প্রকাশিত:
৩১ অক্টোবার ২০২৩, ১৯:২১
পোশাক খাতের কর্মীদের জন্য ন্যূনতম মজুরি পর্যালোচনা করছে সরকার গঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ড। এই বোর্ড নভেম্বরের মধ্যেই নতুন বেতনকাঠামো ঘোষণা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। পোশাক শিল্পে যত প্রতিকূলতাই থাকুক না কেন, সরকার নতুন যে বেতনকাঠামো ঘোষণা করবে, উদ্যোক্তারা তা মেনে নেবেন। এই নতুন মজুরি কাঠামো আগামী ডিসেম্বরে কার্যকর হবে। এ সময়ের মধ্যে মজুরির দাবিতে কোনো শ্রমিক আন্দোলের নামে পোশাক কারখানায় হামলা, ভাঙচুর বা আক্রমণ করলে শিল্পের স্বার্থে কারখানা বন্ধ করে দিতে পারবেন মালিকরা। কারখানা বন্ধ থাকাকালে শ্রমিকরা বেতন-ভাতা পাবেন না।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) কমপ্লেক্সে পোশাক শিল্পে শ্রম পরিস্থিতি বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ’র এসব কথা বলেছেন সভাপতি ফারুক হাসান। এ সময় সংগঠনটির সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী, বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি শহিদুল্যাহ আজিম এবং এস এম মান্নান কচিসহ বিজিএমইএ’র অফিস বেয়ারারগণ এবং পরিচালকগণ উপস্থিত ছিলেন।
পোশাক শ্রমিকদের উদ্দেশে ফারুক হাসান বলেছেন, আপনাদের অবদানেই পোশাক শিল্প বর্তমান পর্যায়ে আসতে পেরেছে। এমন কিছু করবেন না, যাতে শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, ক্রেতাদের আস্থা বিনষ্ট হয়। ক্রেতারা শিল্প থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে আর আপনারা কর্মহীন হয়ে পড়বেন। এটা কাম্য নয়।
বিজিএমইএ’র সভাপতি বলেন, যখন ন্যূনতম মজুরি নিয়ে সরকার কাজ করছে, ঠিক তখন আমাদের শান্ত ও নিরীহ শ্রমিক গোষ্ঠীকে উস্কানি দিয়ে অশান্ত করা হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে বহিরাগতদের উস্কানিতে কিছু পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা কাজ না করে কারখানা থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন, কারখানা ভাঙচুর করছেন। ফলে, অনেক উদ্যোক্তা বাধ্য হচ্ছেন কারখানা বন্ধ করে দিতে, যা অনভিপ্রেত।
তিনি বলেন, বিজিএমইএ’র সদস্য প্রতিষ্ঠান এবিএম ফ্যাশন লিমিটেডে অগ্নিসংযোগের ঘটনা মালিকদের সকল প্রচেষ্টাকে হতোদ্যম করে দেয়। গত ২৬ অক্টোবর এবিএম ফ্যাশন ছুটি দেওয়ার ৩ ঘন্টা পর বহিরাগত কিছু সন্ত্রাসী কারখানা ভাঙচুর করে। গতকাল বেলা ১২টায় কারখানা ছুটি দেওয়ার পর কিছু বহিরাগত সন্ত্রাসী হাতুড়ি, শাবল দিয়ে প্রধান ফটক ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে কর্মকর্তাদের জিম্মি করে প্রায় ২ ঘণ্টা তাণ্ডব চালায় এবং কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে কারখানার শ্রমিক মারা যায়, যা খুবই দুঃখজনক। এমন পরিস্থিতিতে পোশাক কারখানাসহ সকল ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠানে জান-মালের নিরাপত্তা দিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে অহ্বান জানাই।
পোশাক শিল্প মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যদি কোনো কারখানায় শ্রমিকরা নতুন মজুরির দাবিতে কাজ না করে আন্দোলনের নামে কারখানা থেকে বের হয়ে যান, তাহলে মালিকরা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন।
লিখিত বক্তব্যে বিজিএমইএ সভাপতি জানান, ২০২৩ সালের প্রথম ৮ মাসে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে সামগ্রিক পোশাক আমদানি আশঙ্কাজনক হারে কমেছে এসেছে। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক পোশাক আমদানি ভ্যাল্যুতে কমেছে ২২.২৭ শতাংশ, যেখানে বাংলাদেশ থেকে তাদের আমদানি কমেছে প্রায় ২১.৭৭ শতাংশ । অন্যদিকে, পরিমাণের দিক থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক আমদানি ২৬.৮০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ থেকে কমেছে ২৯.১০ শতাংশ। অর্থাৎ পরিমাণের দিক থেকে এই ৮ মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি এক তৃতীয়াংশ কমে গেছে। একই সময়ে ইউরোপের বৈশ্বিক আমদানি কমেছে ৯.৬১ শতাংশ এবং বাংলাদেশ থেকে কমেছে ১৩.৭১ শতাংশ। পাশাপাশি, পরিমাণ অনুযায়ী সমগ্র বিশ্ব থেকে আমদানি কমেছে ১৪.৬৪ শতাংশ এবং বাংলাদেশ থেকে কমেছে ১৫.০৭ শতাংশ।
গত ৫ বছরে পোশাক শিল্পের উন্নয়ন সম্পর্কে ফারুক হাসান বলেন, আমাদের পোশাক শিল্প এখন বিশ্বের রোল মডেল। আমাদের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টায় বর্তমানে পোশাক খাতে লিড কারখানার সংখ্যা ২০৩টি। এর মধ্যে প্লাটিনাম রেটেড ৭৩টি, গোল্ড রেটেড ১১৬টি এবং ১০টি সিলভার রেটেড। বিশ্বব্যাপী সবোর্চ্চ রেটেড ১৫টির মধ্যে ১৩টি লিড গ্রিন কারখানাই বাংলাদেশে অবস্থিত। আরও ৫০০টি কারখানা সাটিফিকেশনের জন্য পাইপলাইনে আছে। আলোচ্য সময়ে পোশাক শিল্পের ওপর ক্রেতাদের আস্থা অনেকখানি বেড়েছে।
পোশাক শ্রমিকদের উদ্দেশে বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, কোনো রকম উস্কানিতে আপনারা প্ররোচিত হবেন না। পোশাক শিল্পে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাবেন না। দায়িত্বের সাথে নিজ নিজ কাজ করুন। দেশের স্বার্থে উৎপাদনে আমাদেরকে সাহায্য করুন। এ শিল্পটা আমাদের সবার।
বাংলা গেজেট/বিএম
মন্তব্য করুন: