[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর ২০২৪, ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আবহাওয়া পরিবর্তনে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:
২৪ অক্টোবার ২০২৩, ২১:১২

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ ছয় ঋতুর একটি দেশ। ঋতুর পরিবর্তন এখানে বেশি। ফলে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দেহ মাঝে মাঝে ভারসাম্য হারায়। বিভিন্ন রোগব্যাধি দেখা দেয়। আর এই আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রাজশাহীতে হঠাৎ করে বাড়ছে ডায়রিয়া, কলেরা, জ্বর, ঠাণ্ডা, শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা। এর মধ্যে শিশু ও বয়স্করাই বেশি। এর মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে চলমান ডেঙ্গুর প্রকোপ কোনোভাবেই কমছেই না। এতে ডেঙ্গু টেস্টের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি অব্যাহতভাবে বাড়ছে আবহাওয়া জনিত রোগীর চাপ। একসঙ্গে সকল রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরের সামনে। শুধু আউটডোর নয়, জরুরি বিভাগসহ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডের মেঝেতে রোগী, বারান্দায় রোগী এমনকি প্রবেশপথের সামনেও বেঞ্চ বসিয়ে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের পড়তে হচ্ছে দুর্ভোগে। রোগী ও স্বজনরা ভোগান্তির নানা অভিযোগ করলেও সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ১ হাজার ৫০০ বেডের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এখন ডেঙ্গুসহ গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার রোগীর চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। বর্তমানে ডেঙ্গু ও আবহওয়া পরিবর্তনজনিত নানা শারীরিক জটিলতা নিয়ে ভর্তি রোগীর চাপ সবচেয়ে বেশি। এতো রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচেছ।

সংশ্লিষ্টদের তথ্য বলছে, গত জুলাই থেকে রাজশাহী মেডিকেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চাপ বাড়তে থাকে। রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৃথক ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করা হয়। যেখানে এখনো প্রতিদিন অর্ধশত রোগী ভর্তি হচ্ছেন। ওই সময়ই রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরিক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। নগরীর ১২টি স্থানে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা এখনো চলমান রেখেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে বিনামূল্যের এই টেস্ট নিয়ে তেমন সাড়া নেই।

এদিকে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অব্যাহত রোগীর সঙ্গে ডেঙ্গু টেস্টেও চাপ রয়েছে। রামেক হাসপাতালের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে চলতি মৌসুমে মোট ২০ জন ডেঙ্গুরোগীর মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে ১৮৭ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি আছেন। ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে এখন পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৩৩৮৮ জন রোগী। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে (রাজশাহীর) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২২৫৪ জন রোগী। বাকিরা রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় গিয়ে আক্রান্ত হন। মোট ভর্তি রোগীর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৩১৮১ জন রোগী।

শুধু ডেঙ্গু রোগী নয়; উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে মৌসুম পরিবর্তনজনিত শারীরিক জটিলতা। যেখানে স্বাভাবিক সময়ে কলেরা রোগীর সংখ্যা থাকে ৩৫০ থেকে ৪০০ জন, সেখানে এই সময়ে ১৭০০ জনের বেশি রোগী ভর্তি আছেন। আর ডায়রিয়া রোগী ভর্তি আছেন ১৭৫০ জন। এটা অক্টোবরের ২০ তারিখের তথ্য। আর জ্বর, ঠাণ্ডা, শ্বাসকষ্টজনিত রোগীরাও হাসপাতালের বিছানায় পড়ে আছেন অনেকেই। ডেঙ্গুর প্রকোপকালীন এ সময়ে মৌসুম পরিবর্তনজনিত শারীরিক জটিলতা থেকে মুক্ত থাকতে পূর্ব প্রস্তুতির কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ জানান, হাসপাতালের ল্যাবে মাত্র ৬০ টাকা ফিতে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। ডেঙ্গু শনাক্ত হলে বিশেষ ওয়ার্ডে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সাধারণ জ্বর বা টাইফয়েড শনাক্ত হলে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করে চিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আর এখন আবহওয়া পরিবর্তনজনিত রোগীর চাপও বেশি। ডেঙ্গুর প্রকোপও কমছে না। সবমিলিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথেই আমাদের মাঝে নানা রোগব্যাধির প্রবণতা বেড়ে যায়। আমাদের মৌসুমি জলবায়ুর দেশে প্রতিটি ঋতু পরিবর্তনের সময়ই দেখা যায় আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের সাথে সাথে শিশুসহ সকল বয়সের মানুষের মধ্যে রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বৃদ্ধি পায়। এই অসুখের কারণ হলো, আবহাওয়ার এসব পরিবর্তন রোগের নানা উপলক্ষকে করে ত্বরান্বিত যার ফলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ।

হাসপাতালের পরিচালক বলেন, আবহওয়া পরিবর্তনজনিত রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের একটু পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানি পান করা। এসময়ে পানি ফুটিয়ে পরে খাওয়া ভালো। খাবার খাওয়ার আগে ও পরে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া, বাইরের খোলা খাবার এড়িয়ে চলা, নিজে পরিষ্কার থাকুন ও আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা, স্বাভাবিক ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। বিশেষ রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। শেষ সময়ে আসলে সুস্থ করে তোলা কঠিন হয়ে যায়। অনেক সময় মৃত্যুর দিকে ধাপিত হচ্ছে রোগীরা।

 

বাংলা গেজেট/এমএএইচ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর