প্রকাশিত:
২ সেপ্টেম্বার ২০২৩, ২২:১০
প্রায় প্রতিটি মানুষই দীর্ঘ জীবনযাপন করতে চায়। তবে দীর্ঘায়ুর মূল লক্ষ্য হল মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা এবং সক্রিয় থাকা।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, দৈনিক শারীরিক ব্যায়াম ও মনোচাপ থেকে মুক্তিতে আয়ু বাড়ে। এর বাইরে কিছু সুপারফুড আছে যার মাধ্যমে খুব সহজে স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়। সুস্থ থাকতে ও দীর্ঘায়ু পেতে এসব সুপারফুড অনেক উপকারি।
সুস্থভাবে বাঁচতে নিয়মিত খাবারের সাথে রাখতে হবে এসব খাবারও। দেখে নেওয়া যাক, কী কী রয়েছে এই সুপারফুডের তালিকায়।
আয়ু বাড়ায় যেসব সুপারফুড
১. বাদাম: সুপারফুডের তালিকায় প্রথমেই যা আসে তা হল বাদাম। কারণ এতে থাকা পুষ্টিগুণ শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং স্বাস্থ্যকর বার্ধক্যের ক্ষেত্রে অনেক উপকারি। বাদামে ফাইবার, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং ওমেগা-৩, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম এবং সেলেনিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান রয়েছে।
এসব উপাদান মানবদেহে প্রদাহ এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের ভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপাশি মস্তিষ্ক এবং হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। এ ছাড়া ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে যা দীর্ঘায়ু বৃদ্ধিতে সহায়ক।
২. অলিভ অয়েল: অলিভ অয়েলে হার্ট সুস্বাস্থ্যকারী মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে। এ ছাড়া অলিভ অয়েলে পলিফেনল, শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা আলঝেইমারস, পারকিনসনস, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ এবং ক্যান্সারসহ বিভিন্ন বয়স-সম্পর্কিত অসুস্থতা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন ১০ গ্রাম করে অলিভ অয়েল খাওয়া প্রাথমিক মৃত্যুঝুঁকি সাত ভাগ কমিয়ে দিতে পারে।
৩. সবুজ শাক: গাঢ় সবুজ শাক নিয়মিত খেলে প্রাথমিক মৃত্যুর ঝুঁকি কমে এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারি হওয়া যায়। গাঢ় সবুজ পাতাযুক্ত শাক-সবজিতে জেক্সানথিন এবং লুটেইনও নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা চোখের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে।
এ ছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত সবুজ পাতার ব্যবহার কার্ডিওভাসকুলার রোগের বিকাশ ১৫ ভাগ কমিয়ে দেয়।
৪. গোটা শস্যদানা: গোটা শস্য যেমন বাদামী চাল, তুষ, ওটস, পপকর্ন, কুসকুস, কুইনো তাড়াতাড়ি মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। এসব খাবার উচ্চ ফাইবারে ভরপুর, যা মানবদেহে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল উৎপাদন কমিয়ে দেয়। এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে যারা প্রতিদিন তিনবার গোটা শস্য খান তাদের হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ২৫ শতাংশ কমে যায় তাদের তুলনায় যারা এর চেয়ে কম খান।
৫. মটরশুটি: উদ্ভিদ-ভিত্তিক সুপারফুড যেমন মটর, মটরশুটি, মসুর ডাল, শিমের বিচি ইত্যাদি লেগুম পরিবারের অংশ। এসব খাবারে চর্বি কম এবং প্রোটিন, ফোলেট, আয়রন, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম বেশি থাকে।
ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন জার্নালে ক্রিটিকাল রিভিউতে প্রকাশিত একটি পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে মটরশুটি কার্ডিওভাসকুলার রোগ, ক্যান্সার এবং ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি হ্রাসের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।
৬. গ্রিন টি: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পুষ্টিতে ভরপুর স্বাস্থ্যকর পানীয়র মধ্যে একটি গ্রিন টি। নিয়মিত গ্রিন টি সেবনে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। গ্রিন টি-তে উপস্থিত ক্যাটেচিন এটি মস্তিষ্কের রোগ নিরাময় করে। এটি নিউরনের উপর ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং আলঝেইমার থেকে রক্ষা করে।
৭. ফলমূল: ভিটামিন সি, পটাসিয়াম এবং ফাইটোকেমিক্যালের মতো বিভিন্ন ধরনের ইমিউন-সাপোর্টিভ, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-বার্ধক্য বৈশিষ্ট্য বেশীরভাগ ফলেই পাওয়া যায়। বিশেষ করে বেরি জাতীয় ফলে শর্করা কম, ফাইবার বেশি এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় এগুলো মস্তিষ্ক এবং কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি।
৮. সামুদ্রিক মাছ: স্যামন, টুনা এবং অন্যান্য চর্বিযুক্ত সামুদ্রিক মাছে অত্যাবশ্যক ওমেগা -৩, চর্বিহীন প্রোটিন, ভিটামিন-বি, সেলেনিয়াম এবং আয়রন রয়েছে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং আকস্মিক কার্ডিয়াক মৃত্যুর ঝুঁকি ৮০-৯০ শতাংশ কমাতে পারে।
বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন মাত্র ২ আউন্সের বেশি সামুদিক মাছ খাওয়া আলঝেইমারে মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৮% কমায়, ক্যান্সারে মৃত্যুর ঝুঁকি ২০% কমায় এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ১৫-১৮% কমায়। সূত্র: দেশ রূপান্তর
বাংলা গেজেট/বিএম
মন্তব্য করুন: