প্রকাশিত:
৯ সেপ্টেম্বার ২০২৩, ১৯:২৫
টাকা নিয়েও অনুষ্ঠান করতে না আসায় বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণাসহ একাধিক মামলায় অবশেষে জামিন পেয়েছেন বাংলাদেশি পপ সম্রাজ্ঞী ও সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম।
শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন বাংলাদেশের এই হাই প্রোফাইল সংসদ সদস্য। এরপরেই বহরমপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অলকেশ দাস তার জামিন মঞ্জুর করেন।
এদিন আদালতে মমতাজের আইনজীবী দেবাংশু সেনগুপ্ত বিচারকের উদ্দেশ্যে জানান গত ৯ আগস্ট শুনানির দিন মমতাজ ঠিক কী কারণে বহরমপুর আদালতে হাজিরা দিতে পারেননি। মমতাজের আইনজীবীর বক্তব্যে সন্তোষ প্রকাশ করে বিচারক মমতাজের বিরুদ্ধে জারি থাকা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা খারিজ করেন এবং তার জামিন মঞ্জুর করেন।
এদিকে মামলার চার্জ গঠন হয়ে যাওয়ার পরেও মূল আসামি এভাবে জামিন পেয়ে যাওয়ার বিষয়টিতে আপত্তি জানান মামলাকারীর আইনজীবী। যদিও বিচারক এই আপত্তি আমলে না নিয়ে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য পরবর্তী দিন নির্ধারণ করেন।
মমতাজের আইনজীবীর পক্ষ থেকে এদিন পৃথকভাবে সিআরপিসি(ফৌজদারি) ২০৫ ভারতীয় আইন অনুযায়ী আদালতে একটি আবেদন দাখিল করেন। আবেদনটি আদালত মঞ্জুর করলে ভারতীয় আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হবে না বাংলাদেশের এই সংসদ সদস্যকে। তবে আদালতের নির্দেশ থাকলে অবশ্যই স্বশরীরে আদালতে হাজির হতে হবে মমতাজকে।
এদিন এ বিষয় নিয়ে অভিযোগকারী শক্তি শংকর বাগচীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি এক হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় মামলাটি ফের কলকাতা হাইকোর্টে নিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে জানান, মমতাজের বিষয়ে আমি এখন কাউকে কিছু বলবো না, কলকাতা হাইকোর্ট যতক্ষণ না কিছু বলছে।
এর আগে গত ৯ আগস্ট কানাডায় একটি কনসার্টের কারণে বহরমপুর আদালতের হাজিরা এড়িয়ে যান মমতাজ। এরপরেই তার বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণাসহ একাধিক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে বহরমপুর আদালতের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
প্রসঙ্গত প্রায় চৌদ্দ বছর আগে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিতেন মমতাজ। ২০০৪ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য সেখানকার শক্তি শঙ্কর বাগচী নামে এক ইভেন্ট অর্গানাইজার এর সঙ্গে গায়িকার লিখিত চুক্তি হয়। সেইমতো ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে বহরমপুরের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান শিল্পী হিসেবে মমতাজকে প্রায় ১৪ লাখ রুপির বিনিময়ে বায়না করেছিলেন উদ্যোক্তারা।
তবে অভিযোগ, টাকা নেয়ার পরও অনুষ্ঠানে হাজির হননি গায়িকা। যথারীতি অনুষ্ঠানস্থলে ভাঙচুর হয়। চরম হেনস্তার মুখে পড়তে হয় অনুষ্ঠানের আয়োজক শক্তি শঙ্কর বাগচীকে। পরে টাকা ফেরত দিতেও অস্বীকার করেন মমতাজ। এরপর চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ নিয়ে স্থানীয় থানার দ্বারস্থ হন শক্তি। কিন্তু থানা অভিযোগ গ্রহণ করতে অস্বীকার করে।
এরপর বাধ্য হয়ে বহরমপুর আদালতের দ্বারস্থ হন শক্তি। মমতাজের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণাসহ একাধিক ধারায় মামলা করেন। সেই সূত্রে ২০০৯ সালে মমতাজের বিরুদ্ধে সমন জারি করে আদালত। পরে সমন কার্যকর না করায় তার বিরুদ্ধে জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এরই মধ্যে নিম্ন আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়ে আসেন গায়িকা।
পরে নিম্ন আদালতের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শক্তি শঙ্কর বাগচী। ২০১০ সালে নিম্ন আদালতের নির্দেশ খারিজ করে মমতাজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রাখে কলকাতা হাইকোর্ট। তবে মামলায় সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একে একে তিনবার আগাম জামিন পেয়ে যান গায়িকা। শুক্রবারও মামলায় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে চতুর্থবারের মতো জামিন পেলেন মমতাজ।
বাংলা গেজেট/বিএম
মন্তব্য করুন: