[email protected] শনিবার, ২৩শে নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

তিনগুণ দাম দিলেই মিলছে কলেরা স্যালাইন!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:
১৪ সেপ্টেম্বার ২০২৩, ০৩:৪০

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীতে কলেরার স্যালাইন সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। তবে দুই থেকে তিনগুণ বেশি টাকা দিলেই কপালে জুটতে পারে এই দুর্লভ প্রতিষেধক দ্রব্য। তাছাড়া আসল দামে দুই শতাধিক ওষুধের দোকানের কোথাও মিলছে না এই স্যালাইন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল সংলগ্ন নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় রয়েছে প্রায় দুই শতাধিক ওষুধের ফার্মেসি। বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর)  লক্ষ্মীপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফার্মেসিগুলোয় ১০০ বা ৫০০ মিলিলিটারের কোনো স্যালাইনই পাওয়া যাচ্ছে না। একটি দোকানেও নেই কলেরার স্যালাইন। বেশকিছু দিন ধরে এমন অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন ফার্মেসি মালিকেরা। ফার্মেসির মালিকেরা বলছেন, ওষুধ কোম্পানি স্যালাইনের সরবরাহ ৫০ শতাংশে নামিয়ে দিয়েছে। ফলে এখন স্যালাইন দোকানে মজুত থাকছে না। এতে আমাদেরকেও বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজশাহীতেই স্যালাইনের সরবরাহ কমানো হয়েছে। ফলে কেউ কেউ চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে স্যালাইন এনে বাড়তি দামে বিক্রি করছেন।

কলেরার স্যালাইন নিয়ে রোগীর কাছে যাচ্ছিলেন গোলাম রাব্বানী নামে এক ব্যক্তি। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘পুরো লক্ষ্মীপুর এলাকা ঘুরেও তিনি তার রোগীর জন্য কলেরার স্যালাইন পাননি। পরে একটি ক্লিনিকের এক কর্মচারীর মাধ্যমে ৩০০ টাকা দিয়ে একটি স্যালাইন কেনেন। পরে ৯০ টাকার স্যালাইন কিনতে হলো ৩০০ টাকায়। পাওয়া গেছে এটাই অনেক।

দুই দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন রাজশাহীর পুঠিয়া থেকে আসা মানিক হোসেন। তার জন্য ডাক্তার স্যালাইন লিখে দেন। তার চাচা আশিকুজ্জামান গোটা শহর ঘুরে পাননি একটিও স্যালাইন। ৩০০ টাকা দিয়ে বাধ্য হয়ে নিতে হয়েছে। আশিকুজ্জামান জানান, তিনি হতাশ হয়ে ফিরে পরিচিত এক নার্সের দ্বারস্থ হন। পরে তার সহযোগিতায় হাসপাতালের সামনের একটি ফার্মেসিতে স্যালাইন মেলে।

শুধু মানিক হোসেন নন, প্রতিদিন এমন দুর্ভোগে পড়ছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শত শত রোগী ও তাদের স্বজনরা। স্যালাইনের খোঁজে গোটা শহরের ফার্মেসিগুলো চষে বেড়ালেও কাঙ্ক্ষিত স্যালাইন মিলছে না। যারা পাচ্ছেন তাদের বেশি দাম দিয়েই কিনতে হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, স্যালাইনের সংকটের কারণে ফার্মেসি মালিকেরা বেশি টাকা ছাড়া বিক্রিই করছেন না। এমন অভিযোগে গত ৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাসুম আলী লক্ষ্মীপুর এলাকার ফার্মেসির দোকানগুলোয় অভিযান চালান। এ সময় ৯০ টাকার স্যালাইন ২০০ টাকায় বিক্রি করার অপরাধে আলিফ লাম মিম ও আরোগ্য নিকেতন নামে দুটি ফার্মেসিকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

লক্ষ্মীপুর এলাকার কয়েকটি ফার্মেসির মালিকেরা জানিয়েছেন, তারা চাইলেও কোম্পানি স্যালাইন সরবরাহ করছে না। ফলে রোগীদের চাহিদা মতো স্যালাইন দেওয়া যাচ্ছে না। সবচেয়ে বেশি সংকট হচ্ছে কলেরার স্যালাইনের। রোগীদের এই স্যালাইন দেওয়া যাচ্ছে না। কেউ কেউ বেশি দামে কোনো কোনো স্থান থেকে স্যালাইন সংগ্রহ করছেন। সেগুলো বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর এলাকার ওল্ড রাজশাহী ফার্মেসির মালিক মো. ডন বলেন, স্যালাইনের সংকট আছে। তবে আমরা বাড়তি দামে বিক্রি করছি না। অন্যরা কেউ করলে করতে পারে। আমাদের দোকানে বাড়তি দামে স্যালাইন বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। অল্প কিছু স্যালাইন পেলে নির্ধারিত দামেই দিচ্ছি।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাসুম আলী বলেন, স্যালাইনের সংকট এবং বেশি দামে বিক্রির বিষয়টি নজরদারির জন্য অধিদপ্তর থেকেই বলা হয়েছে। আমরা মনিটরিং করছি। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা কিংবা বেশি দামে বিক্রি করতে দেখা গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহম্মদ বলেন, আমি সব ওয়ার্ডেই কথা বলেছি। কেউ বলেনি যে স্যালাইনের সংকট হয়েছে। আমাদের সব ধরনের স্যালাইন আছে। প্রয়োজন অনুযায়ী রোগীদের সব স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। ফার্মেসিতে স্যালাইনের সংকট থাকলেও এখনো রামেক হাসপাতালে কোনো সংকট হয়নি।

 

 

বাংলা গেজেট/এমএএইচ


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর