[email protected] রবিবার, ২৪শে নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

জবিতে পরিকল্পিতভাবে ইমামকে অব্যহতি

মর্নিং টাইমস

প্রকাশিত:
২৮ মে ২০২৪, ২৩:১৩

ছবি : সংগৃহীত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) কেন্দ্রীয় মসজিদের প্রধান ইমামকে পরিকল্পিতভাবে হয়রানি ও অব্যহতি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

গত ১৬ সে ইমাম (খতিব) মাওঃ মোঃ ছালাহ উদ্দিনকে মৌখিকভাবে অপসারণ, ইমামতি করতে নিষেধাজ্ঞা ও বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যাওয়ার জন্য মৌখিকভাবে বলা হয়েছে।

নতুন ঘটনার জন্ম দেয়া নারী শিক্ষার্থীর নাম মহিমুনা আক্তার মুনমুন, গ্রাম: বলেয়াপাড়া, পো: পঞ্চগড়, জেলা: পঞ্চগড়। মুনমুন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের (১৬ তম আবর্তন) শিক্ষার্থী। গত ২০ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখে একমাত্র ছাত্রীহলে সিট পান মুনমুন। সিট পাওয়ার ক্ষেত্রে উপাচার্য সাদেকা হালিম ও রেজিস্ট্রার আইনুল ইসলামের সুপারিশ ছিল বলে জানান একাধিক সুত্র।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রক্টর অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, রাতের একটা মেয়েকে মসজিদে পাওয়া গেছে। মেয়েটা মসজিদে কেন শুয়ে থাকবে। ইমাম সাহেব সেখানে ছিলেন। এটাতো সেনসিটিভ ইস্যু। ঘটনা কী হয়েছে তা বের করার জন্য একটা তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আর ইমামকে আপাতত নামাজ পড়াতে না বলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের এমন বক্তব্য সাজানো নাটক ও পরিকল্পিত মনে করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন মসজিদে মেয়েদের নামাজের স্থানে মেয়ে শুয়ে থাকার দায়ে ইমাম অব্যহতি পেলে, ছাত্রী নিহতের ঘটনায় ভিসিকে কেন অব্যহতি দেয়া হয়নি! তাদের দাবি গত ১৭ মার্চ বিভিন্ন ধর্মের নারী পুরুষ (অনেক নারী জুতা পরিহিত) নিয়ে নারী উপাচার্য মসজিদে প্রবেশ করায় ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে, ইমাম গণমাধ্যমকে বলেছেন 'আমি নারীদের বসার জন্য মেয়েদের স্থান নির্ধারন করেছি, তারা মুল মসজিদে প্রবেশ করেন'। তার এই বক্তব্য কাল হয়ে দাড়িয়েছে সেজন্য নারী শিক্ষার্থী দিয়ে একটি সাজানো নাটক তৈরি করেছে প্রশাসন। ঘটনার সুত্রাপাত এখান থেকেই বলে মনে করেন তারা।

এদিকে ঘটনার ট্রাম কার্ড, মসজিদে শুয়ে থাকা নারী শিক্ষার্থীও ইমামকে নিয়ে কোনো অভিযোগ করেন নি। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মেয়েটির সাথে যোগাযোগ করা হলে মেয়েটি জানান, ঘটনাটি ছিলো ১৮ মে রাতে প্রায় ১০ টা ৩০ এর দিকে। আমি ঐ দিন মসজিদে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। পরবর্তীতে আমাকে মসজিদের দায়িত্বে থাকা একজন দেখতে পেলে তিনি তার সাথে একজন মহিলা ( হয়তো ওনার স্ত্রী হবে) আমাকে ঐ রুম থেকে বের করে আনেন। ইমাম সাহেব তখন ভিতরেই প্রবেশ করেন নি। পরে বাইরে আসলে ঐ খানে থাকা অবস্থায় ইমাম সাহেব প্রক্টর স্যারকে কল দেন। সেখানে প্রক্টর স্যারের সাথে মোবাইলে আমার কথা হয়। প্রক্টর স্যার আমাকে বলেন, তুমি তোমার হলের হাউজ টিউটরকে কল দাও। পরবর্তীতে আমি আমার হাউজ টিউটরকে কল দিলে উনি বলেন, আচ্ছা তুমি হলে চলে আসো।

সাংবাদিকের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি নিজেও গতরাতে নিউজটা দেখেছি। একটা সিম্পল ইস্যুকে অনেক বড় করে ফেলা হয়েছে। ঐখানে তেমন কিছুই ঘটেনি। ইমাম সাহেবের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা।

এ বিষয়ে মেয়েটি আরো বলেন, ইমাম সাহেব নিজেই প্রক্টরকে কল দিলে আমি স্যারের সাথে কথা বলেছি। আর ইমামের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ তোলা হচ্ছে সব মিথ্যা বলে জানিয়েছেন ঐ শিক্ষার্থী।

এ ঘটনায় আয়নাবাজি করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের একেক সময়ে একেক তথ্য ও মনগড়া বক্তব্য দিয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রক্টর জাহাঙ্গীর হোসেন ঢাকা মেইল কে ঘটনা সময় বলে ১১:৩০ মিনিটের দিকে, প্রথম আলোকে বলে ১৬ মে রাত ১২:৩০ , বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কে বলে ১৫ মে ১১:৪৫ , আজকের পত্রিকাকে বলে গত ৬ মে রাত সাড়ে ১১টা , রাইজিং বিডিকে বলেন গত ৬ মে রাত সাড়ে ১১টার দিকে , সংবাদ কে বলে ১১:৩০ এর দিকে।

ঘটনার বিষয়ে জানতে ইমাম হাফেজ মাওঃ মোঃ ছালাহ্ উদ্দিনকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমি ওই ছাত্রীকে চিনি না। মসজিদের ভেতরে একজন মেয়ে শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন জেনেই আমি প্রক্টরকে জানিয়ে ছিলাম। আমার মাঝে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য থাকলে আমি নিজে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরকে বিষয়টি অবগত করতাম না। আর এখন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বাদ দিয়ে দিচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ১৭ই মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ভেতরে অনুষ্ঠিত এক দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে জবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম পুরুষদের নামাযের অংশে অন্যধর্মালম্বী শিক্ষকদের নিয়ে পুরুষদের সামনে বক্তৃতা পেশ করেন। বক্তব্য দেওয়ার আগে উপাচার্যকে মসজিদে ভেতরে এভাবে বক্তব্য না দিতে অনুরোধ জানান সেই ইমাম। আর এতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ অনেকেই এই ঘটনায় ইমামের উপর ক্ষুদ্ধ হন। ওই ইমাম বিগত ১৫-১৬ বছর এই মসজিদে ইমামতি করেন। তবে কখনো উনার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উঠেনি।

তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত হলো তুচ্ছ ঘটনায় নাটক সাজিয়ে ইমামকে ফাঁসানো হয়েছে, তিনি সাধাসিধে মানুষ। ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার পর গত ১৭ মার্চ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে মসজিদের ভিতর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম মসজিদে প্রবেশ করেছিলেন ও সবার সামনে বক্তব্যও দিয়েছিলেন, বিষয়টি দেশব্যাপী বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। তিনি ওই মন্তব্য দেওয়ার পরই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয় বলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধারণা।

নারী পুরুষ এক সাথে মসজিদে প্রবেশের ব্যাপারে ইমাম সাহেব গণমাধ্যমকে আরো বলেন, ‘আমি সকাল থেকেই উপাচার্য জন্য মহিলাদের নামাজের স্থানে নিজে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে বসার জায়গা করেছিলাম, কিন্তু প্রক্টর এসে বলেছেন ছোট জায়গায় উপাচার্য কেন বসবে? উপাচার্য মূল মসজিদেই বসবেন, আমি বাধ্য হয়েই সেটা মেনে নিয়েছি। মসজিদের ভিতর নারী পুরুষের একসাথে অবস্থান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।’

দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগের ঘটনার বিষয়ে জানতে মসজিদের ইমাম ছালাহ্ উদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না বলে প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন তিনি।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর