শীতকাল আসার আগেই শীতের পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি। ভোরের শিশিরকণায় সিক্ত হচ্ছে সমস্ত বৃক্ষ ও ফসলের ক্ষেত। মুক্তার মতো জ্বলজ্বল করছে শীতের সকালের কোমল রোদ। ক্রমেই কমতে শুরু করেছে সূর্যের প্রখরতা। রাতের গভীরতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। গ্রামবাংলা তো বটেই, শহুরে জীবনেও ছুঁয়ে যাচ্ছে শিরশিরে উত্তরা সমীরণ। প্রচলিত রীতিতে কার্তিক মাসে শীতের জন্ম। তাই তো গত কয়েকদিন ধরে আবহাওয়ায় কিছুটা পরিবর্তনও দেখা যাচ্ছে। দিনের বেলায় কিছুটা গরম অনুভূত হলেও, সন্ধ্যা নামার পরপর কুয়াশা জড়িয়ে ধরছে প্রকৃতিকে। এভাবেই ধীর ধীরে এগিয়ে আসছে শীতের তীব্রতা। তাই স্থানীয় লোকজন শীত মোকাবিলায় লেপ-তোশক তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন।
সারা বছর তেমন একটা চাহিদা না থাকলেও শীতের আগমনকে কেন্দ্র করে চাহিদা বাড়ায় লেপ-তোশকের কারিগরদের ব্যস্ত সময় শুরু হয়েছে। কারিগররা সাদা, চায়না, গোলাপি, শিমুলসহ বিভিন্ন তুলা দিয়ে লেপ তৈরি করছেন। আর কালো রাবিস, কালো হুল, উইল তুলা দিয়ে তৈরি করছেন জাজিম। তবে আগের তুলনায় লেপ তোশকের উপকরণসহ পরিবহন খরচ বাড়লেও সে অনুযায়ী বাড়েনি কারিগরদের মজুরি। একই সঙ্গে লেপ-তোশকের বিকল্প হিসেবে ক্রেতাদের আধুনিক ম্যাট্রেস-কম্বলের দিকে আগ্রহ বাড়াছে তো বটেই! দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাবও পড়েছে লেপ-তোশক কারিগরদের মাঝে।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দৈনিন্দন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করতেই নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। তাই ক্রেতারা অনেকেই ইচ্ছা থাকলেও অনেক কিছু কেনা থেকেই বিরত থাকছেন। এর বাইরে নয় লেপ তোশক। বাজারের ঊর্ধ্বগতির কারণে এসব দোকানে তেমন ক্রেতা আসছেন না বলে জানান বিক্রেতারা।
তারা বলছেন, আগের তুলনায় লেপ-তোশক তৈরির উপকরণসহ পরিবহন খরচ বেড়েছে কিন্তু সে অনুযায়ী যারা কারিগর রয়েছে তাদের মজুরি বাড়েনি। চাহিদা অনুযায়ী ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত লেপ-তোশকে পারিশ্রমিক পাচ্ছি আমরা। দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির এ বাজারে এ পারিশ্রমিকে আমাদের বেঁচে থাকা দায়।
এছাড়া এখন লেপ-তোশকের বিকল্প হিসেবে ক্রেতাদের আধুনিক ম্যাট্রেস-কম্বলের দিকে আগ্রহ বাড়ায় আমাদের হাতে তৈরি লেপ-তোশকের চাহিদা কমছে। নতুন করে তৈরি করার থেকে ব্যবহৃত পুরাতন লেপ-তোশক যেগুলোতে তুলা কমে গেছে, সেগুলো বাজারে এনে নতুন তুলা যুক্ত করে পুনরায় লেপ-তোশক তৈরি করছেন বেশিরভাগ ক্রেতাই। অপরদিকে চাহিদা থাকলেও দাম বাড়ায় চাহিদা অনুযায়ী লেপ-তোশক দিতে ও নিতে পারছেন না।
রাজশাহী নগরীর আরডিএ মার্কেট, গণকপাড়া, রাণীবাজার, নিউ মার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দম ফেলার অবস্থা নেই লেপ-তোশকের কারিগরদের। কয়েকদিনের শীতল হাওয়ায় লেপ-তোশকের দোকানে ক্রেতার চাপ বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। খদ্দেরদের সঙ্গে দামাদামি ও উপকরণ যোগাড়ে ব্যস্ত দোকান মালিকরা। তবুও সন্তুষ্ট নন বিক্রেতারা, অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম ক্রেতা আসছেন বলে দাবি তাদের।
বেচাকেনার বিষয়ে জানতে চাইলে নগরীর গণকপাড়ার প্রিন্স বেড হাউসের বিক্রেতা মোঃ মাহবুব হোসেন পাপ্পু বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শীতের আগমন একটু দেরিতে। তবে শীতের ঠান্ডা হাওয়া শুরু হওয়ায় ক্রেতারা আসতে শুরু করছেন। কিন্তু আগের চেয়ে লোক কমই আসছেন। যারা আসছেন বেশিরভাগই দেখে, দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। আগের তুলনায় লেপ-তোশক তৈরির উপকরণসহ পরিবহন খরচ বেড়েছে কিন্তু সে অনুযায়ী যারা কারিগর রয়েছে তাদের মজুরি বাড়েনি। তাছাড়া দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির এ বাজারে ব্যাপকহারে প্রভাব পড়েছে। সব কিছুর দাম বেড়েছে। আগে সুতা কিনতাম ৮০০ টাকা কেজি আর এখন সেটা কিনতে হয় ২ হাজার টাকায়। লেপের কাপড় কিনতাম ৩৫ টাকা আর এখন কিনতে হচ্ছে ৫৫ টাকায়।
জুবায়ের রহমান নামের এক লেপের কারিগর বলেন, কম্বলের কারণে লোকজনের লেপের চাহিদা কমে যাচ্ছে। দামে কম হওয়ায় তারা সেদিকেই বেশি ঝুঁকছে। আর লেপের তুলনায় কম্বল রাখা, ধোঁয়াও অনেক সহজ হয়। তবে পৌষের শুরুতে ক্রেতা চাহিদা একটু বাড়বে। তিনি বলেন, সব রকমের তুলার দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কাপড়ের দামও প্রতি গজে ১০ থেকে ১৫ টাকার মতো বেড়েছে। কাপড়, সুতা, মজুরিসহ সব খরচ বেড়ে গেছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী বিক্রি করা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে খুব বেশি লাভ করা যাচ্ছে না।
মন্তব্য করুন: