[email protected] শুক্রবার, ১লা নভেম্বর ২০২৪, ১৭ই কার্তিক ১৪৩১

গ্রেফতার এড়াতে কৌশলী বিএনপি নেতারা

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত:
২১ নভেম্বার ২০২৩, ০৯:৫৭

ফাইল ছবি

মহাসমাবেশ-হরতাল-অবরোধ ঘিরে ঘড়ছাড়া বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী। কেন্দ্রীয় নেতাদেরও প্রায় সবাই কোনো না কোনো মামলার আসামি। গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে একের পর এক অভিযান চালিয়ে প্রতিদিন শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করছে পুলিশ। এ অবস্থায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত হলো-গ্রেফতার এড়িয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। খবর যুগান্তর।

এজন্য কৌশলী ভূমিকায় আছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা মোবাইল ফোনে সরাসরি যোগাযোগের পরিবর্তে অনলাইন মাধ্যমে যোগাযোগ করছেন। দলের নীতিনির্ধারণী বৈঠক ও নির্দেশনাও যাচ্ছে অনলাইনে। 

নিজের বাড়ি বা বাসার পরিবর্তে অন্যত্র অবস্থান করছেন অধিকাংশ নেতা। এতে করে তৃণমূলে গ্রেফতারের সংখ্যা অনেক বেশি হলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের আটকের সংখ্যা তুলনামূলক কম। 

বর্তমানে বিএনপির সামনের সারির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ২৩ জনসহ আরও কয়েকজন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। বিএনপি ও পুলিশের দেওয়া তথ্য এবং যুগান্তরের অনুসন্ধানে এ চিত্র উঠে এসেছে।

বিএনপি জানায়, গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ঘিরে সোমবার পর্যন্ত সারা দেশে তাদের অন্তত ১৪ হাজার ২০০ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে ৩৩১টির অধিক মামলা হয়েছে। 

এ অবস্থায় সরকারের পতনের একদফা আন্দোলন সফল করতে তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। পরিবারের সদস্যসহ ঘনিষ্ঠজনদেরও তাদের অবস্থান জানাচ্ছেন না। 

এ কারণেই পুলিশের ধারাবাহিক অভিযানেও তারা গ্রেফতার এড়িয়ে থাকতে পেরেছেন। তবে নেতাদের না পেয়ে তাদের পরিবার ও বাসায় কাজের সহযোগীদের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ হয়রানি করেছে। অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে আটক করে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। 

তাছাড়া এবারের আন্দোলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের থেকেও তৃণমূলকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। দলটির হাইকমান্ড থেকে সরাসরি তৃণমূলে আন্দোলনের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ এটি বুঝতে পেরে তৃণমূলে গ্রেফতার বেশি করছে। 

বিশেষ করে মাঠের আন্দোলনে যারা সামনের সারিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের টার্গেট করা হচ্ছে। এ কারণেই কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেফতার তুলনামূলক কম। তাছাড়া অনেকে জামিনে আছেন এবং অনেককে পুরনো মিথ্যা মামলা নিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের ছেলে তানভীর রহমান মিথুনের বাসায় শুক্রবার মধ্যরাতেও পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। ছেলের স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে। অথচ তানভীর রহমান কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত নয়।

 তবুও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে খুঁজছে। পিতাকে না পেয়ে সন্তানকে, ভাইকে না পেয়ে আরেক ভাইকে, এমনকি জামাই, শ্বশুর, কাজের লোক ও গাড়ির ড্রাইভারকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করেও নেতাকর্মীরা মাঠে রয়েছে। সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে আন্দোলনের মাধ্যমে অবৈধ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।’

জানা যায়, বর্তমানে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির তিনজন, ভাইস চেয়ারম্যান চারজন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের ২ জন, যুগ্ম মহাসচিব ৩ জন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।

সাংগঠনিক সম্পাদক ৩ জন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ২ জন, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ৪ জন এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য ১ জন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কারাগারে থাকা এই ২৩ জনের কয়েকজন ছাড়া বেশির ভাগই ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পরবর্তী সময়ে গ্রেফতার হয়েছেন। 

এছাড়া গত ২ মাসে ঢাকার আদালতে ২১টি মামলায় বিএনপির ২৬৫ জনের কারাদণ্ড হয়। বিগত ১ বছরে ২৯টি মামলায় কারাদণ্ড হয় ২৯৯ জনের।

এদিকে অভিযান সংশ্লিষ্ট পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মহাসমাবেশ-হরতাল-অবরোধ ঘিরে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অধিকাংশই গাঢাকা দিয়েছেন। তাদের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে বাসার ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন। নিজ এলাকায় না থেকে অন্য এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন কেউ কেউ। এদের অনেকে পকেট রাউটার ব্যবহার করছেন। 

নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগও করছেন অনলাইনে। এছাড়া মাঠের ঝটিকা কর্মসূচিতে উপস্থিতি থাকলেও তাদের বেশির ভাগই দীর্ঘ সময় বাইরে অবস্থান করছেন না। ফলে তাদের সহজেই গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। এ কারণে তারাও কৌশলী হয়েছেন। 

বিএনপি নেতাদের পরিবারের সদস্য, ব্যক্তিগত সহায়তাকারী ও ঘনিষ্ঠজনদের অনেককে তারা অনুসরণ করছেন। যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনায় সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তাদেরকে এই প্রক্রিয়ায় গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, অযথা কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। যারা গ্রেফতার হচ্ছেন, তারা কেন্দ্রীয় নাকি তৃণমূলের নেতা, দলীয় কোনো পদ আছে নাকি নেই সেটি আমাদের দেখার বিষয় নয়। যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে কেবল তাদেরই গ্রেফতার করা হচ্ছে।

কারাগারে থাকা ২৩ কেন্দ্রীয় নেতা : বিএনপির কেন্দ্রীয় মোট গ্রেফতার নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির গ্রেফতার তিনজন হলেন-দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গ্রেফতার চার ভাইস চেয়ারম্যান হলেন-ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, মোহাম্মদ শাহজাহান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও শামসুজ্জামান দুদু।

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের মধ্যে গ্রেফতার দুইজন হলেন-আমান উল্লাহ আমান ও হাবিবুর রহমান হাবিব। কারাগারে থাকা তিন যুগ্ম মহাসচিব হলেন-মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও খায়রুল কবির খোকন।

কারাগারে থাকা তিন সাংগঠনিক সম্পাদক হলেন-সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন। শরিফুল আলম ও মাহবুবুল হক নান্নু-এই দুই সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কারাগারে আছেন।

সম্পাদকমণ্ডলীর মধ্যে গ্রেফতার পাঁচজন হলেন-প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, বাণিজ্য সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমেদ, গ্রাম সরকারবিষয়ক সহ-সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল আহমেদ ও সহ-প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ শামীমুর রহমান শামীম। নির্বাহী কমিটির সদস্যের মধ্যে রবিউল ইসলাম রবি গ্রেফতার হয়েছেন। 

এর বাইরে বিএনপির ক্রীড়া সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়া ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ এমন অনেক কেন্দ্রীয় নেতা এখন কারাগারে। গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের মতো অনেক কেন্দ্রীয় নেতাও।

বাংলা গেজেট/এফএস


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর