প্রকাশিত:
৩১ মে ২০২৪, ১২:৫২
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। কেউ চাইছেন উদ্ধার সহযোগিতা, আবার কোথাও দেখা দিয়েছে খাবার সংকট। গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন অনেকে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত পাঁচ উপজেলায় ৪৭০ আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় ত্রাণ হিসেবে পাঠানো হয়েছে শুকনো খাবার, চাল ও নগদ টাকা। বন্যার পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তবে পানিবন্দিদের উদ্ধারে প্রস্তুত রয়েছে সেনাবাহিনী। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সিলেটের সব পর্যটন কেন্দ্র।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সিলেটে কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছিল। এ ছাড়া সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি এলাকায় টানা ভারী বৃষ্টিপাত হয়। ফলে সিলেটের সীমান্ত নদী দিয়ে পাহাড়ি ঢল নামতে শুরু করে। এতে সুরমা, সারি, গোয়াইন, ধলাই, পিয়াইন, লোভাসহ উত্তর সিলেটের সবকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। বুধবার বিকালে সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থান দিয়ে নদীর পানি ঢুকতে শুরু করে। রাতে হুহু করে বাড়তে থাকে পানি। পানিবন্দি হয়ে পড়ে কয়েক লাখ মানুষ। তারা উদ্ধারের জন্য আহাজারি করতে থাকে। অনেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে উদ্ধারের আকুতি জানান। কিন্তু নৌকা সংকটের কারণে উদ্ধারকাজ জোরদার করা সম্ভব হয়নি। গতকাল ভোরে প্রশাসন, স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। তবে উজানে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় কোথাও কোথাও বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী জানান, জৈন্তাপুর সদর, নিজপাট ও চারিকাটা ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি বন্যাকবলিত হয়েছে। এ তিন ইউনিয়নের প্রায় পুরোটাই তলিয়ে গেছে। ঘরের ভিতর ৩-৪ ফুট পানি উঠেছে। অনেক কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। বুধবার রাত থেকেই পানিবন্দি মানুষ উদ্ধারের জন্য আহাজারি করছিল। কিন্তু নৌকা না পাওয়ায় উদ্ধারকাজ শুরু করা যায়নি। গতকাল ভোর ৪টা থেকে উদ্ধারকাজ জোরদার করা হয়। পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে রান্না করা ও বাড়িঘরে থাকা মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। তবে অনেকের গবাদি পশু উদ্ধার করা যায়নি। পানিতে আটকা পড়া অনেক গবাদি পশু মারা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উদ্ধারকৃত গবাদি পশুরও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর, পশ্চিম ইসলামপুর, উত্তর রণিখাই ও ইছাকলস ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। তবে বেশির ভাগ এলাকার পানিবন্দি মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে যায়নি। কেউ কেউ নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে উঠেছে। পানিবন্দি লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে সব ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ। কানাইঘাট উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সুরমা ও লোভা নদীর বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। গতকাল বিকাল থেকে নদীর পানি কিছুটা কমলেও লোকালয়ে পানি খুব একটা কমেনি। নতুন করে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলা সদরের সঙ্গে উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন।
কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে জকিগঞ্জ উপজেলার ছবড়িয়া, বাখরশাল, রারাই, ভূইয়ারমোড়া, মাঝরগ্রামসহ কয়েকটি স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। এ ছাড়া পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ উপচেও পানি প্রবেশ করছে। উপজেলার প্রায় ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে প্রধান করে উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফসানা তাসনিম।
আশ্রয় কেন্দ্র ও ত্রাণ : সিলেটের বন্যাকবলিত পাঁচ উপজেলায় ৪৭০ আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে গোয়াইনঘাটে ৫৬, জৈন্তাপুরে ৪৮, কানাইঘাটে ১৮, কোম্পানীগঞ্জে ৩৫ ও জকিগঞ্জে ৫৮ আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পাঁচ উপজেলায় মোট ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবার, ৭৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ আড়াই লাখ টাকা ত্রাণ হিসেবে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান। উদ্ধারে প্রস্তুত সেনাবাহিনী : বন্যাকবলিত এলাকায় লোকজন আটকা পড়লে তাদের উদ্ধারে প্রস্তুত রয়েছে সেনাবাহিনী। প্রয়োজন হলেই সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধারকাজে নামবে বলে জানিয়েছেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোবারক হোসেন।
সিলেটের সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা : নদনদীতে পানি বেড়ে যাওয়া ও বন্যার কারণে সিলেট জেলার সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ জানান, উপজেলার ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলো পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় সিলেটের সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন: