প্রকাশিত:
২৮ মার্চ ২০২৫, ১৯:৩৮
#ফুটপাত অভিযানে ভূমিকা নেই সিটি কর্পোরেশনের।
পথচারীদের জন্য তৈরি হলেও চট্টগ্রাম মহানগরে ফুটপাতগুলোতে হেঁটে চলাই মুশকিল। পথচারীদের জন্য নির্ধারিত এই পথে হকাররা জুতা, কাপড়, ফলসহ নানা ধরনের দোকান দিয়ে বসেছেন। এতে চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে এবং শহরের সৌন্দর্য ক্ষুণ্ন হচ্ছে। কোথাও এসব দোকানে ফুটপাত অর্ধেক দখলে আবার কোথাও গোটা ফুটপাতই দখল করে চলছে এসব ব্যবসা।
ফুটপাতের বড় বাণিজ্যও রয়েছে নগরীর ব্যস্ততম এলাকায়। বিশাল এ ফুটপাত'কে কেন্দ্র করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চাঁদাবাজচক্র। আওয়ামী লীগের আমলে সন্ত্রাসীরা দলীয় গডফাদারদের আশ্রয়ে চাঁদাবাজি করলেও এখন সেই চাঁদাবাজি হাতবদল হয়ে এসেছে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে চাঁদাবাজদের হাতে। ফুটপাত থেকে শুরু করে অধিকাংশ অফিস-সবখানেই এখন তাদের থাবা। অত্যাচারে অতিষ্ঠ হলেও ভয়ে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখও খুলতে পারছেন না কেউ।
নগরে ফুটপাত দখল সব থেকে বেশি দেখা যায় বহদ্দারহাট, চকবাজার, নিউমার্কেট ও আগ্রাবাদসহ এর আশেপাশের এলাকায়।শহরের সৌন্দর্য তো পরের কথা, সাধারণ মানুষের পক্ষে এসব এলাকার ফুটপাতে নির্বিঘ্নে হাঁটা সম্ভব হচ্ছে না। ফুটপাতজুড়ে রয়েছেন ভ্রাম্যমাণ হকাররা। কোথাও কোথাও ফুটপাত ছাড়িয়ে রাস্তায়ও চলে আসে এসব ভ্রাম্যমাণ হকারের দোকান।
এখানে সড়কের ওপর ছোট ছোট টংঘর করে দৈনিক হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছে একটি মহল। সড়কে হাতে করে মুরগি বিক্রি করতে হলেও চাঁদা দিতে হয় একটি পক্ষকে। এভাবে শহরের সড়ক দখল করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করে চলেছে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা।সড়কে ফুটপাত দখলে মারামারি'তে লিপ্ত হচ্ছেও অনেকেই।
নগরের বহদ্দারহাট ইলিজি স্কাই পার্কের সামনে একটি বিরানির দোকান নিয়ে দু'পক্ষের মা*রা'মা'রি হয়। এ-সময় মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সহ বেশ কয়েকজন আহত হন।ঘটনাস্থলে লাইভে থাকা অবস্থায় স্থানীয় এক সংবাদকর্মীর মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে।ঘটনার সাথে জড়িতরা নগরের দুই বিএনপির শীর্ষ নেতার অনুসারী।
যদিও মানবিক দিক বিবেচনায় জীবিকার তাগিদে ফুটপাতে ব্যবসা করতে বাধ্য হচ্ছেন এসব হকার। তবে নগরে প্রতিনিয়ত অপরিকল্পিত বাড়তে থাকা এই হকারদের দৌরাত্ম্যে ফুটপাত ও সড়কগুলো দখল হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষেরা।
সরেজমিনে নতুন ব্রিজ, নিউমার্কেট, কদমতলী, আমতল, রিয়াজুদ্দিন বাজার, আগ্রাবাদ, ইপিজেড, কাঠগড়, জিইসি, দুই নম্বর গেইট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চকবাজারসহ এর আশপাশের এলাকার চিত্রে দেখা যায়,কোতোয়ালি থেকে কাঠগড় ও পতেঙ্গা পর্যন্ত রাস্তা ও নতুন ব্রিজ টু আগ্রাবাদ,এসব সড়কে দুই প্রান্তের ফুটপাত পুরোটা হকারদের দখলে।এমনকি রাস্তার এক তৃতীয়াংশ দখল করে হকাররা ব্যবসা-বাণিজ্য করছে।সড়ক ও ফুটপাত ভাড়া দিয়ে চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে রয়েছে নানা হিসাব। এলাকার ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয় চাঁদার হার।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ফুটপাতে বসানো দোকান পুলিশ উঠিয়ে দিতে গেলেই বাধা সৃষ্টি করে হকারেরা,কোন রকম পুলিশের তোয়াক্কা না করে,স্থানীয় চাঁদাবাজদের হাত ধরে সড়কের উপরে হকার বসিয়ে ব্যবসা করছেন।
সাবেক সরকার আমলে পুলিশের সঙ্গে হকারদের উচ্ছেদ নিয়ে এমন চোর-পুলিশ খেলা চলতেই তাকতো। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর উচ্ছেদ অভিযান কম হওয়ায় নগরে হকারদের সংখ্যা দিনের পর দ্বিগুণ হচ্ছে।
যদিও ফুটপাত দখলমুক্ত করা ও হকারদের উঠিয়ে অন্য কোথাও পুনর্বাসন করা বা একটি নিয়মতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে আনতে প্রশাসন থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এ যাবৎকালে অনেক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা থাকলেও,তবে কোনটিই কাজে আসেনি। যতবারই হকারদের উচ্ছেদ করা হত ততবারই তারা আবারও একই জায়গায় ফিরে আসতো।
এসব নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের।এখানে পুলিশ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করে।এদিকে রাস্তা ও ফুটপাত হচ্ছে সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি। তাই এর দেখভাল ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তাদেরও।তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সিটি কর্পোরেশন এর পক্ষে উল্লেখ্য যোগ্য স্থানে কোন অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি বলে দাবী করেন চকবাজার এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মি.কামাল উদ্দিন।
চসিকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'আমরা নিয়মিত হকার উচ্ছেদ অভিযান চালাই, কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তারা আবার এসে বসে। ফুটপাতে বসা হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে প্রভাবশালী মহল তাদের সুরক্ষা দিচ্ছে।
নগরীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাত থেকে প্রতিদিনই মোটা অংকের চাঁদা তোলা হচ্ছে।'
এবিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম'কে ফোনে পাওয়া যায়নি।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সিএমপি (প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ আসফিকুজ্জামান আকতার বলেন,' হকার নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এরই মধ্যে আমরা সড়কে বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি শহরের ফুটপাত দখল মুক্ত ও যানজট মুক্ত রাখতে।আশা করছি কিছুদিনের মধ্যে সুফল ভোগ করবে শহরবাসী।
মন্তব্য করুন: