প্রকাশিত:
৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:০৮
বিরোধীদের চাপে পড়েছেন, জেল খেটেছেন কিন্তু পরে আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ইস্তানবুল নগরীর মেয়রের দায়িত্ব ফিরে পেলেন একরেম ইমামোলু।
তুরস্কের ঐতিহাসিক নগরী ইস্তানবুলে আবারও মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন সিএইচপি প্রধান একরেম ইমামোলু। এতেই বোঝা যায়, বিরোধীদের উত্থানটা বেশ চমকপ্রদ হয়েছে। ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছেন তিনি। এই ভোট এরদোগানের একে পার্টির প্রার্থীর তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। আর এখন ইমামোগুলুকেই এরদোগানের ভবিষ্যৎ প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন অনেকে।
এরদোগান ও ইমামোলু দুই ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের হলেও তাদের মধ্যে রয়েছে অনেক মিল। দুজনেরই জন্ম তুরস্কের কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে। উভয়েই নব্বই-এর দশকে ইস্তানবুলে তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। দুজনই তুরস্কে তাদের আক্রমণাত্মক রাজনীতির জন্য পরিচিত। এমনকি ফুটবলের প্রতিও রয়েছে তাদের তীব্র আবেগ। তবে যতোই মিল খুঁজে পাওয়া যাক, রাজনীতির মাঠে এখন এরদোগানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছেন ৫৩ বছর বয়সী এই ইমামোলু।
একরেম ইমামোলু ১৯৭০ সালে তুরস্কের ট্রাবজোন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৭ সালে তার পরিবার ইস্তানবুলে চলে আসে। তিনি ইস্তানবুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করার পর মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। স্নাতক শেষ করার পর তিনি যোগ দেন পারিবারিক ঠিকাদারি ব্যবসায়।
পেশা হিসেবে ব্যবসাকে বেছে নিলেও ইমামোলুর মন পড়ে ছিল রাজনীতিতে। ২০০৮ সালে রিপাবলিকান পিপলস পার্টিতে যোগ দেন তিনি। এরপর অল্প সময়ের মধ্যেই ২০০৯ সালে তিনি রিপাবলিকান পিপলস পার্টির বেলিকডুজু শাখার সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের ১৫ মার্চে তিনি বেলিকডুজুর মেয়র হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা প্রদান করেন এবং নির্বাচনে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
২০১৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বরে ইস্তানবুলের তৎকালীন মেয়র কাদির তোপবাস পদত্যাগ করলে তিনি তার দলের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ক্ষমতাসীন একে পার্টির প্রার্থীর নিকট পরাজিত হন তিনি। তবে বছর দুই অপেক্ষার পরই সফলতার দেখা পান ইমামোলু।
একরেম ইমামোলু ২০১৯ সালের ৩১ মার্চে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচন একে পার্টির বিনালি ইলিদিরিমকে পরাজিত করেন। নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করে গণমাধ্যম। ফলে অনেকটা চাপে পড়েই ইমামোলুর বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগে এরদোগানের দল। বিভিন্ন অভিযোগ এনে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানায় একে পার্টি। শাসক দলের চাপেই নতুন করে নির্বাচন আয়োজন করা হয়। তবে সেই নির্বাচনেও ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হন ইমামোলু।
২০২২ সালে, ইমামোলুকে তুরস্কের সুপ্রিম ইলেকশন কাউন্সিলকে অপমান করার অভিযোগে দুই বছর সাত মাসের কারাদণ্ড এবং রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। তবে এতে দমে যাননি তিনি। পূর্ণ শক্তি ও উদ্যমে আবারও আসীন হলেন ইস্তানবুলের মেয়রের পদে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, স্থানীয় নির্বাচনের হার এরদোগানের ২০ বছরের ক্ষমতায় থাকার সময়ে সবচেয়ে বড় পরাজয়। এই নির্বাচন বিরোধীদের শক্তিশালী করার পাশাপাশি ইস্তানবুলের নবনির্বাচিত মেয়র একরেম ইমামোলুকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। ভবিষ্যতে ইমামোলুই হয়তো হবেন এরদোগানের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী।
মন্তব্য করুন: