প্রকাশিত:
২৮ সেপ্টেম্বার ২০২৩, ১৪:৩৪
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল ইসলামের স্ত্রী সামাজিক স্বীকৃতি ও সন্তানের পিতৃত্বের অধিকার চেয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে উপজেলা নির্বাহী কার্যালয় চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
পরে ইউএনও'র দেহরক্ষী ওই শিক্ষিকাকে কার্যালয় থেকে বের করে দেন। অপমান ও লাঞ্ছিত সহ্য করতে না পেরে ইউএনও'র কার্যালয়ের সামনে রাস্তায় আত্মহত্যার চেষ্টা করলে লোকজন দিয়ে নিজ কার্যালয়ে ডেকে নেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম আকন্দ। এ সময় প্রধান সড়কে প্রায় আধাঘণ্টা যানচলাচল বিঘ্নিত হয়।
ওই নারীর দাবি, তিনি আক্কেলপুরের ইউএনও আরিফুল ইসলামের বিবাহিতা স্ত্রী। আর তার কোলে থাকা শিশুটি তাদের সন্তান। তিনি দিনাজপুরের কলেজিয়েট গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক পদে রয়েছেন বলেও জানান। এদিকে, ইউএনওর দাবি, গত ২৪ সেপ্টেম্বরে তাকে (স্ত্রী) আইনগতভাবে তালাক দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, তৎকালীন দিনাজপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন আক্কেলপুরের ইউএনও আরিফুল ইসলাম। তখন একটি জমি খারিজ করতে গিয়ে তার (আরিফুল) সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় শিক্ষিকা জিনাত আরা খাতুনের। এরপর ফাইল থেকে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করতেন।
একদিন ওই জমি তদন্ত করতে যান তার বাড়িতে তৎকালীন এসিল্যান্ড। তখন বাড়িতে তাকে একা পেয়ে শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করেন তিনি। পারিবারিক সম্মানের ভয়ে কাউকে বলেননি জিনাত। তারপর থেকে ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্ক করতে বাধ্য করেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রীর পরিচয়ে বিভিন্ন সরকারি রেস্ট হাউজে জিনাতকে নিয়ে যান এই ইউএনও।
সম্পর্কে চূড়ান্ত রূপ দিতে ২০২১ সালে ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বুরুজ গ্রামের জোনাব আলী ছেলে আরিফুল ইসলামের সঙ্গে দিনাজপুর উপশহরের বাসিন্দা মৃত নূরুল হুদার কন্যার জিনাত আরা খাতুনের বিয়ে হয়। এই বিয়েতে কাবিননামা ছিল বিশ লাখ একশত এক টাকা, এর মধ্যে অলংকার বাবদ দশ হাজার টাকা প্রদান করেন ইউএনও। বিয়ের সময় তিনি প্রথম স্ত্রীর পরিচয় গোপন রাখেন। ওই দম্পতির আরাফ ইসলাম জোহান (১ বছর) নামে পুত্র সন্তান রয়েছে।
চলতি বছরে গর্ভবতী হলেও গত ১৫ সেপ্টেম্বরে গর্ভপাতে বাধ্য করেন ওই ইউএনও । কিন্তু হঠাৎ কর্মস্থলে এসে যোগাযোগ বন্ধ করেন দেন ইউএনও আরিফুল ইসলাম। অনেকভাবে যোগাযোগ করেও পায়নি তার স্ত্রী। হঠাৎ প্রথম স্ত্রীর চাপেই তাকে তালাক দেওয়া হয়েছে। এখন স্ত্রী সামাজিক স্বীকৃতি ও সন্তানের পিতৃত্বের অধিকার আদায়ের জন্য এসেছেন।
এ বিষয়ে জিনাত আরা খাতুন বলেন, এখন আমি জানতেছি তার স্ত্রী আছে। কিন্তু আমাকে বিয়ের সময় কাবিননামা অনুযায়ী জানি তার অন্য কোন স্ত্রী-সন্তান নাই। আজ কেন তার স্ত্রী বের হলো। সে কেন আমাকে বিয়ে করলো? সন্তান জন্ম দিলো। আমি কোনো রিকশাওয়ালা, অশিক্ষিত মানুষকে বিয়ে করিনি। ২০ লাখ ১০১ টাকা দেনমোহরে সে আমাকে বিয়ে করেছে বলে কাবিননামায় উল্লেখ আছে। সে ধর্ম মতে আমাকে বিয়ে করেছে, আইনগতভাবে সে আমার স্বামী। সে কি ছোট বাচ্চা? আরেক সংসার বাঁচাতে গিয়ে আরেক স্ত্রীকে ভুলে গেল? আমার কি অপরাধ? বিষয়টি নিয়ে আমি ডিসি স্যারকে জানিয়েছি। তিনি আমাকে বলেছেন একজন নাগরিক হিসেবে আপনার যা করণীয় তাই করেন। আইনানুগ ব্যবস্থা নেন। আমি ডিভোর্স চাই না, টাকা চাই না, সন্তানের বাবাকে চাই। ছেলে তার বাবার আদরটুকু পাবে এটাই চাই। সামাজিক স্বীকৃতি চাই। এখন দিনাজপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি।
জানতে চাইলে ইউএনও আরিফুল ইসলাম বলেন, সে ব্ল্যাকমেইল করে আমাকে বিবাহবন্ধনে জড়ানোর জন্য বাধ্য করেছিল। ডিভোর্স হয়ে গেছে। সে সিনক্রেট করার জন্য এখানে এসেছিলেন। সে এই কাজগুলো করে থাকে। এটা ব্যক্তিগত বিষয় ছিল। আমি আইনগতভাবে সমাধান করেছি।
সন্তান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার তো চরিত্রের ঠিক নেই। এই বিষয়গুলো নিয়ে সে ইস্যু তৈরি করতেছে।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ঘটনাটি আপনারা যা শুনেছেন আমিও তাই শুনেছি। ঘটনার এক পর্যায়ে উনি (ইউএনও’র স্ত্রী) সড়কে এসে বাসের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। পরে পাঁচ মিনিটের মতো গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল।
এ ব্যাপারে জানতে জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজীর মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।
বাংলা গেজেট/এমএএইচ
মন্তব্য করুন: