[email protected] শুক্রবার, ১লা নভেম্বর ২০২৪, ১৭ই কার্তিক ১৪৩১

নতুন পরিকল্পনায় বিএনপি

এবার আন্দোলনে আসতে পারে ঘেরাও কর্মসূচি

রাজনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত:
৭ সেপ্টেম্বার ২০২৩, ০২:৫৬

ফাইল ছবি

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের হাওয়া শুরুর আগেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় জানাতে চায় বিএনপি। সেই লক্ষ্যে ১২ জুলাই রাজধানীর পল্টনে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে একদফা কর্মসূচি দেয় দলটি। এতে থেমে থাকেনি টানা তিনবারের ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার। তবে জুলাই-আগস্ট দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে মাঠ গরম থাকলেও বর্তমানে উভয়েই নীরব। ঝড়ের পূর্বাভাস হিসেবে জানা গেছে, দীর্ঘ সময়ের শেঁকড় গাড়া আ’লীগ সরকারকে হটাতে আন্দোলনের নতুন ছক আঁটছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ঘেরাও কর্মসূচি আসতে পারে।

আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনিছুর রহমান। এ নিয়ে বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী দলগুলোর নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। দলটির হেভিওয়েট নেতারা মনে করেন নির্বাচনী তোড়জোড় শুরুর আগেই যা করার করতে হবে। বুধবার (৬ সেপ্টম্বর) বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আন্দোলন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র।

চুড়ান্ত আন্দোলনের রুপ নিয়ে এখনই মুখ খুলতে রাজী নয় বিএনপি নেতারা। তারা মনে করে, আন্দোলনের সময়ে সরকারের ওপর সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ আরো বাড়াতে হবে। শুধুমাত্র বিএনপি মাঠে নামলে সফল নাও হতে পারে। তাই ছোট-বড় শরিকদের মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘কর্মসূচির ধরণ পরিবর্তন হবে। নির্বাচন কমিশন, গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সচিবালয়সহ চূড়ান্ত ধাপে এসব প্রতিষ্ঠান ঘেরাও কর্মসূচির সম্ভাবনাও বাইরে রাখছি না। সরকার কি পরিমাণ উস্কানি দেয় এবং কতটা আগ্রাসী মনোভাব নেয়; তার ওপর নির্ভর করে সরকারের অবৈধ ক্ষমতার উৎস কোন কোন জায়গায় আমরা আঘাত করব।’

কৌশলী জামায়াত নিশ্চুপ, বিএনপিতে অস্থিরতা
গত ২৫ ও ২৬ আগস্ট দেশব্যাপী কালো পতাকা গণমিছিলের কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এরপর যুগপৎ আন্দোলনের আর নতুন কোনো কর্মসূচি দেখা যায় নি। বিএনপি কি চায় তা শরিকদের কাছেও অস্পষ্ট। কারণ তারা বলছেন, গত ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ ও ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচির পর বিএনপি ঝিমিয়ে গেছে। ক্ষমতা প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে সমাবেশ করলেও চুড়ান্তু আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে দলছি।

এ নিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘যারা অধৈর্য হয়ে গেছে, আমার কাছে মনে হয় তারা ঘরে কিছুদিন বিশ্রাম নিক।’

চুড়ান্ত আন্দোলন কবে? এমন প্রশ্নে এই নেতা বলেন, ‘চুড়ান্ত আন্দোলন হয়ে যাবে। সরকারই চুড়ান্ত আন্দোলন করে দিবে। আমাদের বেশি পরিশ্রম করা লাগবে না। প্রতিদিন যেভাবে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, নিম্মস্তরের নেতা-কর্মীরা যেভাবে হুংকার দেয় তাতেই বোঝা যায় তাদের গদি বারবার কেঁপে উঠছে। কাঁপাকাঁপির মধ্যে এমন কোন খারাপ কাজ করে বসবে তাতে আমাদের আর বলে দিতে হবে না কবে আন্দোলন করব।’

সংশয়কে উড়িয়ে দিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন,‘ আমার কাছে কোন টাইম-ফ্লুয়েম নাই। আন্দোলনের গতিপথ কখন কোথায় কিভাবে পরিবর্তিত হবে এটা আগেভাবে সময় নির্ধারণ করে বলা যায় না। আমরা কর্মসূচির মধ্যে আছি। কর্মসূচির মধ্যে দিয়েই সবকিছু হবে।’

যুগপৎ আন্দোলনে থাকতে পারে জামায়াত
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার বিরোধী আন্দোলনে জামায়াতকে এড়িয়ে চললেও গোপণ সংকেত চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। যুগপৎ চুড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচী নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা এখনো করেনি বিএনপি। বিশ দলীয় জোট ভেঙ্গে গঠিত নতুন কোনো জোটেও নেই জামায়াত। যদিও দুই দলেরই আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের পতন ঘটানো।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বিএনপি এককভাবেই আন্দোলন করছে। ফরমাল ইনফরমাল কোনো ডিসকাশনই (আলোচনা) আমাদের জামায়াতের সাথে নাই। আমরা যে লিয়াজো কমিটি করেছি, লিয়াজো কমিটি সরাসরি যেসব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করছে, তারাই আমাদের সাথে আছে যুগপৎ আন্দোলনে আছে।’

অন্যদিকে একই আভাস জামায়াতের। জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাকদ মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, জামায়াতের ভূমিকা হলো আন্দোলনের সঙ্গে থাকা। যুগপৎ আন্দোলনে আমরা আছি। আমরাতো সবাই একমত হয়েছি যে আমরা যুগপৎ আন্দোলন করবো, জোট আর থাকবে না।

আন্দোলন দমাতে মামলার পাহাড়
বিএনপির পক্ষ থেকে বরাবরই অভিযোগ আন্দোলন দমাতে একাধিক মামলা দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে হয়রানিমূলক মামলা সরকারের হাতিয়ার হিসেবেই দেখছে বিএনপি।

দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে গত প্রায় ১৪ বছরে ১ লাখ ৪১ হাজার ৯৩৪টি মামলায় ৪৯ লাখ ৪০ হাজার ৪৯২ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গত এক মাসে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীসহ সারা দেশে ৩৩১টি মামলায় আসামি করা হয় ১৩ হাজার ৯৩০ জনকে। এ সময়ে অন্তত দেড় হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

দলটির সূত্র বলছে, বর্তমানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধেই মামলা রয়েছে ৯৩টি। সর্বোচ্চ ৪৫১টি মামলা হয়েছে দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ৭টি, জমিরউদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে ৪টি, মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ৪৮টি, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ৩৬টি, নজরুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে ৬টি, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৬টি, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বিরুদ্ধে ৯টি, সেলিমা রহমানের বিরুদ্ধে ৪টি ও সালাহউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে ৬টি মামলা রয়েছে।

এসব মামলা বিষয়ে বিএনপির এক হেভিওয়েট নেতা বলেন, ‘পুরনো আর নতুন মামলার গতি বেড়েছে মানে সরকারের গতি কমিয়ে ফেলেছে। কারণ সরকারের যেহেতু দায়বদ্ধতা নেই, নিজের উপর আস্থা নেই সেকারণেই পুলিশের একটা অংশকে ব্যবহার করে এসব কুকর্ম করছে। এরআগে ২০২৮ সালে একতরফা নির্বাচন করার জন্য এমনটা করেছিল। সেই নির্বাচন দেশে বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। আবারও তারা সেরকম নির্বাচনের দুঃস্বপ্ন দেখছে। কিন্তু সরকারকে যেতে হবে। মামলা তারা আরো লাখ-খানেক করুক। আমরা ভীত নই।’

 

বাংলা গেজেট/এমএএইচ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর