[email protected] মঙ্গলবার, ২৬শে নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পুরোনো ডাক ভবনের আদলে পূজামন্ডপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:
২৩ অক্টোবার ২০২৩, ১৯:০৫

ছবি: সংগৃহীত

শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মীলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। রাজশাহীতে এই পূজায় নতুনত্বের ছোঁয়া লাগে। এবারও ব্যতিক্রম আয়োজন করেছে মাহনগরীর টাইগার সংঘ পূজা মন্ডপ। পুরোনো ডাক বিভাগের আদলে তৈরি করেছে পুজা মন্ডপ।

এই পূজা মন্ডপের সামনে গেলেই চোখে পড়বে হারিয়ে যাওয়া ঐহিত্যবাহী ডাক বিভাগের চিত্র। একসময়ের ডাক হকার হাতে হারিকেন, কাধে লাঠি আর চিঠির বস্তা নিয়ে চিঠি বিলির দৃশ্য।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, পূজা মন্ডপের সামনে সংরক্ষিত করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ছাড়াও ২৪টি চিঠি রয়েছে। বঙ্গবন্ধু ১৯৬৯ সালে মওলানা ভাসানীকে একটি চিঠিতে সে সময়ের দেশের কথা তুলে ধরেছেন। চিঠি রয়েছে, কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়ের হাতে লেখা চিঠি। চিঠিগুলো মণ্ডপের সামনে রাখা হয়েছে। ঢুকতেই দুই পাশে রাখা হয়েছে ঐতিহাসিক ডাকটিকিটের ছবি। ডাকটিকিটগুলোতে গ্রামবাংলার চিত্র ছাড়াও দেশের নানা সাফল্য উঠে এসেছে। এই রকম বড় বড় দুই বোর্ডে ১২টি করে ২৪টি চিঠি রয়েছে।

সতানত ধর্মালম্বীরা বলছেন, এবারের পূজো সকল অমঙ্গল মুছে মানুষের কল্যাণ নিয়ে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা তাদের। রানীবাজারের টাইগার সংঘ মন্ডপ প্রতিবার একটি করে নতুন বার্তা দিয়ে থাকে। এর আগে বাংলাদেশে থেকে বাঘ হারিয়ে যাওয়া এবং তা সংরক্ষণের বার্তা নিয়ে বাঘের মুখ তৈরী করা হয়ছিলো। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, প্রয়াত ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চুর গিটারসহ বিভিন্ন ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছিলো। এবার হারিয়ে যাওয়া ডাক বিভাগের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এক সময় মানুষের চিঠি আদান প্রদানের প্রধান বাহক ছিলো ডাক বিভাগ। ডাক পিয়ন বা ডাক হরকরা হাতে হারিকেন, কাঁধে লাটি আর চিঠির বস্তা নিয়ে বাড়ী বাড়ী পৌছে দিতো সেটাই তুলে ধরা হয়েছে। এসব চিত্র পরবর্তি পুরোনো ইতিহাস সম্পর্কে জানতে ও শিখতে পারবে বলে জানান তারা।

মণ্ডপ ঘুরতে আসা দর্শনার্থী পলি রানী প্রামানিক বলেন, প্রতিবছর টাইগার নতুন কিছু আমাদের উপহার দেয়। এ বছরও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। কখনো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, কখনো বাহুবলী, আবার কখনো আইয়ুব বাচ্চুর রুপালি গিটারের আদলে তৈরি করা হয়েছে পূজামণ্ডপ। শনিবার ও রোববার বিকেল পর্যন্ত দুই দিনে ১৬টি মণ্ডপ ঘুরেছি। এর মধ্যে টাইগারের ডাক ভবন ভালো লেগেছে। প্রতি বছরই এদের মণ্ডপ ভালো লাগে।

আরেক দর্শনার্থী কল্যাণ দত্ত বলেন, টাইগার মণ্ডপ মানুষকে আকৃষ্ট করেছে। বরাবরই করে। কারণ তারা নতুন আইডিয়ায় ভিন্ন থিমের ওপরে মণ্ডপের নকশা করে। যা সকলকে অবাক করে। এ বছরও সবাইকে অবাক করেছে। রাজশাহীতে এমন থিমের মণ্ডপ আর কোথাও নেই। টাইগার সংঘের থিমটি ভালো লেগেছে সবার। তরুণ প্রজন্ম আগের দিনের চিঠির ইতিহাস কিছুটা হলেও জানতে পারবে।

অমলিকা দেবী নামের এক দর্শনার্থী বলেন, টাইগার মণ্ডপে প্রতিবছর দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। এ বছর সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দর্শনার্থীরা পূজা দেখার পাশাপাশি মণ্ডপ দেখতে আসেন। কারণ টাইগার সংঘের একটা সুনাম রয়েছে। তারা বরাবরের মতো চমৎকার করে মণ্ডপ তৈরি করে।

মন্ডপের পুরোহিত সুমন চক্রবার্তী বলেন, এবারের পূজায় মা দূর্গা এসেছেন ঘোড়ায় চড়ে এবং ঘোড়ায় চড়েই গমন করবেন। সেই সাথে অশুভ শক্তিকে বিদায় জানিয়ে শুভ শক্তি সঞ্চার করবেন।

পূজা উদযাপন কমিটি রাজশাহী মহানগর ও টাইগার সংঘ পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পার্থপাল চৌধুরী বলেন,  প্রতিবার পূজোয় ভিন্ন বার্তা আমরা দিয়ে থাকি। বর্তমান ডিজিটাল যুগে মোবাইল ফোনের এসএমএসের ভীরে হারিয়ে যাওয়া চিঠি আদান প্রদানের পুরোনো ঐহিত্য তুলে ধরতে আমাদের এই আয়োজন।
 
একসময় চিঠির ব্যাপক আদান প্রদান ছিল। এই প্রজন্ম চিঠি বা ডাকঘর চেনে না। ডাক থেকে এক সময় সরকার রাজস্ব আয় করতো। কিন্তু এখন কুরিয়ার সার্ভিসের মধ্যে ঝুঁকে গেছে সবাই। আমাদের প্রত্যাশা পুরানো কিছু আবার নতুন করে সবার সামনে তুলে ধরা। বিগত বছরগুলোতে আপনারা দেখেছেন আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, বাহুবলী, আইয়ুব বাচ্চুর রুপালি গিটারে, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, করোনাকালে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্কের আদলে পূজা মণ্ডপগুলো তৈরি করেছি।

এদিকে এই পূজার আনন্দ নির্বিঘ্নে পালন করতে রাজশাহী মহানগরীসহ পুরো জেলা জুড়ে র‌্যাবের নিরাপত্তা বলায় থাকার কথা জানিয়েছেন র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক অধিনায়ক লে. কর্ণেল রিয়াজ শাহরিয়ার।

তিনি বলেন,  র‌্যাব ৫ এর আওতাধীন সকল জেলায় এই নিরাপত্তার চাদরে বিস্তৃত করা হয়েছে। পূজা মন্ডপসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বোম ডিসপোজাল টিম কার্যক্রম চালিয়েছে। যাতে যেকোন উদ্ভূত পরিস্থিতি আমরা মোকাবেলা করতে পারি।নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত সংখ্যক ফোস মোতায়েন করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ভার্চুয়াল জগনের প্রপাগন্ডা চালানো প্রতিরোধে কাজ করছে। সাদা পোষাকে র‌্যাব সদস্যরা তৎপর রয়েছে। এই পূজাকে কেন্দ্র করে কেউ নাশকতা তৈরী করলে কঠোর হস্তে দমন করার কথা জানান র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক।
 

বাংলা গেজেট/এমএএইচ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর