প্রকাশিত:
১৫ আগষ্ট ২০২৩, ০৩:২৮
মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত কীটনাশক, যন্ত্রপাতি এবং এর রোগতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করতে ভেক্টর কন্ট্রোল রিসার্চ সেন্টারের (ভিসিআরসি) মতো একটি সেন্টার প্রতিষ্ঠায় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন হাইকোর্ট।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মশার উপদ্রব থেকে সুরক্ষায় জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে গতকাল রবিবার এ রায় দেন বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আবেদনকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, আদালতের আহ্বানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক কবিরুল বাশার সুপারিশসহ বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়েছেন। আজ মামলাটি নিষ্পত্তি করে সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য সিভিল এভিয়েশন এবং সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। দীর্ঘমেয়াদে ভেক্টর কন্ট্রোল রিসার্চ সেন্টারের (ভিসিআরসি) মতো একটি সেন্টার করতে আদালত সরকারকে বলেছেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মশার উপদ্রব থেকে সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে ২০১৯ সালের ৩ মার্চ হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ।
রিটের প্রাথমিক শুনানির পর ১২ মার্চ হাইকোর্ট রুল দেন। এর মধ্যে বিমানবন্দরে মশার উপদ্রব নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর-প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সেসব খবর-প্রতিবেদন যুক্ত করে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে সম্পূরক আবেদন করেন আইজীবী তানভীর।
এ আবেদনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের নির্দেশনা চাওয়া হয়। পরে গত বছর ২০ ফেব্রুয়ারি আদালত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও বেবিচককে নির্দেশ দেন। বেবিচকের চেয়ারম্যানকে ১০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
এ নির্দেশনার পর সিটি করপোরেশন ও বেবিচক একাধিকবার আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে।
গত ৬ মার্চ সেসব প্রতিবেদন আদালতে তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৩ মার্চ আদালত বিমানবন্দর এলাকার মশা নিধনে কবিরুল বাশারসহ তিনজনের মতামত জানতে তাদের ডেকেছিলেন।
সে অনুযায়ী কবিরুল বাশার আদালতে বিমানবন্দর এলাকার চারপাশে চার কিলোমিটার এলাকা মশামুক্ত রাখা নিয়ে ‘আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য প্রবিধান’র বিভিন্ন বিধি ও আটটি সুপারিশ প্রতিবেদনে তুলে ধরেন। কবিরুল বাশারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও মশা ও মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
প্রতিবেশী দেশ ভারতে ১৯৭৫ সালে ভেক্টর কন্ট্রোল রিসার্চ সেন্টার (ভিসিআরসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত আধুনিক ও যুগোপযোগী। বাংলাদেশে এমন একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি হলে বাহকবাহিত রোগ ও বাহক মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহƒত কীটনাশক, যন্ত্রপাতি এবং এর রোগতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করা যাবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশে এখন পর্যন্ত ১২৬ প্রজাতির মশা শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে ঢাকায় শনাক্ত হয়েছে ১৬ প্রজাতির মশা। আর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাওয়া গেছে ৯ প্রজাতির মশা।
এগুলো হচ্ছেÑকিউলাস কুইনকিউফেসিয়েটাস, কিউলেক্স ট্রিটাইনায়োরিঙ্কাস, কিউলাস গেলিডাস, এডিস ইজিপটি, এডিস অ্যালবোপিকটাস, ম্যানসোনিয়া অ্যানুলিফেরা, ম্যানসোনিয়া ইউনিফর্মিস, আর্মিজেস সাবলবাটাস ও টক্সোরিঙ্কাইটস সেপ্লডেনস।
এ কীটতত্ত্ববিদ তার প্রতিবেদনে বলেছেন, প্রজাতিভেদে মশার প্রজনন স্থল, প্রজনন ঋতু ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভিন্ন। তাই মশা নিয়ন্ত্রণে সফলতার জন্য এর জীবনাচরণ সম্পর্কে জানা দরকার। মশার বায়োলজি, ইকোলজি, স্বভাব পর্যালোচনা করে নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানভিত্তিক প্রয়োগ প্রয়োজন।
বিমানবন্দর এলাকায় মশার প্রজননস্থল হিসেবে দুটি বড় খাল, ছোট-বড় পাঁচটি জলাশয়, খোলা ড্রেন, পরিত্যক্ত টায়ার, ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের পাত্র, গাছের কোটর এবং বিমানবন্দর ঘিরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পাঁচটি ওয়ার্ড (১, ১৭, ৪৯, ৫০ ও ৫২), এয়ারফোর্স এরিয়া, প্রিয়াঙ্কা হাউজিং ছাড়াও রাজউকের কিছু জায়গার কথা উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে এ শিক্ষক বলেন, যেহেতু মশা চার কিলোমিটার পর্যন্ত উড়ে যেতে পারে, তাই বিমানবন্দরকে মশামুক্ত করতে হলে এর চারপাশে চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মশার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। তার জন্য সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। কাজটি করা কঠিন নয়।
আদালত আজ শুনানি গ্রহণ শেষে এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের পাশাপাশি মশা নিয়ন্ত্রণে একটি রিসার্চ সেন্টার করতে বলেছেন।
বাংলা গেজেট/এমএএইচ
মন্তব্য করুন: