প্রকাশিত:
৯ সেপ্টেম্বার ২০২৩, ২২:৫২
সারা দেশে চলতি বছরের আটমাসে (জানুয়ারি-আগস্ট) স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৩৬১ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে ২১৪ জন ছাত্রী এবং ছাত্র ১৪৭ জন। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্কুলগামী শিক্ষার্থী। যার সংখ্যা ১৬৯ জন। কলেজের ৯৬ শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় ৬৬ এবং মাদরাসার ৩০ শিক্ষার্থী রয়েছেন।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন অনলাইনে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে “শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ক্রমবর্ধমান: কোন পথে সমাধান?”-শীর্ষক সমীক্ষায় এসব তথ্য জানান।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (ইন্টেলিজেন্স প্ল্যানিং অ্যান্ড রিসাচর) ফরিদা ইয়াসমিন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক (সাইকিয়াট্রি) ডা. হেলাল উদ্দীন আহমদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. শহীদুল ইসলাম এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ প্রমুখ।
আঁচল ফাউন্ডেশন জানায়, আট মাসে সারা দেশের মোট ৮টি বিভাগে আত্মহত্যাকারী স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে যা ৩১.৩০ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪.১০ শতাংশ এবং খুলনা বিভাগে ১৩ শতাংশ। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে ১১.৯০ শতাংশ, রংপুরে ৮.৯০ শতাংশ, বরিশালে ৮.৩০ শতাংশ, ময়মনসিংহে ১০ শতাংশ এবং সিলেটে ২.৫ শতাংশ স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থী রয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন ঢাকা শহরের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও বেড়ে উঠার সহায়ক পরিবেশ না থাকার কারণে এখানে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি।
লিখিত বক্তব্যে বিস্তারিত তুলে ধরেন আঁচল ফাউন্ডেশনের সদস্য ফারজানা আক্তার লাবনী। তিনি বলেন, আত্মহত্যার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে নারী শিক্ষার্থীরা। ৩৬১ জন শিক্ষার্থীর ৫৯.৩০ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী গত আট মাসে আত্মহত্যা করেছে।
অপরদিকে ৪০.৭০ শতাংশ পুরুষ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। নারী শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার কারণ বিবেচনায় দেখা যায় ২৬.৬০ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী অভিমান, প্রেমঘটিত কারণে ১৮.৭০ শতাংশ, মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে ৮.৪০ শতাংশ, পারিবারিক বিবাদের কারণে ৯.৮০ শতাংশ, ৫.১০ শতাংশ শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির কারণে এবং পড়াশুনার চাপ ও ব্যর্থতার কারণে ১২.৬০ শতাংশ আত্মহত্যা করেছে।
আত্মহত্যাকারীদের বয়স ভিত্তিক বিবেচনায় দেখা যায় সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা।
৬৭.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ছিলো এই বয়সী। এদের মাঝে নারী শিক্ষার্থী ছিলো ১৫৯ জন। অন্যদিকে পুরুষ শিক্ষার্থী ৮৪ জন আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।
আত্মহত্যার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বলেন, “এর আগের আত্মহত্যার ডাটাগুলোতে আমরা দেখেছিলাম আত্মহত্যার পিছনে প্রেমঘটিত সম্পর্কের দায় বেশি থাকে। এবারে ভিন্ন তথ্য সামনে আসছে। আত্মহত্যার পিছনে মূল ভূমিকা রাখছে অভিমান। অভিমানের কারণে আত্মহত্যা পরিবারের সাথে সন্তানদের সম্পর্ক কতটুকু মজবুত তা নিয়ে চিন্তার উদ্বেক করে।
গতবছর আত্মহত্যার পিছনে করোনা একটা বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছিল। এ বছর করোনা না থাকলেও আত্মহত্যার খুব একটা হেরফের হয় নাই। এটা আমাদেরকে আশঙ্কিত করে তুলে।” সূত্র: কালের কণ্ঠ
বাংলা গেজেট/বিএম
মন্তব্য করুন: