প্রকাশিত:
১১ আগষ্ট ২০২৩, ২১:৫১
সাধারণত আমরা স্বাস্থ্য সুরক্ষা বলতে শারীরিক যত্নকেই বুঝে থাকি। ঠিকমত খাওয়া হচ্ছে কিনা, ঘুম হচ্ছে কিনা, বয়সের স্বাভাবিক বিকাশ হচ্ছে কিনা তা নিয়ে যেন চিন্তার শেষ নেই। সে তুলনায় একজন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে তেমন একটা মনোযোগ দেওয়া হয় না। কিন্তু শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও যত্নবান হওয়া প্রয়োজন।
আমরা সকলেই বলি ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’। কিন্তু স্বাস্থ্যের মূল উপাদান হলো শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক অবস্থার সামগ্রিক কল্যাণকর অবস্থা। একারণেই বলা যায় শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক স্বাস্থ্য যার আছে তাকেই মুলতঃ সুষম স্বাস্থ্য বলা হয়।
মার্কিন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্যালাপের সাম্প্রতিক প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক আবেগ প্রতিবেদন ২০২২’ অনুযায়ী, আগের বছরের চেয়ে ২০২১ সালে বেশি নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে বিশ্বের মানুষ। এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জন্য প্রাসঙ্গিক ও ভাবনার যে বিষয় তা হচ্ছে ইতিবাচক ও নেতিবাচক—উভয় অভিজ্ঞতারই মাত্রা বিবেচনায় সারা বিশ্বে সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে থাকা ১০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম রয়েছে।
১২২টি দেশের অধিবাসীদের ওপর পরিচালিত এই জরিপে নেতিবাচক অভিজ্ঞতা বলতে বোঝানো হয়েছে মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা বা দুঃখবোধ, রাগ-ক্ষোভ ও শারীরিক কষ্ট। এ বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে সপ্তম।
কেবল আফগানিস্তান, লেবানন, ইরাক, সিয়েরা লিওন, জর্দান ও তুরস্ক—এই ছয় দেশের বাসিন্দারা বাংলাদেশিদের চেয়ে বেশি নেতিবাচক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে।
জরিপে অংশ নেওয়ার আগের দিন ব্যক্তির পর্যাপ্ত বিশ্রাম, অন্যের কাছ থেকে সম্মানপ্রাপ্তি, হাসিমুখ, আনন্দ উপভোগ, উদ্দীপক কিছু শেখা বা করা প্রভৃতিকে ইতিবাচক অভিজ্ঞতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ইতিবাচকতায় ১২২ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৪। জর্দান, তিউনিশিয়া, নেপাল, মিসর, তুরস্ক, লেবানন ও আফগানিস্তান—এই সাত দেশের বাসিন্দারা ইতিবাচক অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে। (সূত্র : কালের কণ্ঠ, ৫ জুলাই ২০২২)
মনোবিদরা বলেন, শিশুর মনোজগৎ এবং বড়দের জগতের মধ্যে একটা বিপরীতমুখী চিন্তার প্রাচীর থাকে। এই প্রাচীর ভাঙার কাজ শিশুর নয়, বড়দেরই। বড়দের কাছে যে বিষয় 'অমূলক' বা 'কাল্পনিক' বলে মনে হয়, কোনো শিশুর কাছে সেটিই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে মনে হতে পারে। একইভাবে বড়রা শিশুর যে অনিচ্ছা বা ভয়কে 'অমূলক' বা 'হালকা' বলে ভাবেন তা হয়তো শিশুর কাছে ভীতিকর হতে পারে। তাই ছোট্ট শিশুর কোনো ইচ্ছা, ভীতি অথবা আগ্রহকে যথাসম্ভব গুরুত্ব দিতে হবে।
অনেক সময় ‘মানসিক স্বাস্থ্য’ আর ‘মানসিক রোগ’ বিষয় দুটোকে অনেকে এক করে ফেলেন। মানসিক রোগ বা মানসিক সমস্যা হচ্ছে মনের কোনো অস্বাভাবিক অবস্থা, যার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে হয়—কখনো ওষুধ নিয়ে চিকিৎসা করতে হয় আবার কখনো ‘সাইকোথেরাপি’ গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি সর্বজনীন। যার কোনো মানসিক সমস্যা বা মানসিক রোগ নেই, তাকেও তার মানসিক স্বাস্থ্যের পরিচর্যা করতে হয়, মনের যত্ন নিতে হয়, যাতে সে মানসিক রোগ বা সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পারে। সার্বিক সুস্বাস্থ্যের জন্য পরিবারের সবারই মনের যত্ন নিতে হবে। মানসিক রোগের অন্যতম কারণ হলো হতাশা (Depression)। প্রতিটি দেশের জনসংখ্যা প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ ডিপ্রেশনে ভোগে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৭ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে সাধারণত এ মানসিক সমস্যা হয়ে থাকে।
হতাশায় পড়ার একটি অন্যতম কারণ হলো নিজের ইচ্ছানুযায়ী কাজ করতে না পারা, তাই ডিপ্রেশন মুক্ত করতে নিজের ইচ্ছানুযায়ী কাজ করা উচিত। এছাড়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইউটিউব কোনো না কোনো কারণে সকলেই মোবাইল ফোনের ওপর আসক্ত হয়ে আছে। মোবাইল ফোনেই হচ্ছে অডিও, ভিডিও কলে কথা বলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সব কাজ। এমনকি একই রুমে দুইজন থাকে কিন্তু কোনো প্রকার কথোপকথন ছাড়াই কেননা তারা মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
গবেষণায় দেখা যায়, ভবিষ্যতে সবচেয়ে বেশি মানসিক রোগী হবে যারা অতিরিক্ত মোবাইল ফোন চালায়। আগে যেমন সবাই বন্ধুদের সাথে কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে দেখা করতো কিন্তু এখন তা মোবাইল ফোনেই করছে সকলেই। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া, খেলাধুলা করা, ভালো মানুষদের মধ্যে থাকা, তাদের সাথে কথা বলা সবই যেন মোবাইল ফোনের কারণে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
অতিরিক্ত মোবাইল ফোন এ কথা বললে হতে পারে নানা ধরনের সমস্যা। দেখা দিতে পারে মাথায় মাইগ্রেন ব্যাথার সমস্যা। মাইগ্রেন বা মাইগ্রেশানে বলতে বোঝায়, অতিরিক্ত পরিমানে মাথা ব্যাথা করা, ঘুম না হওয়া, কোনো কাজের ওপর মন না বসা। তাই বলা যায়, বেশি কথা মোবাইলে, কান যাবে অকালে।
আমরা সকলেই সেলফি তুলতে খুব পারদর্শী। কিন্ত এটা জানিনা যে, সেলফি তোলা থেকে হতে পারে মারাত্মক ক্ষতি। সেলফিড্রোম একটি রোগের নাম। যেই রোগ হতে পারে অতিরিক্ত সেলফি তোলা থেকে। তাই সেলফিড্রোম রোগ থেকে বাঁচতে অতিরিক্ত সেলফি তোলা থেকে দূরে থাকা জরুরি।
মনোবিদরা বলছেন, মোবাইল ফোন সকলের কাছে খুব প্রিয় হলেও এটি মানবদেহের মারাত্মক রকমের ক্ষতি করে। আমাদের সকলেরই উচিত মোবাইলের সুফল দিকগুলোর পাশাপাশি কুফল দিকগুলোও জানা। কেননা মোবাইল ফোনের ভালো দিকের পাশাপাশি খারাপ দিক গুলো জানলে সকলেই সতর্ক হতে পারবে। আর এই মানসিক রোগীর কারণ হলো মোবাইল ফোনের ওপর আসক্ত হওয়া। মোবাইল ফোনের ওপর বেশি আসক্ত হয়ে হতাশার সৃষ্টি হয় যার পরিণতি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। মোবাইল ফোনে বেশি আসক্ত হয় এবং বিভিন্ন ধরনের হতাশা, দুশ্চিন্তা সৃষ্টি হয় আর এসব কারণে আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে পারে। প্রতি বছর এই হতাশার কারণে আত্মহত্যার পরিমান বেড়েই চলেছে।
রাজশাহী কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আজমত আলী রকি বলেন, প্রথমে কাউন্সিলিং মনোবিজ্ঞানীর কাছে যাওয়া বা অনলাইনে টেলিফোনে কাউন্সিলিং করা। তাছাড়া পরিবারের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ বা ভালো বন্ধু যাদের সাথে সময় কাটানো। জীবনে সকল পরিস্থিতিতে সব মেনে নিতে হবে এমন পরিনতি তৈরি করা। আর এভাবে প্রায় প্রতিটি মানুষের হতাশা দূর করা সম্ভব।
মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় বিষয়ে আজমত আলী রকি বলেন, সবার আহে নিজের শরীরের যত্ন নেওয়া খুবই দরকার। এছাড়া নিজেকে ভালো মানুষের মধ্যে রাখতে হবে। নিজেকে বেশি সময় দিতে হবে এবং নিজেকে নিয়েই চিন্তাভাবনা করতে হবে। নিজের মনকে শান্ত রাখতে হবে।বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করা অতীব জরুরি। একঘেয়েমি দূরে রেখে চলতে হবে। মদ্যপান এবং অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য এড়িয়ে চলা প্রত্যেক মানুষের জন্য প্রয়োজন। এতে মস্তিস্কে আঘাত পাবেনা। ফলে চিন্তা-চেতনা দূর্বল হওয়া আশঙ্কা থাকেনা।
লেখক:
শিক্ষার্থী: মনোবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী ও সহযোগী সদস্য রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি (আররসিআরইউ)।
বাংলা গেজেট/এমএএইচ
মন্তব্য করুন: