[email protected] শুক্রবার, ২৭শে ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ই পৌষ ১৪৩১

ইসলামী ব্যাংকের এত শেয়ার কিনলো কে?

অর্থনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত:
৭ সেপ্টেম্বার ২০২৩, ০৩:৩৭

ফাইল ছবি

হঠাৎ শেয়ারবাজারের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির বড় অঙ্কের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। একদিনেই কোম্পানিটির ১৬ কোটির বেশি শেয়ার হাতবদল হয়। যার বাজার মূল্য ৫০০ কোটি টাকার বেশি। আর লেনদেন হওয়া এই শেয়ারের পরিমাণ কোম্পানিটির মোট শেয়ারের প্রায় ১০ শতাংশের সমান। মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে শেয়ার লেনদেন হয়। ফলে বিষয়টি দিনভর শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আলোচনার খোরাক ছিল। তবে কে বা কারা এই শেয়ার বিক্রি করেছেন এবং কিনেছেন তার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

গুঞ্জন ছড়িয়েছে সৌদি আরবের কোম্পানি আরবসাস ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিস্ট এজেন্সি এই শেয়ার বিক্রি করেছে এবং কিনেছে চট্টগ্রামভিত্তিক দেশের শীর্ষ পর্যায়ের একটি শিল্পগ্রুপ। আরবসাস ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিস্ট এজেন্সির কাছে ইসলামী ব্যাংকের যে পরিমাণ শেয়ার ছিল মঙ্গলবার সিএসইর মাধ্যমে লেনদেন হওয়া শেয়ারের সংখ্যাও তারই সমান।

এদিন সিএসইতে মোট ৫৩৩ কোটি ১৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫২৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকার। অর্থাৎ বাজারটিতে মোট যে লেনদেন হয়েছে তার ৯৮ দশমিক ৩১ শতাংশই ইসলামী ব্যাংকের।

সিএসই’র মাধ্যমে ব্যাংকটির মোট ১৬ কোটি ৯ লাখ ৯৭ হাজার ৬৬৮টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ইসলামী ব্যাংকের মোট শেয়ারের ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এই শেয়ারের পুরোটাই ৩২ টাকা ৩০ পয়সা করে লেনদেন হয়।

এই বিপুল পরিমাণ শেয়ার কে বা কারা বিক্রি করলো এবং কারা কিনলো জানতে চাইলে সিএসই’র প্রধান রেগুলেটরি কর্মকর্তা (সিআরও) মোহাম্মদ মাহাদী হাসান জাগো নিউজকে বলেন, কে বা করা এই শেয়ার লেনদেন করেছে তা বলতে পারবো না। লেনদেন দুটি পক্ষের মধ্যেও হতে পারে অথবা একাধিক পক্ষের মধ্যেও হতে পারে।

তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার স্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। পাবলিক মার্কেটে যেভাবে লেনদেন হয়, সেভাবেই হয়েছে। এখানে অস্বাভাবিক কিছু ছিল না।

তবে সিএসই’র এক সদস্য বলেন, সিএসইতে যে লেনদেন হয়েছে, তার ৯৮ শতাংশের বেশি ছিল ইসলামী ব্যাংকের। এটি কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এখানে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কোনো বিশেষ গ্রুপের মধ্যে এই লেনদেন হয়েছে। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে সৌদি আরবের কোম্পানি আরবসাস ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিস্ট এজেন্সি শেয়ার বিক্রি করেছে এবং চট্টগ্রামের একটি শিল্পগ্রুপ কিনেছে।

ডিএসইর এক সদস্য বলেন, সিএসইতে সাম্প্রতিক সময়ে ৫-১৫ কোটি টাকার লেনদেন হতে দেখা গেছে। সেখানে হুট করে ৫৩৩ কোট টাকার লেনদেন হওয়া স্বাভাবিক বিষয় না। হয়তো দুটি পক্ষের মধ্যে এই শেয়ার হাতবদল হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বড় অঙ্কের শেয়ার হোল্ড করে এমন কোনো বিনিয়োগকারী হয়তো শেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন এবং যারা ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নিতে চান তারা কিনে নিয়েছেন।

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রিজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, সিএসই’র মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকের বড় অঙ্কের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বিষয়টি আমরা ক্ষতিয়ে দেখবো। এই লেনদেনে যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, আমাদের সার্ভিলেন্স বিষয়টি দেখবে। যদি কোনো উদ্যোক্তা বা পরিচালক শেয়ার বিক্রি করে এবং ঘোষণা না দেয় তাহলে ব্যবস্থা নেবো। আবার যদি ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার লেনদেন হয় বা কোনো ধরনের অনিয়ম হয়, সেটিও আমরা দেখবো।

২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন হয়। ওইদিন রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে পর্ষদ সভায় ব্যাংকটির পর্ষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে শেয়ার কিনে ব্যাংকটিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে চট্টগ্রামভিত্তিক দেশের শীর্ষ পর্যায়ের একটি শিল্পগ্রুপ। নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে গ্রুপটি নিজেদের পছন্দের লোক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসায়।

এরপর দেশি-বিদেশি বিভিন্ন শেয়ারধারী ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ছেড়ে দেয়। সম্প্রতি সৌদি আরবের কোম্পানি আরবসাস ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিস্ট এজেন্সির কাছ থেকে ব্যাংকটির পরিচালনা ও মালিকা ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা আসে। ইসলামী ব্যাংকের ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক সৌদি আরবের কোম্পানিটি।

চলতি বছরের আগস্টের শুরুর দিকে ইসলামী ব্যাংক থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) চিঠি দিয়ে জানানো হয়, আরবসাস ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিস্ট এজেন্সি গত ৫ জুলাই চিঠি দিয়ে জানিয়েছে যে তারা ব্যাংকের পরিচালক পদে থাকবে না। এরপর ২৬ জুলাই পরিচালনা পর্ষদের সভায় তা অনুমোদিত হয়।

ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলার সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার কল দিলে তিনি তা রিসিভ করেন। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।

অপরদিকে ব্যাংকটির কোম্পানি সচিব জে কিউ এম হাবিবুল্লাহর মোবাইল একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

 

 

বাংলা গেজেট/এমএএইচ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর