্থী বলেন, তফসিল ঘোষণা হয়েছে। দেশে হরতাল অবরোধ চলছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন আমরা তরুণরাও কমবেশ বুঝতে পারি। নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দেয়ার ইচ্ছা বহুদিনের থাকলেও এখন যে পরিস্থিতি চলছে ভোট কীভাবে দিব, গণ্ডগোল হবে কিনা এসব ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়ি। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত তরুণ প্রজন্মকে প্রাধান্য দেয়া, আমাদের মতো নতুন ভোটারদের ভোটপ্রদানের সুযোগ করে দেয়া।

ফেনী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ফারিয়া তাসফি বলেন, দেশে নির্বাচন আসলে উৎসবমুখর একটা পরিবেশ হওয়ার কথা কিন্তু নির্বাচন আসলে হরতাল অবরোধসহ সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়ে যায়। আমার মতো অনেক তরুণীরা ভোট দেয়ার ইচ্ছা নিয়ে বসে থাকলেও বাস্তবে সেটি সম্ভব হবে কিনা সেটি সময়ই বলে দেবে।

ফেনীতে তরুণ ভোটারের সংখ্যা প্রসঙ্গে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, ফেনী প্রবাসী অধ্যুষিত হওয়ায় নতুন ভোটারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে প্রবাসী, এর মধ্যে যুবক থেকে বৃদ্ধ মানুষও রয়েছেন। দেশের বাইরে থাকার কারণে তারা পূর্বে ভোটার হতে পারেননি। এ হিসাবের বাইরেও অনেকে নতুন ভোটার হচ্ছে এখনও।

ওমান প্রবাসী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের এহছাক উল্লাহ নামে পঞ্চাশোর্ধ এক নতুন ভোটার মতামত প্রকাশ করে বলেন, ভোটার হওয়ার জন্য নির্ধারিত সময়গুলোতে আমি দেশের বাইরে ছিলাম। চলতি বছর জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছি। ১৯৯১ সালের নির্বাচন থেকেই আমার সমবয়সীরা ভোট দিয়ে আসছে। বয়স হলেও ভোট না দিতে পারায় নিজের মধ্যে এক ধরণের অতৃপ্তি কাজ করছিল। কিন্তু গত কয়েক নির্বাচনে ভোটের ধরণ দেখে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ কমে গেছে। সুযোগ থাকলেও ভোট দেব, নইলে দেব না।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ জুলাই পর্যন্ত হালনাগাদ ভোটার তালিকা অনুযায়ী ফেনী-১ (ফুলগাজী-পরশুরাম-ছাগলনাইয়া) আসনে ভোটার সংখ্যা বেড়েছে ৫১ হাজার ৪০১ জন। ফেনী-২ (ফেনী সদর) আসনে ভোটার সংখ্যা বেড়েছে ৫৯ হাজার ৭৯৩ জন। ফেনী-৩ (দাগনভূঞা-সোনাগাজী) আসনে ভোটার সংখ্যা বেড়েছে ৭৯ হাজার ৭০ জন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনীর ৩টি আসনে ৩৯৯ টি ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন।

 

বাংলা গেজেট/এমএএইচ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর