[email protected] শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর ২০২৪, ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

৭ লাখ টাকা ঘুস দাবির অডিও ভাইরাল

চারঘাট মডেল থানার ওসি প্রত্যাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:
১৮ সেপ্টেম্বার ২০২৩, ০৩:২৬

মাহবুবুল আলম

রাজশাহীর চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল আলমের সাত লাখ টাকা ঘুস দাবির অডিও ভাইরাল হয়েছে। এই কাণ্ডে শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।

ঘটনা তদন্তে রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান। জেলার একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

ফাঁস হওয়া ৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের অডিওটি মূলত: ওসির সাথে কারাগারে থাকা এক ‘মাদক ব্যবসায়ীর’ স্ত্রী সাহারা বেগমের কথোপকথন। থানা কম্পাউন্ডে নিজের বিশ্রামকক্ষে ওই নারীর সাথে মুখোমুখি আলাপ করেন ওসি।

গৃহবধূ সাহারা বেগম জেলার চারঘাট উপজেলার চামটা গ্রামের আব্দুল আলিম রওফে কালুর স্ত্রী। মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়ে কালু কিছু দিন ধরে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন।

কালু দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ ও র্যাবের সোর্স হিসাবে কাজ করে আসছিলেন। গত ইউপি নির্বাচনে চারঘাটের শলুয়া ইউপির ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাহারা বেগম ওসি মাহবুব, ডিবির পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকারসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। সঙ্গে কথোপকথনের রিকর্ডটি জুড়ে দেন।

এসপিকে দেওয়া অভিযোগে সাহারা বেগম বলেন, গত ইউপি নির্বাচনে অংশ নেয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় একটি পক্ষের সঙ্গে তার স্বামীর বিরোধ হয়। ওই প্রতিপক্ষ ডিবি পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকারকে ম্যানেজ করে তার স্বামীকে মাদকের সাজানো মামলায় গ্রেফতার করান। সাহারার দাবি, তার স্বামীকে ডিবি পুলিশ ফাঁসিয়েছে।

এদিকে, ফাঁস হওয়া ওই অডিও রেকর্ডে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচন করতে মন্ত্রী (পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) আমাকে গাইবান্ধা থেকে চারঘাট থানায় নিয়ে এসেছেন। আমি তার কথা ছাড়া আর কারও কথা শুনি না।

চারঘাট এলাকায় গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে মামলা দেওয়ার কারণে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একজন পরিদর্শকের সমালোচনা করেন ওসি। তিনি বলেন, আমাকে দুই লাখ টাকা দেন, কালকেই ডিবির আতিককে বদলি করে দেব।

এর পর গৃহবধূ সাহারা বেগমকে ওসি বলেন, আপনার স্বামী আমার অনেক ক্ষতি করে জেলে গেছে (ওসির বিরুদ্ধে এসপি অফিসে অভিযোগ করেছিলেন কালু)। এবার আপনার পরিবারের কাউকে ধরলে ১০ লাখ টাকার কমে ছাড়তে পারব না।

এর পর ওসি বলেন, এখনো তোমার গায়ে আমি আঁচড় দিইনি। বহুত ফাঁকি দিয়েছ। কালকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখন সে রকম সময় নয় যে কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে কথা দিয়ে এসেছি। স্যারকে বলেছি, এখানে মাদক ছাড়া টাকার আর কোনো উৎস নেই।

ওসি আরও বলেন, ‘মুক্তার বিরুদ্ধে (চারঘাটের মাদকসম্রাট ও নারীর প্রতিপক্ষ) এখন অ্যাকশন নিতে পারব না, শুভর বিরুদ্ধেও (ছাত্রলীগ নেতা ও মাদক কারবারি) অ্যাকশন নিতে পারব না। তোমরা ৫ লাখ টাকা দিতে পারবা? ধরে ওদের চালান দিয়ে দেব। থাকি না থাকি ওদের সাইজ করব আমি। তোমরা এলাকার বাইরে থেকে মাদক ব্যবসা করবে। কোনো সমস্যা নেই।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকার আতিকের সমালোচনা করে ওসি মাহবুবকে বলতে শোনা যায়, নির্বাচনের আগে শুভকে ধরতে পারব না। সব কথা ভেঙে বলব না। কথা সব হয়ে গেল; যদি আতিকের বদলি চাও আরও দুই লাখ টাকা দাও। কালকেই আতিকের বদলি হয়ে যাবে।

ওসি মাহবুবকে আরও বলতে শোনা যায়, ৫ লাখ আর ২ লাখ মিলে মোট ৭ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করো। আতিক বাদ, ওই দুজনকে (মুক্তা ও শুভ) ট্যাকেল দেওয়ার দায়িত্ব আমার। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর মন্ত্রীকে বলে ওই দুজনকে ধরে অ্যারেস্ট করে চালান করে দেব। আমার সব ওপরের লাইন। যে টাকা দিবা এই টাকাই ওপরে কাজ করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাহারা বেগম বলেন, এর পর থেকে এলাকার মুক্তা, শুভ ও সাব্বিরের সঙ্গে আমার স্বামীর বিরোধ বাধে। এর জের ধরে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করায় তারা। ডিবিকে তারা ম্যানেজ করে।

সাহারা আরও বলেন, চারঘাটের চামটা গ্রামের মুক্তা, শিবপুর গ্রামের সাব্বির ও শলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ শুভ আমার কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। একইসঙ্গে টাকা না দিলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়। সেই অভিযোগ করতে থানায় গেলে ওসি ৭ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে আমাকে মাদকের ব্যবসা করতে বলে। তাতে আমি রাজি না হলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি মাহবুবুল আলম বলেন, আমার কাছেও অডিওটা এসেছে। কিন্তু কীভাবে হয়েছে আমি জানি না। এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে থানা থেকে প্রত্যাহার হবার বিষয়টিও স্বীকার করেন তিনি।

এবিষয়ে রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ও মিডিয়া সেলের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, আমরা অডিও রেকর্ডসহ একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

বাংলা গেজেট/এফএস


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর