[email protected] মঙ্গলবার, ২৬শে নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রাজশাহীতে ভূয়া প্রযুক্তিতে জেরা’র বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:
২৩ অক্টোবার ২০২৩, ২১:০৪

জীবাশ্ম জ্বালানি ও ভূয়া প্রযুক্তিতে জেরা’র বিনিয়োগ বন্ধের দাবিতে নাগরিক সমাবেশ

জীবাশ্ম জ্বালানি ও ভূয়া প্রযুক্তিতে জেরা’র বিনিয়োগ বন্ধের দাবিতে বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন পরিবর্তন, কোষ্টাল লাইভলিহুড এন্ড এনভারমেন্টাল একশন নেটওয়ার্ক (ক্লীন) এবং বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ ফর এক্সটার্নাল ডেব্ট (বিডব্লুজিইডি) এই তিনটি সংগঠনের আয়োজনে সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে র‌্যালী এক নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, জ্বালানি নিরাপত্তা, সাধারণ নাগরিকদের সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহর জন্য নবায়নযোগ্য জ¦ালানী ব্যবহারের জন্য গুরুত্ব আরোপ করেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য সরকার ও জ্বালানি-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, বিশেষত জেরা’র নিকট দাবি জানান। যার মধ্যে-জীবাশ্ম জ্বালানি, বিশেষত এলএনজি অবকাঠামো থেকে সকল বিনিয়োগ প্রত্যাহার করা।

নির্মাণাধীন ও প্রস্তাবিত সকল জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্প বাতিল করা। ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাস্তবায়ন করার জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করার দাবি জানানো হয়। পরিবেশ দুষণের ক্ষতিপূরণ বাবদ গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের মূল্য পরিশোধ করা। জেরা’র জ্বালানি প্রকল্প দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনসাধারণকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানানো হয়। সমবেশে বক্তব্য রাখেন নারী নেত্রী মর্জিনা পারভীন, জাÍয়ি মহিলা আইনজীবী সমিতির পরিচালক (লিগ্যাল) অ্যাডভোকেট দিল সেতারা চুনি, সমাজকমর্ িখাদেমাল ইসলাম, সাবেক ছাত্র নেতা মনিমুল ইসলাম, পরিবর্তন পরিচালক রাশেদ রিপন প্রমূখ।

জাপান’স এনার্জি ফর নিউ এরা-জেরা (নতুন যুগের জাপানি জ্বালানি) শ্লোগান দিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও জীবাশ্ম জ্বালানিতে ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে ১৯১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি বর্তমান পৃথিবীর সবথেকে বড় জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম। ইতোমধ্যে এ কোম্পানিটি ‘ডাইনোসর যুগের জ্বালানি কোম্পানি’ এনার্জি ফর জুরাসিক এরা হিশেবে পরিচিত হচ্ছে। বাংলাদেশে এলএনজি টার্মিনাল এবং জীবাশ্ম গ্যাস, এলএনজি ও ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে জেরা’র ৪৮ কোটি ডলার বিনিয়োগ আছে। উল্লেখ্য যে,২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার পর নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ প্রতি বছর গড়ে ২৪ শতাংশ হারে বাড়লেও জেরা’র বিনিয়োগ উল্টোদিকে বাড়ছে। ২০১৯ সালে ৩৩ কোটি ডলারের (প্রতি ডলার ১০০ টাকা হিসেবে তিন হাজার তিনশত কোটি টাকা) বিনিময়ে সামিট গ্রুপের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের ২২ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়ে জেরা বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে। এ কোম্পানির মালিকানায় মহেশখালীতে বার্ষিক ৩৭ লাখ ৬০ হাজার টন (দৈনিক ৫০ কেটি ঘনফুট) সক্ষমতার একটি ভাসমান টার্মিনাল আছে।

গ্যাস সরবরাহ করা হোক বা না হোক, এলএনজি টার্মিনাল বাবদ প্রতিদিন ২ লাখ ১৭ হাজার ডলার (বার্ষিক ৮৭১ কোটি ২৫ লাখ টাকা) ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়। মালিকানার হার অনুসারে জেরা গত চার বছরে (২০১৯-২০২৩) ৬৮৬ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ গ্রহণ করেছে।

সামিট পাওয়ারের ২২ শতাংশ শেয়ার অনুযায়ী জেরা ৪৩১ মেগাওয়াট উৎপাদন-ক্ষমতার মালিকানা ভোগ করে। এছাড়া ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে প্রায় ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের (এক হাজার ৪৭১ কোটি টাকা) বিনিময়ে রিলায়েন্স পাওয়ার কোম্পানির মালিকানাধীন মেঘনাঘাট ৭৫০ মেগাওয়াট (প্রকৃত ৭১৮ মেগাওয়াট) এলএনজি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪৯ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়। এছাড়া কোম্পানিটি এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এডিবি (অউই), জাইকা (ঔওঈঅ), এসএমবিসি (ঝগইঈ), মিজুহো ব্যাংক (গরুঁযড় ) ও এমইউএফজি ব্যাংকের (গটঋএ) কাছ থেকে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার (পাঁচ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা) ঋণের ব্যবস্থাও করে দেয়। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র গত চার বছরে (২০১৯-২০২৩) বায়ুমণ্ডলে অন্যুন এক কোটি ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৩০০ টন গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন করেছে যার মধ্যে ২৫ লাখ ৩৯ হাজার ৫৯২ টন টনের জন্য জেরা সরাসরি দায়ী। উন্নয়নশীল দেশের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) কর্তৃক নির্ধারিত দরে (প্রতিটন ২০ ডলার) নির্গত কার্বনের দাম কমপক্ষে ৫০৩ কোটি টাকা।

জেরা প্রতিবেশগত দেনা পরিশোধ তো করেইনি বরং বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ গ্রহণ করেছে। বিগত চার বছরে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সাত হাজার ১৭৭ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ হিশেবে গ্রহণ করেছে।

যার এক হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা (১৩ কোটি ৯৩ লাখ ডলার) জেরা পেয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) সঙ্গে স্বাক্ষরিত বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি (পিপিএ) অনুযায়ী বিদেশি বিনিয়োগকারী কোম্পানি ক্যাপাসিটি চার্জের অর্থ ফেরত নিয়ে যেতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রার চরম সংকটের সময় এই বিপুল পরিমাণ ডলার দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় তা অর্থনীতির উপর নতুন করে চাপ তৈরি করেছে। বাংলাদেশে নতুন করে দুই বিলিয়ন ডলার (২২ হাজার কোটি টাকা) বিনিয়োগের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সময় জেরা’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তোশিরো কুদামা এদেশে বিকল্প ও নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা বললেও এখন পর্যন্ত জেরা বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে কোনো বিনিয়োগ করেনি।

 

বাংলা গেজেট/এমএএইচ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর