প্রকাশিত:
২৭ সেপ্টেম্বার ২০২৩, ১৪:৩২
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর, কিন্তু কিছু গোষ্ঠী তিক্ততা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে এবং বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যাচার করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।
নিউইয়র্কের বাঙালি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসে সোমবার বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, যুক্তরাষ্ট্র শাখা আয়োজিত এক মতবিনিময়সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আমরা যে নীতি ও মূল্যবোধে বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্র সেই নীতি ও মূল্যবোধে বিশ্বাস করে। বাংলাদেশ হচ্ছে সেই দেশ, যেখানে গণতন্ত্রের জন্য আমরা লড়াই-সংগ্রাম করেছি। আমরা জনগণের ভোটে জয়লাভ করলেও ১৯৭১ সালে আমাদের সরকার গঠন করতে দেয় নাই। বরং আমাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছিল; আর তখন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।’
ড. মোমেন বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলাম গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। এ জন্য স্বাধীনতাযুদ্ধে আমাদের ত্রিশ লাখ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। পৃথিবীর কোথাও গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য এত অল্প সময়ে এত মানুষ আত্মত্যাগ করেনি। আমরা পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র জাতি, যারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য এত বড় ত্যাগ স্বীকার করেছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও মানবাধিকারে বিশ্বাস করে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের মতের ও চিন্তার মিল আছে। নীতিগতভাবে আমাদের দুই দেশের মধ্যে মিল রয়েছে। তবে তাদের কোনো কোনো ব্যক্তিবিশেষ হয়তো আমাদের উন্নয়ন পছন্দ করছেন না, তাদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কেউ বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যাচার করলে তাদের মিথ্যাচারকে চ্যালেঞ্জ করতে দলমত নির্বিশেষে প্রবাসী বাংলাদেশিদের রুখে দাঁড়াতে আহ্বান জানান তিনি।
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সংশোধনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে যেসব ভালো পরামর্শ দেয়, আমরা সেটা গ্রহণ করি। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করে আর আমরাও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু আমাদের দেশের কিছু লোক আছে, যারা নির্বাচন বয়কট করতে চায়, নির্বাচন ভয় পায়। নির্বাচন বানচাল করতে তারা সবরকমের চেষ্টা করে থাকেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে আমরা ২৬তম বড় অর্থনীতিতে পরিণত হব। আমাদের রয়েছে ১৭ কোটি মানুষ, তাই আমাদের নিজস্ব বাজারও অনেক বড়। সে জন্য আমাদের দেশের প্রতি অনেকেরই আগ্রহ বেড়েছে। কারণ আমাদের মাথাপিছু আয় ৫ গুণ বেড়েছে। দারিদ্র্যের হার অর্ধেকের বেশি কমেছে। এসবই শেখ হাসিনার সরকারের লক্ষ্যভিত্তিক পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কারণে সম্ভব হয়েছে।’
ড. মোমেন আরও বলেন, ‘আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। মাছ ও সবজি উৎপাদনে আমরা বিশ্বে তৃতীয়। চাল উৎপাদনে আমরা বিশ্বে চতুর্থ। আমাদের কৃষিজমি অনেক কমে গেছে, কিন্তু খাদ্য উৎপাদন চারগুণ বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। তবে আমরা এই উন্নতি করছি বলে অনেকেরই গাত্রদাহ হচ্ছে। আমাদের দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অনেকেরই পছন্দ হচ্ছে না। কারণ এখন আমরা বিদেশির পয়সায় চলি না। আর আমরা উন্নতি করেছি বলে অনেকের আগ্রহ বেড়েছে। অনেকেই আমাদের কাছে টানার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা কারও লেজুরবৃত্তি করতে চাই না। আমরা একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। আমরা বিজয়ের জাতি। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের একটি সুন্দর পররাষ্ট্রনীতি দিয়ে গেছেন। আর এই নীতি হচ্ছে— “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়।” আমরা এই নীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা একটা ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করি।’
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময়সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সভাপতি ড. মসিউর মালেক। অন্যদের মধ্যে কবি ও সাহিত্যিক ফকির ইলিয়াস, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আব্দুল খালেক মিয়া, বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার নিউইয়র্ক প্রতিনিধি লাভলু আনসার, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন যুক্তরাষ্ট্র শাখার নেতৃবৃন্দ এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সূত্র: যুগান্তর
বাংলা গেজেট/বিএম
মন্তব্য করুন: