[email protected] মঙ্গলবার, ২৬শে নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

‘এটা আমার সর্বোচ্চ অর্জন’

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশিত:
১ নভেম্বার ২০২৩, ১৮:২৩

ফাইল ছবি

চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত অভিনেত্রী রোজিনা। আগে দু বার অভিনেত্রী শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করেছেন। এবার তাকে দেওয়া হচ্ছে আজীবন সম্মাননা।

পুরস্কার প্রাপ্তিতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়া রোজিনা কথা বলেছেন বার্তা২৪.কমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২২-এ আজীবন সম্মাননা পেতে যাচ্ছেন- এমন মুহূর্তে অনুভূতি কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। এর আগে দু দুবার জাতীয় পুরস্কার পেলেও এটা আমার সর্বোচ্চ অর্জন। কারণ এটা আমার গোটা চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছি রাষ্ট্রের কাছ থেকে। আমি তোমার সঙ্গে কথা বলছি ঠিকই, কিন্তু আমার শরীর মনে অন্য এক ধরনের অনুভূতি বয়ে যাচ্ছে তা কিছুতেই মুখে বলে বোঝাতে পারছি না।

আমার শুধুই বাবা মায়ের কথা মনে পড়ছে। তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা, সেই সময়ের মতো রক্ষনশীল সমাজে আমাকে অভিনয় করতে দিয়েছেন। এই পুরস্কারের জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জুরি বোর্ড এবং তথ্য মন্ত্রনালয়ের প্রতি। আমি অত্যন্ত খুশি। এই প্রাপ্তিতে অবদান রয়েছে আমি যতো নির্মাতা, প্রযোজক, নায়ক, সহশিল্পী, কলা কুশলী, মিউজিক ডিরেক্টর, গায়ক-গায়িকাদের সঙ্গে কাজ করছি সবার। তারা সবাই আমাকে সাদরে গ্রহণ না করলে, সহযোগীতা না করলে আমি আজকের অবস্থানে পৌঁছাতামই না। আর আমার প্রাণঢালা ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা দর্শকের প্রতি। তাদের জন্যই তো আমি আজকের রোজিনা।

দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে চলচ্চিত্রে অনেক অবদান রেখেছেন। কিন্তু এতোদিন একুশে পদক কিংবা স্বাধীনতা পদক পাননি। এ নিয়ে কোন আফসোস ছিল?

আফসোসের কথা বলতে চাই না। আজ শুধুই আনন্দ ভাগাভাগি করার সময়। আমাকে এখন যোগ্য মনে করেছেন বলে এ বছরই আজীবন সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। তবে কে না চায় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। পুরস্কার হলো মানুষের কাজের স্বীকৃতি। আর সেই স্বীকৃতি সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে পাওয়া গেলে যে গর্ব হয় সেটি তো আর কিছুর সঙ্গে তুলনা যায় না। ফলে আমিও সেটি চাই। ভবিষ্যতে একুশে পদক কিংবা স্বাধীনতা পদক পেলে আমি আরও বেশি খুশি হব। জানি না পাব কি না, তবে প্রত্যাশা তো থাকতেই পারে।

২০২২ এর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা আপনার সঙ্গে যৌথভাবে পাচ্ছেন অভিনেতা খসরু। গতবার দুই গুণীকে একসঙ্গে এই পুরস্কার দেওয়ায় একজন নাখোশ হয়েছিলেন। আপনার অনুভূতি কেমন?

দেখুন, খসরু ভাই চলচ্চিত্রে আমার বেশ সিনিয়র। তিনি হয়ত কম ছবি করেছেন, কিন্তু যে ছবিগুলো করেছেন তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের ছবি করেছেন, সোশ্যাল ড্রামা করেছেন। ফলে তিনিও এই পুরস্কারের যোগ্য একজন শিল্পী। আর একসঙ্গে আমরা পাচ্ছি বলে আমার কোন কষ্ট নেই। একসঙ্গে দুজন পেলে কি এই পুরস্কারের মান বা আনন্দ কমে যাবে? বা একজন পেলে কি বেড়ে যেত? আমাার তো সেটা মনে হয় না। কারণ আমরা যে যার আলাদা আলাদা ক্যারিয়ারের স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কার পাচ্ছি। কেউ তো কারও সুনাম বা অর্জনে ভাগ বসাচ্ছি না। এটা আসলে এক এক জনের ব্যক্তিগত অনুভূতি। আমি বরং খুশি যে এমন গুণী একজন শিল্পী আর আমি একইমঞ্চে পুরস্কার গ্রহণ করব। খসরু ভাইকে আমি অভিনন্দন জানাই তার এতো বড় স্বীকৃতি প্রাপ্তির জন্য।


জীবনের সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি পেয়ে কাদের কথা এখন খুব মনে পড়ছে?

বাবা মায়ের কথা তো আগেই বলেছি। পরিবারের অন্যদের কথাও মনে পড়ছে। যারা আমাকে সাপোর্ট করেছেন সব সময়। ভালো মন্দে আমার ছায়াসঙ্গী হয়েছেন। আর চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ারের কথা বললে আমি প্রথমেই স্মরণ করি নির্মাতা এস কবির চৌধুরীকে। তিনিই আমাকে প্রধান নায়িকা হিসেবে প্রথম সুযোগ দেন ‘রাজমহল’ ছবিতে। সেই ছবিটিই সুপার ডুপার বাম্পার হিট করে। টানা তিন চার মাস হলে চলেছিল ছবিটি। ওই ছবির পর আর আমাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর আমাকে সোশ্যাল ড্রামা ছবিতে সুযোগ দিয়ে আমার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেন নারায়ন ঘোষ মিতা। তার পরিচালিত ‘সুখের সংসার’ একদিকে হলে চলছে, আরেক দিকে আমার অ্যাকশন সিনেমা ‘সুলতানা ডাকু’। দুটি ছবিই মানুষ মাসের পর মাস হইহই করে দেখেছেন। ফকরুল হাসান বৈরাগীর ‘মানসী’ সিনেমায় অভিনয় করে আলাদা খ্যাতি অর্জন করি। এছাড়া স্মরণ করি আমজাদ হোসেনকে, তার ‘কসাই; ছবিতে অভিনয় করে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাই পাশর্^ অভিনেত্রী হিসেবে। এরপর আমার নিজস্ব প্রযোজিত মতিন রহমান পরিচালিত ‘জীবনধারা’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী প্রধান শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাই।

নিজের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার নিয়ে আপনি কতোটা তুষ্ট?

আমি খুব আনন্দিত যে, অনেক ধরনের চরিত্রে আমি কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। দর্শকও আমাকে সব চরিত্রে সাদরে গ্রহণ করেছেন। দর্শকের মনের মনিকোঠায় জায়গা পাওয়ার পাশাপাশি, দুই বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, তিন বার বাচসাস পুরস্কার পেয়েছি আমি। আজিজুর রহমান পরিচালিত আমার সিনেমা ‘জনতা এক্সপ্রেস’ মস্কো, তাসখন্দ ও কায়রো ফেস্টিভ্যালে তখন দারুণ সাড়া ফেলে। আমি কায়রো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের রেড কার্পেটে হাটি। এখন আমাদের সিনেমা আবারও দেশ বিদেশে পুরস্কৃত হতে শুরু করেছে। এসব খবর আমকে ভীষণ আনন্দ দেয়।

 

বাংলা গেজেট/এমএএইচ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর