[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর ২০২৪, ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

দুর্নীতিবাজ আমলা ও সিন্ডিকেটের দখলে দেশ

মেহেদী হাসান

প্রকাশিত:
১১ আগষ্ট ২০২৩, ২২:৫৭

ফাইল ছবি

চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন সমসাময়িক সময়ের দুর্নীতি নিয়ে একবার বলেছিলেন, ‘এখনতো চারিদিকে রুচির দুর্ভিক্ষ! একটা স্বাধীন দেশে সুচিন্তা আর সুরুচির দুর্ভিক্ষ! এই দুর্ভিক্ষের কোন ছবি হয়না।’

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কিছুসময় আগে মালয়েশিয়া স্বাধীন হয়। তারা কোথায় পৌঁছে গেছে আর বাংলাদেশ কোথায় পড়ে আছে। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দিতে এসে দুর্নীতি ধ্রুব অবস্থায়।

এ সময়ে ক্ষমতার পালাবদল হয়ে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, সামরিক শাসন সব ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু দুর্নীতি বন্ধ হয়নি। এর পিছনে কি কারণ রয়েছে আর এর শিঁকড় কতদূর প্রথিত রয়েছে এ জট খোলা মামুলি ব্যাপার নয়।

আজকাল যারা ভাবছেন অমুক না থেকে অমুক থাকলে দেশে দুর্নীতি থাকত না। রাতের বেলা নদীর ধারে একলা বসে ভাবুন দেখি! মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, রাজনৈতিক দল, ক্ষমতা পালাবদল হয়। কিন্তু আসল ক্ষমতায় যারা তারা স্বপদে বহাল থাকেন। মন্ত্রী পরিবর্তন হলে মনে হয় এবার বুঝি কিছু একটা হবে।

বাস্তবতা হলো মন্ত্রী পরিবর্তন হলেও মন্ত্রনালয়ের দূর্নীতিবাজ আমলাদের পরিবর্তন হয়না। আর জনগণ তো আছেই চিলে কান নিয়ে গেলো অবস্থায়। কিছু হলেই মন্ত্রীদের পদত্যাগ চাই। ক্ষমতা পেয়ে মন্ত্রী চেয়ারে বসেছেন ৫ বছর কিন্তু আমালারা নিজের চেয়ারে বসে আছন দুই-তিন দশক ধরে। কলকাঠি তো তাদের হাতে।

আমরা সমালোচনা করি, ধুয়ে দিতে পারি শুধুমাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তিদের। রাজনৈতিক ব্যক্তিরাই বিভিন্ন শাসনামলে দুর্নীতির সমালোচনার প্রধান লক্ষ্য বস্তু। আমলাদের পরস্পর এক অপরের পিঠ চুলকানো সুখে বেশ ভালোই থাকেন।

নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার থেকে শুরু করে টিকিট কালোবাজারি, রিকসা চালকের ঘাম ঝরানো টাকা আমলাদের পকেটে যায়। কিন্তু নির্দিষ্ট একদিকে ( রাজনীতিকের) সমালোচনার আড়ালে এই আমলা পক্ষ সমালোচনার উর্ধে থেকে যায়। যাদেরকে আমরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই রাখি সারা জীবন।

জারজ সন্তানের পিতা থাকে না। ঠিক তেমনি এই আমলাদের রাজনৈতিক আদর্শগুরু থাকে না। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন তাদের তোষামোদে অজ্ঞান থাকে। খসখস করলে তেল মর্দন করতে এরা এতটাই পটু যে কোথায় তেল দিতে হয় তা মুখস্থ।

একটি মন্ত্রণালয়ে প্রধান কাজ করে আমলারা। বালিশ কান্ড, বটির দাম ১০ হাজার, পর্দার দাম লাখ টাকা, মেডিকেল যন্তপাতির ভুয়া ভাউচার সবকিছুর বুদ্ধিদাতা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমলারাই করে। কার কাছে কতো দিয়ে বাগে আনা যাবে আর সেটা সরকারি কোষাগার থেকে কিভাবে বের করতে হবে সব প্রস্তুত করে এরা।

এরপর সেই কাঙ্খিত ফাইল যায় দুর্নীতিগ্রস্থ মন্ত্রী এমপিদের কাছে। ঐ যে পরস্পর“ তুমি আমার আমি তোমার” থিওরিতে পাশ করিয়ে সাবাড় করার দায়িত্বেও থাকে আমলারা।

কোনদিন কেউ ভাবেনি পাশের বাড়ির চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তার ৮-১০ টা ফ্লাট কি করে হয়! গালি দিই সরকারকে, মন্ত্রীদেরকে আর দুর্নীতিগ্রস্থ টাকাওয়ালা আমলাকে বাসায় দাওয়াত দিয়ে রোস্ট খাওয়ায়, মেয়ের বিয়ে দিই। বাহ কি মানষিক কাঠামো আমাদের!

নির্বাচনে নিজের মনোনিত প্রার্থীকে বিজয়ী করা, এলাকায় মাদকের অদৃশ্য লাইসেন্স দেওয়া, বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ড, চাঁদাবাজি সবকিছুতে এই দুর্নীতিবাজ আমলাদের শক্তিশালী হাত রয়েছে। মাসিক মাসোয়ারা নিয়েই তো বউ, ছেলে, মেয়ে, শ্যলক, শ্যালিকার নামে সম্পদের পাহাড় গড়ে। জমির আইল কেটে পানি সেঁচলে কি আর লাভ হয়!

তবে এই আমলাদের মধ্যে ভালো কেউ নেই তা নয়। কিন্তু তারা স্রোতের বিপরীতে কতক্ষণ বাঁচবেন এটাই অপেক্ষা। সবকিছুর আড়ালে থাকে এই সিন্ডিকেট যারা কোন প্রকল্পের এস্টিমেশন থেকে শুরু করে প্রোকিউরমেন্ট, ইমপ্লিমেন্টেশন সবকিছুর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রক।

এমনকি অডিট ও এই আমলারা করেই সন্তোষজনক রিপোর্ট দেয়। রাস্তা তৈরির এক মাসের মধ্যে ভেঙে গেলে, রডের জায়গায় বাঁশ দিলেও এদের কাছে নাকি রিপোর্ট সন্তোষজনক হয়।

এই দানব আমলা সম্প্রদায়ের সাথে আবার সুন্দর মেলবন্ধন আছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের। দেশের ইতিহাসে পেঁয়াজের তিন সেঞ্চুরি; ধানের মন ৫০০ অপরদিকে চাউলের কেজি ৫০ টাকা; রোজার আগে চিনি, ডাল, ছোলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের দাম বাড়ানো সব কিছুতেই এরা তিমি মাছের মতো হা করে বসে আছে। জনগণের পথ একটাই ঐ জালে আটকা পড়া। এদের এতটাই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে যে যেকোন সময়ে একটা সরকারকেও সিংহাসনচ্যুত করতে পারে!

তাহলে এই সর্বগ্রাসী আমলাতন্ত্র আর সিন্ডিকেট মহলের লাগাম কিভাবে টানা যায়? এজন্য যা করতে হবে; আইন পরিবর্তন। অসৎ কর্মকর্তাদের শাস্তি হিসেবে বদলি সংস্কৃি তবাদ দিতে হবে। সরাসরি চাকরিচ্যুত করতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তার সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে।

যে চাকরিতে জয়েন করতে পারেনি সে স্বপ্ন দেখে বসুন্ধরায় ফ্লাট কিনবে। কারণ তার ধারণা সরকারি চাকুরী নিরাপদ। চাকুরী যায়না। এই ধারণা দুর্নীতিকে আরো প্রসার করেছে। যেখানে শাস্তির ভয় নেই সেখানে গিলে হোক আর কামড়ে হোক খেলেই হলো!

মন্ত্রীদের থেকে এই সিন্ডিকেটের ক্ষমতা কোন অংশে কম নয়। মন্ত্রীত্ব থেকে সরানোর যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে এই সিন্ডিকেটের। মন্ত্রীর পক্ষে একদল সমর্থক থাকলেও তার বিপক্ষে আছে আরেকদল। কিন্তু এই সিন্ডিকেটের ভেতর কোন দলাদলি নেই। এরা হলো রসুনের মতো। কেউ সিন্ডিকেট ভাঙতে চাইলে সে ভেঙে টুকরো হয়ে যায়, গায়েব হয়ে যায়।

উল্লেখ্য, এখানে সিস্টেমের বিরুদ্ধে বলা হয়েছে। কোন দল, মত বা কারো মনে আঘাত লাগলে তোর একান্ত নিজের। আপনাকে বলব: আপনিও মানুষ...

লেখক: মেহেদী হাসান সোহাগ

সভাপতি,  রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি । 

 

বাংলা গেজেট/এমএএইচ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর