প্রকাশিত:
২৩ সেপ্টেম্বার ২০২৩, ১২:৪৭
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র কয়েকমাস। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্যরা নির্বাচন সামনে রেখে আরও জোরালো আন্দোলন শুরু করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ভিসা বিধিনিষেধ শুরু করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে জানান, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা প্রদানে দায়ী ব্যক্তি বা এর সঙ্গে জড়িত তাদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ শুরু করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সরকার ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরাও থাকবেন বলে ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
ম্যাথিউ মিলার জানান, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে, এই নীতির আওতায় কারা করা নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন, তাদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে মিলার বলেছেন, যারা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে জানানো হবে। এর মধ্যে দিয়ে গেলো এপ্রিল মাসে বাংলাদেশকেন্দ্রিক যে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করা হয়েছিলো, সেটির প্রয়োগ শুরু করলো যুক্তরাষ্ট্র।
যাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে সেসব ব্যক্তি তা তাদের পরিবারের সদস্যরাও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবে না বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আরও বলা হয়, ভবিষ্যতে আরও কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া ক্ষুণ্ন করা বা এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেলে তারাও ভিসা নীতির আওতায় পড়তে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেছেন, গত ২৪ মে ভিসা নীতি ঘোষণা করার পর থেকে সার্বিক ঘটনা আমরা খুব কাছ থেকে দেখেছি। সাক্ষ্য-প্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছি।
তিনি বলেন, এ নীতির উদ্দেশ্য হলো– সহিংসতা কমানো এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করে এমন যেকোনো কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের গঠনমূলক অংশীদার হওয়া।
এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতির পর ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ভিসা বিধিনিষেধ প্রয়োগের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে জানান, ভিসানীতির বিষয় নতুন না। এটা নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু আছে বলে মনে করি না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তে দলের ওপর কোনো চাপ পরবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে শাম্মী আহমেদ বলেন, আমাদের ওপর চাপ কেন পড়বে। কোনো চাপ নেই। কারণ আমাদের একটাই কথা আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। আমরা সেটাই করব।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেছেন, বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে তিন মাস আগে গত মে মাসে ভিসানীতি ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তাদের কাছে এখন মনে হয়েছে যে বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নেই। এ জন্যই তারা ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের কারণে আজ বাংলাদেশ মার্কিন এই ভিসানীতির মধ্যে পড়ল বলেও জানান এই বিএনপি নেত্রী।
এর আগে, গত ২৪ মে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না দেশটি।
বাংলা গেজেট/এমএএইচ
মন্তব্য করুন: