প্রকাশিত:
১৪ সেপ্টেম্বার ২০২৩, ০৩:৪৩
দুর্লভ ঐতিহ্যের ধারক রাজশাহীর ‘বরেন্দ্র জাদুঘর’। এটি দেশের প্রথম জাদুঘর। বলা হয়ে থাকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা। শুধু ‘বরেন্দ্র জাদুঘর’ নয়; এবার কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের শহরে চালু হচ্ছে চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক জাদুঘর। যার নাম দেওয়া হয়েছে ফিল্ম অ্যান্ড কালচারাল আর্কাইভ।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রায় ৯০০ মিটার দক্ষিণ-পূর্ব কর্নারে অবস্থিত শিরোইল উচ্চ বিদ্যালয়। তার পাশ ঘেষেই নির্মাণ হচ্ছে দেশের প্রথম ফিল্ম অ্যান্ড কালচারাল আর্কাইভ। যেখানে ঠাঁই পেয়েছে বহু বছরের পুরোনো রেডিও, ক্যাসেটপ্লেয়ার, ভিডিওপ্লেয়ার, ক্যামেরা ও প্রজেক্টরসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র।
রাষ্ট্রীয় কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলেও ব্যক্তি উদ্যোগে এই কাজ শুরু করেছেন রাজশাহীর চলচ্চিত্র সংগঠক ও নির্মাতা আহসান কবীর লিটন। এমন ‘আর্কাইভ’ তৈরির স্বপ্নটা ১০ বছর আগে হলেও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। তবে নিমার্ণ কাজ শেষ হলে দ্রুতই সংগ্রহশালাটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা জানান এই উদ্যোক্তা।
রুমে ঢুকতেই চোখে পড়বে বায়োস্কোপ। তার পাশে রয়েছে শত বছরের পুরানো ম্যাজিক লণ্ঠন প্রজেক্টর। রেডিও, ভাল্ব রেডিও ছাড়াও দেশে-বিদেশে চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম। যেগুলো একসময় চলচ্চিত্র তৈরিতে ব্যবহার হয়েছে। শত বছরের পুরোনো এমন সরঞ্জামগুলো দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ‘ফিল্ম অ্যান্ড কালচারাল আর্কাইভ’।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যবহার হওয়া এসব যন্ত্রপাতির সমাহার তার কাছে। কখনও কিনেছেন, কখনও সম্পর্কের খাতিরে পেয়েছেন। আবার কখনও বা বিদেশ ভ্রমণ করে কিনে আনতে হয়েছে লিটনকে। যদিও দুর্লভ সরঞ্জামগুলো সংগ্রহ অবস্থায় থাকায় ‘ফিল্ম অ্যান্ড কালচারাল আর্কাইভ’ এখনও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। তবে আগামী নভেম্বরের শুরুতে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করার কথা ভাবছেন পরিচালক লিটন।
আহসান কবীর লিটন বলেন, অনেক দুর্লভ ক্যামেরা, ম্যাজিক লণ্ঠন, সাদা কালো টেলিভিশন, শারদ শঙ্খ, নাগরার ঢোলক, ঢোল, একতারা, দোতারা, সারিন্দা, ডুগি ডুগডুগি, বিন রয়েছে। আমরা তিনটি রুম নিয়ে শুরু করেছি। তবে এখনও দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেইনি। আশা করছি আগামী নভেম্বর মাসের শুরুর দিকে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, এখানে ১৫০০টি বিভিন্ন দুর্লভ বই রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের ১৯৭০ সালের কিছু বইয়ের পাশাপাশি হুমায়ুন আহমেদের বেশ কিছু বই রয়েছে। আমার টার্গেট ১০ হাজার বইয়ের। কাজ করছি। আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমাদের বিভিন্ন উপহার দিচ্ছেন। সেগুলো আমরা এখানে রাখছি।
সংগ্রহ বেশি হওয়ায় বিভিন্ন সরঞ্জাম প্রর্দশনী করতে পারছে না। তারপরেও প্রয়োজনীয় কিছু সরঞ্জাম সাজানো হয়েছে। তবে এখনও সেগুলোর নাম পরিচয় যুক্ত বর্ণনা দেওয়া হয়নি। পুরোপুরি কাজ শেষ হলে প্রত্যেকটি সরঞ্জামের আলাদা আলাদা পরিচয় দেওয়া হবে বলে জানান-ফিল্ম অ্যান্ড কালচারাল আর্কাইভ’ এর কিউরেটর শামীউল আলীম শাওন।
শামীউল আলীম শাওন বলেন, এই আর্কাইভে বিভিন্ন চলচ্চিত্রে ব্যবহার হওয়া ক্যামেরা, ভিডিও, ম্যাজিক লণ্ঠন রয়েছে। এছাড়া বায়োস্কোপ, প্রজেক্টর, টেলিফোন, রেডিও তাদের সংগ্রহে রয়েছে। আমাদের এখানে পুরানো কোনো জিনিস কেউ দিলে আমরা নিচ্ছি।
একটা সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষ বিভিন্ন সিনেমা দেখতেন সিডি বা ডিভিডিতে। এর আগে ১৯০০ সালের দিকে ম্যাজিক লণ্ঠন ক্যামেরার ব্যবহার ছিল। সেগুলো এখন বর্তমানে যুব সমাজের কাছে কাল্পনিক। এমন ঐতিহ্যবাহী জিনিস দেখে উচ্ছ্বসিত তারা।
দর্শনার্থী সুমাইয়া আকতার বলেন, এমন উদ্যোগ ব্যক্তিগত প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। তিনি অনেক পুরোনো বিভিন্ন চলচ্চিত্রের সরঞ্জাম এক ছাদের নিচে নিয়ে এসেছেন। এখানে ঢুকলে মনে হয়ে যাবে ছেলে বেলায় ফেলে আসা বিভিন্ন স্মৃতি। সাদাকালো টেলিভিশন দেখে মনে পড়ে যায় ক্লিয়ার ছবি দেখতে অ্যান্টিনিয়ার ঘুরানোর কথা। বায়োস্কোপ দেখে মনে হয় গ্রামের মেলার কথা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি সাজ্জাদ বকুল বলেন, সংগীতাঙ্গনের নানা বাদ্যযন্ত্র রয়েছে। এগুলো দেশ ও দেশের বাইরে থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। সমৃদ্ধ একটা ‘ফিল্ম অ্যান্ড কালচারাল আর্কাইভ’ হতে যাচ্ছে। অনেক পুরানো জিনিস এখানে স্থান পেয়েছে। দেশে-বিদেশে চলচ্চিত্রে ব্যবহার হওয়া বিভিন্ন জিনিস এখানে রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে বায়স্কোপ, ম্যাজিক লণ্ঠন ক্যামেরা, সাদা কালো টেলিভিশন। এগুলো দেখে মনে হয়েছে কীভাবে পরিবর্তন হলো আজকের চলচ্চিত্র। একটা সময় ছিল, বিনোদনের একমাত্র মাধ্যমই ছিল ম্যাজিক লণ্ঠন। কালের বির্বতনে হারিয়ে গেছে এসব বস্তু। তাই এসব হারিয়ে বস্তু সংগ্রহে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলা গেজেট/এমএএইচ
মন্তব্য করুন: