প্রকাশিত:
১০ আগষ্ট ২০২৩, ২৩:৩৮
সারা দেশের মত রাজশাহীতেও ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। রাজশাহী মেডিকেল (রামেক) কলেজ হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর চাপ বাড়ায় দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। তবে, ওয়ার্ড বাড়ানোর কথা ভাবেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আগে বেশিরভাগ রোগীই ছিল রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার। তবে বর্তমনে এই রোগীদের একটি বড় অংশই রাজশাহীর। অর্থাৎ রাজশাহীতেও ছড়িয়ে পড়ছে ভয়াবহ এ ডেঙ্গুর প্রকোপ। ফলে ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বাড়ছে রাজশাহীতেও।
গত মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) থেকে বুধবার (৯ আগস্ট) পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দুজন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ইনচার্জ ডা. তানজিলুল বারী।
তিনি বলেন, বুধবার ভোর সোয়া চারটার দিকে দুজন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে। দুজনেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বাসিন্দা। এর মধ্যে আয়ুব আলী ঢাকা ফেরত ছিলেন। আর সৈকতের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৫০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি হয়েছে ৩০ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১৬ জন। বুধবার সকাল পর্যন্ত রামেক হাস্পাতালে চলতি বছর চিকিৎসা নিয়েছে ৪৭৩ জন। এদের মধ্যে স্থানীয় রোগী ভর্তি হয়েছে ১৫৯ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৯০ জন। মারা গেছে ৩ জন।
তিনি আরও বলেন, রামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের শতভাগ চিকিৎসা দেওয়া হয়। আমাদের এখানে যাবতীয় চিকিৎসার সামগ্রী রয়েছে। প্রায় ৯৫ শতাংশ ডেঙ্গু রোগীরা এখানে পরীক্ষা করে।
চিকিৎসা নিতে এসেছেন নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকার মুরারিপুর গ্রামের কাউসার আলী (২৩)। তিনি জানান, আজকে হাসপাতালে তিনদিন যাবৎ ভর্তি আছি। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে তিনদিন পর রিপোর্টে পজেটিভ এসেছে। তাই আজকে সকালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে দিয়েছে। এখনো বেড (শয্যা) পাইনি। অনেক রোগীর চাপ। আমরা সকাল থেকে এখানে আসতে আসতেই পাঁচ থেকে সাতজন এসেছে। সবাই এই রোগে আক্রান্ত। এখন বেড (শয্যা) না পাইলে তো কিছু করার নাই, এভাবেই নিচে থাকতে হবে।
রাজশাহীতে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে সেবা দেওয়া দুরূহ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করেছেন রাজশাহী মেডিকেল (রামেক) কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ। তিনি জানান, রাজশাহীতে কয়েকদিন ধরে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। এতে রাজশাহীর মানুষকে সচেতন থাকতে হবে।
তিনি বলেন, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহের চেয়ে আগস্টের শুরু থেকেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য হাসপাতালের একটি বিশেষায়িত টিম এখন কাজ করছে। মজুদ রাখা হয়েছে ওষুধপত্রও। তবে এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খেতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন হাসপাতালের পরিচালক।
রামেক হাসপাতাল পরিচালক আরও বলেন, চলতি ডেঙ্গু মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৪৭৩ জন ডেঙ্গু রোগীকে এ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩ জন রোগী। আর চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৩৯০ জন রোগী। সময় থাকতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাই সচেতন না হলে সামনে এ হাসপাতালের রোগীদের চিকিৎসা দিতে আরও বেগ পেতে হবে বলে জানান তিনি।
এমন আশঙ্কার কথা ভেবেই জরুরি ভিত্তিতে সচেতনতা বাড়ানোসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে (রাসিক) চিঠিও দিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখানে বলা হয়েছিলো, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিশেষায়িত ওয়ার্ড প্রস্তুত করে ডেঙ্গু রোগীদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ যথাযথ চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। জটিল ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আইসিইউসহ অন্যান্য চিকিৎসা সেবাও প্রস্তুত রয়েছে। ডেঙ্গু রোগ পরবর্তীতে ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত রোগ যা নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। রাজশাহীতে ডেঙ্গু রোগ অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়লে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা কষ্টকর হয়ে পড়বে। বিষয়টি বিবেচনা করে জরুরি ভিত্তিতে মশক নিয়ন্ত্রণ জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ করে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের উপ-প্রধান পরিছন্ন কর্মকর্তা সেলিক রেজা রঞ্জু বলেন, এ লক্ষ্যে মহানগরবাসীকে সম্পৃক্ত করে এ কাজ বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে পর্যায়ক্রমে এ অভিযান কার্যক্রম পরিচালিত করা হচ্ছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। রাসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবসময় তৎপর রয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এএফএম আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাসিক শুরু থেকে সতর্ক রয়েছে। এরই মধ্যে ৩০টি ওয়ার্ডের সচিব, মশক পরিদর্শক ও সুপারভাইজারদের নিয়ে সভা করা হয়েছে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর ব্যাপারে মহানগরবাসীকে সতর্ক করতে অ্যাডভোকেসি সভা করা হচ্ছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, জনসচেতনতা এবং মশার বংশবিস্তার রোধের বিকল্প নেই। যেসব কার্যক্রম চলছে তা আরও বাড়ানো হবে। ব্যক্তি মালিকানাধীন কোনো বাড়ি, ভবন ও প্রতিষ্ঠানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার জানান, এ বছরের শুরুতেই রাজশাহী বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ধরা পড়ে। সিটি করপোরেশন র্যানডম সিলেকশনের মাধ্যমে এলাকার বিভিন্ন বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এতে কয়েক যায়গায় এজিপ্টাই মশার লার্ভা পাওয়া যায়। আর এজিপ্টাই এবং এলবোপিক্টাস এ দুই প্রজাতির লার্ভাই মিলেছে। আর এ দুটো মিলে জুলাই-আগস্টে ডেঙ্গু ছড়াতে থাকলে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হতে পারে। তাই এ লার্ভা ধ্বংসের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ সিটি করপোরেশনের কথা বলে একসাথে কাজ করবে।
বাংলা গেজেট/এমএএইচ
মন্তব্য করুন: