প্রকাশিত:
২২ অক্টোবার ২০২৩, ১১:১৯
চলতি একাদশ জাতীয় সংসদের ২৫তম অধিবেশন শুরু হচ্ছে আজ রোববার বিকেল ৪টায়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে গত ৫ অক্টোবর সংসদের এই অধিবেশন ডেকেছেন। এটিই চলমান একাদশ সংসদের শেষ অধিবেশন। এরপর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আর অধিবেশন বসবে না।
সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২৪তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে বলেছেন, ‘অক্টোবরে চলতি সংসদের আরেকটি অধিবেশন বসবে, সেটাই হবে শেষ অধিবেশন। এরপরই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে।’
সংবিধান মোতাবেক সংসদের একটি অধিবেশন শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে পরবর্তী অধিবেশন ডাকার বাধ্যবাধকতা আছে। সংসদের ২৪তম অধিবেশন গত ৩ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর শেষ হয়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল কিংবা সাংবিধানিক সময়সীমার আগে ৬০ দিন সময় না থাকায় মাত্র ৩৭ দিনের মাথায় পরবর্তী (২৫তম) অধিবেশন ডেকেছেন রাষ্ট্রপতি। শেষ এই অধিবেশনটি ঠিক কত দিন চলবে, সেটি নির্ধারণ হবে আজ অধিবেশন শুরুর আগে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠেয় সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে। কমিটির সভাপতি ও সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে কমিটির সদস্য, সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অংশ নেবেন।
প্রসঙ্গত, বিগত দশম সংসদের শেষ বৈঠক বসেছিল ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর। ঐ বছরের ৮ নভেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন এবং ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ হয়। জানা গেছে, চলতি সংসদের এবারের অধিবেশনের শেষ বৈঠকও বসতে পারে ২৬, ২৯, ৩০ বা ৩১ অক্টোবরের যে কোনো দিন।
সংসদের আজকের বৈঠকের শুরুতে এবারের অধিবেশনের জন্য সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন দেবেন স্পিকার। এরপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য শাহজাহান কামাল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য উকিল আব্দুস সাত্তার গত ৩০ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করায় তাদের ওপর শোক প্রস্তাব আনা হবে। শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শেষে অধিবেশন মুলতুবি করবেন স্পিকার। রেওয়াজ অনুযায়ী, চলতি সংসদের কোনো সদস্য মারা গেলে তার জন্য আনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শেষে সংসদের বৈঠক মুলতুবি করা হয়।
শেষ অধিবেশনে পাশ ও উত্থাপনের অপেক্ষায় দুই ডজন বিল
এবারের অধিবেশনে উত্থাপন ও পাশের জন্য প্রায় দুই ডজন বিল অপেক্ষমাণ রয়েছে। এর মধ্যে বেশকিছু বিল পাশ হবে বলে জানা গেছে। তবে উত্থাপিত কোনো বিল পাশ না হলে এবং চলতি সংসদের আর কোনো অধিবেশন না বসলে সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে তামাদি হয়ে যাবে।
সংসদ সচিবালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, বিল পাশে রেকর্ড গড়ে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর শেষ হয় দশম সংসদের সর্বশেষ বৈঠক। যা ছিল ঐ সংসদের ২৩তম অধিবেশন। মাত্র আট কার্যদিবসের সর্বশেষ ঐ অধিবেশনে ১৯টি বিল পাশ হয়েছিল। এছাড়া ঐ অধিবেশনে ডজনখানেক বিলের রিপোর্ট উপস্থাপিত হয়। সব মিলিয়ে ঐ অধিবেশনে বিল পাশের হুড়োহুড়ি লক্ষ করা গেছে। কোনো কোনো বিল সংসদে উত্থাপনের পর মাত্র ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির রিপোর্টের জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া, প্রায় প্রতিদিন রাতে সম্পূরক কার্যসূচি এনে বিলের রিপোর্ট উপস্থাপন এবং বিল পাশ হতেও দেখা গেছে। সংসদ অধিবেশন মুলতুবি হওয়ার পর রাত ১১টায় স্থায়ী কমিটির বৈঠক বসার ঘটনাও ঘটেছিল তখন।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক
সংসদের আজকের বৈঠক শেষে সন্ধ্যা ৬টায় সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভাকক্ষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের ৮ম সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ সভায় এমপিদের দিকনির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সেক্রেটারি ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী আওয়ামী লীগ দলীয় এমপিদের যথাসময়ে সভায় উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। এটা হতে পারে চলতি একাদশ সংসদের আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের শেষ সভা। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক হয়েছিল।
১ নভেম্বর নির্বাচনকালীন ৯০ দিন গণনা শুরু
সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে; এবং মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’
চলতি একাদশ সংসদের প্রথম বৈঠক বসেছিল ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সেই হিসাব অনুযায়ী, বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি। বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ বহাল রেখে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে এর পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যে কারণে, আগামী ১ নভেম্বর থেকে সেই ৯০ দিন গণনা শুরু হবে।
৫ নভেম্বর উপনির্বাচনে জয়ী দুই এমপি অধিবেশন পাবেন না
আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে যারা জয়ী হবেন তারা মাত্র দুই মাসের জন্য চলতি একাদশ সংসদের সদস্য হিসেবে শপথ নিতে পারলেও কোনো অধিবেশনে যোগদানের সুযোগ পাচ্ছেন না। কারণ, এর আগেই চলতি সংসদের অধিবেশন শেষ হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, গত ৩০ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম শাহজাহান কামাল এবং স্বতন্ত্র এমপি উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঞার মৃত্যুতে যথাক্রমে লক্ষ্মীপুর-৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন দুটি শূন্য হয়। চলতি সংসদের মেয়াদ (২৯ জানুয়ারি) শেষ হওয়ার আগে ৯০ দিনের বেশি সময় থাকায় সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে নির্বাচন কমিশনকে এই দুটি উপনির্বাচন করতে হচ্ছে। সূত্র: ইত্তেফাক
বাংলা গেজেট/বিএম
মন্তব্য করুন: