প্রকাশিত:
২৬ অক্টোবার ২০২৩, ১৮:৩৯
২৮ অক্টোবর পূর্ব ঘোষণা মোতাবেক রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরেই সমাবেশ করতে চায় জামায়াত। মতিঝিলে কিছুতেই জামায়াতকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না পুলিশের পক্ষ থেকে এমনটি জানানোর পর দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বৃহস্পতিবার বলেছেন, আগামী ২৮শে অক্টোবর মতিঝিল শাপলা চত্বরেই মহাসমাবেশ করবে জামায়াত। আর এই মহাসমাবেশ সফলে প্রশাসন এবং দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ( ২৬ অক্টোবর) মহাসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
লিখিত বক্তব্যে জামায়াত আমির বলেন, বাংলাদেশের সংকটময় এক কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমরা আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর মাত্র কিছু দিন পরই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। অথচ এখনও নির্বাচনের কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা পূর্ব শর্ত। কিন্তু সরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার কোনো চিন্তাই করছে না। দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ গোটা জাতি মনে করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। কারণ এর আগে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো দেশে-বিদেশে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। কিন্তু সরকার গণতন্ত্রকামী মানুষের সে দাবি পাশ কাটিয়ে যেনতেন প্রকারে একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিনা ভোটের সরকার দলীয় বিবেচনায় প্রশাসনকে ঢেলে সাজিয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কেএম হাসানকে বিএনপির লোক আখ্যা দিয়ে তার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না বলে তিনি আন্দোলন শুরু করেছিলেন যাতে তিনি কেয়ারটেকার সরকার প্রধানের দায়িত্ব নিতে না পারেন। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে বহু মানুষকে হত্যা করে দেশে এক ভয়াবহ অরাজকতা তৈরি করা হয়েছিল। জাতির প্রশ্ন দলীয় লোক বিবেচনায় বিচারপতি কেএম হাসানের অধীনে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না হলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে সম্ভব?
শাপলা চত্বরের সমাবেশ নিয়ে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীর ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে। অথচ জামায়াতে ইসলামীকে সভা-সমাবেশ ও মিছিল করতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসনের নিকট বারবার লিখিতভাবে আবেদন জানানো সত্ত্বেও প্রশাসন সভা-সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা না করে উল্টো বাধা দিচ্ছে। দেশে যাতে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হয়, সেজন্য আমিরে জামায়াতসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটক করে রেখেছে। এটা জাতির জন্য একটি অশনি সংকেত।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী তার সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী আগামী ২৮ অক্টোবর শনিবার রাজধানী ঢাকা মহানগরীর শাপলা চত্বরে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ বাস্তবায়নে সহায়তা চেয়ে পুলিশ কমিশনারের নিকট লিখিতভাবে অবহিত করেছে। পক্ষপাতদুষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘জামায়াতকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না।’ পুলিশের দায়িত্ব হল শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা, বাধা দেওয়া নয়। তার এই বক্তব্য অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক, এখতিয়ার বহির্ভূত ও বেআইনি। আমরা পক্ষপাত দুষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে রাজনৈতিক দলসমূহের সভা-সমাবেশ ও মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করা। মিছিল, মিটিং, সভা-সমাবেশ প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকার যাতে তারা প্রয়োগ করতে পারে, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করা পুলিশের দায়িত্ব। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি বিগত সময় অসংখ্যবার দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করার সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। এটি সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক। পক্ষপাত দুষ্ট ভূমিকা থেকে বের হয়ে আসার জন্য আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
গ্রেফতার নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে জামায়াতের এই জৈষ্ঠ নেতা বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি গুরুতর অসুস্থ এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দকে ২৫ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১টায় তার উত্তরার বাসা থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বেআইনিভাবে গ্রেফতার করেছে। আমরা অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করছি। সেই সঙ্গে আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ গ্রেফতার সব নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
তিনি বলেন, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবাধ, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা, আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের গ্রেফতার নেতাকর্মী এবং সম্মানিত ওলামা-মাশায়েখের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার দাবিতে আমরা আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশের কর্মসূচি ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছি। শান্তিপূর্ণ এই মহাসমাবেশে সুশৃঙ্খলভাবে সমবেত হয়ে এক দফা দাবি কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাস্তবায়নের আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি এবং সরকারের কোনো ধরনের উস্কানি, অসাংবিধানিক ও গণতন্ত্র বিরোধী অপতৎপরতায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আমরা দেশবাসী এবং সংগঠনের সর্বস্তরের জনশক্তির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমির আবদুর রহমান মুসা, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি রাজিবুর রহমান পলাশ প্রমুখ। সূত্র: যুগান্তর
বাংলা গেজেট/বিএম
মন্তব্য করুন: