[email protected] সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১

বাবা তোমাকে মনে পড়ে

নাগরিক ডেস্ক

প্রকাশিত:
১ সেপ্টেম্বার ২০২৩, ০৩:০০

ছবি: সংগৃহীত

বাবা, আমি তোমার ছোট্ট ছেলে। তুমি আমাদের ছেড়ে চলে গেছো প্রায় ১৬ বছর হলো। তোমার কথা আমার খুব মনে পড়ে। কেমন আছো তুমি? হয়তো আমার থেকে অনেক ভালো। কিন্তু তোমার জীবদ্দশায় স্বপ্নের সেই সোনালি দিনগুলোয় আমাদের ভালো রাখতে গিয়ে তুমি আর ভালো থাকোনি। সেটা ছোটবেলায় না বুঝলেও আমি এখন হারে হারে টের পাচ্ছি।

মনে আছে বাবা? স্কুল ছুটির পর দৌড়ে আম্মার কাছে যেতাম, আম্মার কাছ থেকে জেনে তুমি কোথায় আছো খুঁজতে শহরে একা একা চলে যেতাম। তখন অবশ্য সব জায়গায় ছড়াছড়ি ছিল ‘ছেলে হারানোর’ ভয়। এ আতঙ্ক তখন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। নিজের শিশুসন্তান হারানোর ভয় মানুষের মধ্যে জেঁকে বসে ছিল। এ রকম একটা প্রভাব পড়া স্বাভাবিক। তবুও এই ভয়কে জয় করে আমি তোমার দিকে ছুটে গিয়েছিলাম বাবা। তখন আমায় সঙ্গে করে বাড়ি ফিরছিলে। হঠাৎ মাঝ রাস্তায় বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। তোমাকে বলেছিলাম, ‘বাবা চল দৌড়াই।’ যদিও তখন রাস্তার দূরত্ব এতটা বুঝতাম না। তখন তুমি তোমার হাজারও ব্যথা–বেদনায় জর্জরিত ডাঙা কাচের মতো বুকে আমায় আগলে রেখে রোদে পোড়া পিঠে সেদিন বৃষ্টিকে আশ্রয় দিয়েছিলে। সেদিন যদি ছাতা থাকত তাহলে মুষলধারে বৃষ্টির ফাঁকে দমকা হাওয়ায় নিমিষেই ভেঙে যেত। কিন্তু তোমায় ভেদ করে একফোটা বৃষ্টিও আমার ওপর পড়েনি। বাবা তুমি জানো, সেদিনটার কথা মনে করে আজ অনেক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম। অঝোরে কেঁদেছিও। হয়তো তুমি থাকলে কত কথা শোনাতে।


বাবা, যখনই তোমার কথা মনে হয়, তখনই বালিশ চেপে অঝোরে কান্না করি। এই তো সেদিন অনার্স ফাইনাল পরীক্ষায় তোমার কথা হঠাৎ মনে পড়ে, তখন ইচ্ছে করেছিল পরীক্ষা না দিয়ে চলে আসি। তখন শুধু আম্মার চেহারা চোখে ভাসছিল। আমি যদি কোনো ভুল করি, তখন আম্মা কত না কষ্ট পেয়ে যান। তাই সেদিন তীব্র ব্যথা অনুভব নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। আর আমি ফার্স্ট ক্লাসও পেয়েছিলাম। জানো বাবা, মাঝেমধ্যে জাতীয় পত্রিকায় আমার লেখা যখন প্রকাশ হয়, তখনই মহাআনন্দ নিয়েই তোমাকে জানাতে ইচ্ছে করে, দেখো বাবা! দেখ, তোমার ছোট্ট ছেলের লেখা জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তখনই হৃদয়ের মধ্যে রক্তক্ষরণ হয়, বাবা তো আমাদের মধ্যে নেই। বাবা অ বাবা, ওপারে তোমার চলে যাওয়াটি কি ঠিক হলো? হয়তো এ রকম প্রশ্নের কোনো উত্তর তোমার কাছে নেই, থাকলেও না বলার ভান করে আছো। কিন্তু এর উত্তর আমায় প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খাচ্ছে।

শোনো বাবা, আমার কিন্তু আজও ইচ্ছে করে তোমার আঙুল ধরে হাঁটতে শিখতে, তোমার হাত ধরে সাঁতার কাটা শিখতে, তোমার কাঁধে বসে চাঁদ ধরতে আর তোমার কোলে বসে নীল আকাশের তারা গুনতে। ধুর ছাই! তুমি তো আমায় ফেলে আকাশে বিজলির মতো ভাসছো। আমায় কেন সঙ্গে নাওনি? এ রকম চলে যাওয়াটা মনে হয় সৃষ্টিকর্তা খুবই পছন্দ করেন। আচ্ছ! বাবা আমি যখন তোমার মতো বাবা হব, তখনও কি এভাবে সংসার ছেড়ে এক দিন চলে যাব। না বাবা, ওই দিনটার কথা ভাবলে আমার খুবই কষ্ট হয়। তোমরা বাবারা এসব পারোও বটে!


আচ্ছা বাবা, মানুষ বাবা হলে এ রকমই হয়? তার স্বাদ-আহ্লাদ ধুলোয় মেশায় তার সন্তানদের জন্য? এ বিসর্জনের মধ্য দিয়েই কি তোমরা প্রকৃত বাবা হও? এত কষ্ট, দুঃখ যন্ত্রণা সয়ে যাও ‘বাবা’ ডাক শুনে। তখন সত্যিই কি স্বর্গ সুখ পাও? খুবই জানতে ইচ্ছে করে। জানা হবেই বা কি করে? তুমি নেই, ছায়া হয়ে নীল আকাশটাও নেই৷

বাবা, তুমি এখন সবার স্পর্শ-সীমানার বাইরে। সব অভিমান-অনুযোগের ঊর্ধ্বে। যখন-তখন ‘বাবা’ বলে ডাকলেও আর প্রতিউত্তর পাই না। না–বলা কত কথা যে বুক-গহিনে জমা, বলতে পারি না কাউকে। শুধু প্রায় রাতেই, আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটির দিকে তাকিয়ে বলি বাবা, তোমাকে ভীষণ রকম মিস করছি। ভালো থেকো বাবা, অনেক ভালো। সৃষ্টিকর্তার কাছে একটাই প্রার্থনা, সেই ছায়ায় মায়ায় মাখামাখি মুখ আবার দেখিয়ো প্রভু।

তোমার ছোট্ট ছেলে মোহাম্মদ এনামুল হক

শিক্ষার্থী, আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া, চট্টগ্রাম

 

 

বাংলা গেজেট/এমএএইচ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর