প্রকাশিত:
১৮ নভেম্বার ২০২৩, ২০:২৫
আজ ১৮ নভেম্বর দেশের আধুনিক গানের অন্যতম শিল্পী প্রয়াত বশির আহমেদের জন্মদিন। দিনটি এলেই তাকে আরও একবার মনে পড়ে ভক্তদের। মনের মধ্যে বেজে ওঠে তার অসাধারণ গায়কীসমৃদ্ধ ‘অনেক সাধের ময়না আমার’, ‘আমাকে পোড়াতে যদি এত লাগে ভালো’, ‘ডেকো না আমারে তুমি’, ‘ওগো প্রিয়তমা’, ‘খুঁজে খুঁজে জনম গেল’, ‘সবাই আমায় প্রেমিক বলে’, ‘ঘুম শুধু ছিল দুটি নয়নে’, ‘যারে যাবি যদি যা’, ‘কাঁকন কার বাজে রুমঝুম’, ‘আমাকে যদি গো তুমি’, ‘ভালোবেসে এত জ্বালা কেন বলো না’- ইত্যাদি কালজয়ী গান।
বশির আহমেদের জীবন ও কর্মকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে তারই সুযোগ্য পুত্র ও কণ্যা রাজা বশির আর হোমায়েরা বশির গত ৫ বছর ধরে প্রদান করছেন ‘বশির আহমেদ সম্মাননা’। প্রতি বছর শিল্পীর জন্মদিনেই এই আয়োজন হয়ে আসছে। মোট ৬টি ক্যাটাগরিতে দিশের প্রখ্যাত মানুষদের এই সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। তারমধ্যে থাকেন সংগীতশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, সংগীতপরিচালক, সংগীত প্রযোজক, যন্ত্রশিল্পী, অভিনয়শিল্পী, সাংবাদিকসহ শিল্প সংস্কৃতির বিভিন্ন অঙ্গনের ব্যক্তিত্বরা। নতুন বছরে আরও একটি ক্যাটাগরি যোগ করা হচ্ছে। প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিত্বকে তুলে দেওয়া হবে এই সম্মাননা।
এ বছরও হোমায়েরা আর রাজা পরিকল্পনা করেছিলেন বশির আহমেদ সম্মাননা প্রদানের। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই পরিকল্পনা থেকে তারা সরে আসেন। এ প্রসঙ্গে হোমায়েরা বশির বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা এবারও বিশেষ চমক দিতে চেয়েছিলেন। এমন মানুষদের এই সম্মাননা প্রদাণ করতে চেয়েছিলাম যা শুনলে যে কোন সংগীতপ্রেমীদেরই ভালো লাগবে। কিন্তু শেষমেষ তা আর সম্ভব হলো না। কারণ দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি। হরতাল অবরোধের মধ্যে এমন সব গুণী মানুষদের আমরা ঘর থেকে বের করে আনতে চাই না। তাই জাতীয় নির্বাচনের পর ভালো দিন দেখে বশির আহমেদ সম্মাননা আমরা তুলে দেব একটি সুন্দর আয়োজনের মধ্য দিয়ে।’
অস্ট্রেলিয়া থেকে রাশা বশির বলেন, ‘এখন যেহেতু বাবার নামে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানটি করতে পারিনি, তাই আগামী বছরের শুরুর দিকে আমরা বশির আহমেদ পদক ২০২৩ অনুষ্ঠান করব। আবার ২০২৪-এর নভেম্বরেও আরেকটি অনুষ্ঠান করব।’
২০১৪ সালের ১৯ এপ্রিল ক্যান্সার ও হৃদরোগে ভুগে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নিজের বাসভবনে ৭৫ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অসংখ্য কালজয়ী গানের এই গায়ক। ১৯৩৯ সালের ১৯ নভেম্বর কলকাতার খিদিরপুরে জন্মগ্রহণ করেন বশির আহমেদ। ১৫ বছর বয়সেই উচাঙ্গ সংগীতের তালিম নেন। নিয়মিতই গেয়েছেন রেডিও-টেলিভিশনে। তবে তাকে জনপ্রিয়তা এনে দেয় চলচ্চিত্রের গানগুলো।
বশির আহমেদ প্রথমে কলকাতায় ওস্তাদ বেলায়েত হোসেন খানের কাছ থেকে সংগীত শিখেন। তারপর পাড়ি জমান মুম্বাইয়ে। সেখানে উপমহাদেশের প্রখ্যাত ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খাঁ’র কাছে তালিম নেন তিনি। ১৯৬০ সালে তিনি চলে আসেন ঢাকায়। তারপর থেকেই মূলত তার উত্থানের শুরু।
ষাটের দশকে চিত্রনির্মাতা মুস্তাফিজের ‘সাগর’ ছবির জন্য গান লেখার মধ্য দিয়ে রুপালি জগতে পা দিয়েছিলেন বশির আহমেদ, সেই সঙ্গে শুরু হয় সুর করা এবং গান গাওয়াও। তার স্ত্রী মীনা বশিরও এ দেশের প্রখ্যাত একজন শিল্পী ছিলেন। তাদের সেই লেগেসি এখনো ধরে রেখেছেন ছেলে মেয়েরা।
১৯৬৪ সালে ‘কারোয়ান’ চলচ্চিত্রে তার গাওয়া ‘যব তোম একেলে হোগে হাম ইয়াদ আয়েঙ্গে’ গানটি পাকিস্তানে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। আর শবনম-রহমান অভিনীত বাংলা চলচ্চিত্র ‘দর্শন’ ১৯৬৭ সালে মুক্তি পাওয়ার পর এর গানগুলোর জন্য শ্রোতামনে স্থান করে নেন বশির আহমেদ। বাকিটুকু ইতিহাস।
বশির আহমেদ ছিলেন একাধারে সংগীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার ও সংগীত পরিচালক। একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন গুণী এই শিল্পী।
পরিতাপের বিষয় হলো, গানের এই কিংবদন্তিকে নিয়ে তেমন কোনো আয়োজন এখনো চোখে পড়েনি সংগীতাঙ্গন কিংবা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে।
বাংলা গেজেট/এমএএইচ
মন্তব্য করুন: