[email protected] সোমবার, ২৫শে নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বিতর্কিত শিক্ষককে রেজিস্ট্রার করলেন জবি উপাচার্য সাদেকা হালিম

মর্নিং টাইমস

প্রকাশিত:
১৭ এপ্রিল ২০২৪, ২২:২১

ছবি সংগৃহীত

যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে অপসারিত করা হয় অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলামকে। সম্প্রতি সেই বিতর্কিত শিক্ষককে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। জবি উপাচার্যের নির্দেশক্রমে গত ১২ মার্চ উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ আব্দুল হালিমের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা যায়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম এ দায়িত্ব পালন করবেন।

 

জানা গেছে, জবি অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম নিয়ম ভঙ্গ করার ঘটনায় ২০১১ সালের ১৫ মার্চ ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের পদ থেকে অপসারণ করা হয়। ২০১০ বছরের ২২ জুলাই এ বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর এবং বাংলা বিভাগের এক সহকারী শিক্ষিকার সঙ্গে বিতর্কিত ঘটনায় যুক্ত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এ পদ থেকে আইনুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়। ২০১১ সালের ১৫ মার্চ মাসে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির তৎকালীন ভিসি ও সিন্ডিকেট সভাপতি অধ্যাপক ড. সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদের সভাপতিত্বে সিন্ডিকেট সভায় সিন্ডিকেট সদস্য তৎকালীন ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের এমপি অ্যাডভোকেট রেজা আলীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। এ-সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি ওই কেলেঙ্কারির ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর শামসুদ্দিন চৌধুরীকেও অপসারণ করা হয়। ওইসময়ে বিভিন্ন পত্রিকায় বিষয়টি গুরুত্বসহকারে ছাপানো হয়।


সম্প্রতি যৌন নিপীড়ন অভিযোগে অবন্তিকার আত্মহত্যায় ঘটনায় উত্তাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাথে সাথে সহপাঠী আম্মানকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে প্রক্টর থেকে বহিষ্কার ও একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মিমের সাথে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে বিভাগের প্রভাষক আবু শাহেদ ইমনকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীকে অসহযোগিতা করায় বিভাগের প্রধান জুনায়েদ হালিমকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।


নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, জবি ক্লিন ইমেজের এত শিক্ষক থাকতে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে অপসারিত বিতর্কিত শিক্ষককে কেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার করতে হবে। যৌন কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত শিক্ষকদের সাম্প্রতিক সময়ে সিন্ডিকেট করে যেখানে বহিষ্কার ও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। আর অন্য দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পদ রেজিস্ট্রারে যৌন কেলেঙ্কারির দায়ে অপসারিত শিক্ষককে রেজিস্ট্রার করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।


যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগে কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে অপসারিত এই শিক্ষককে জবি রেজিস্ট্রার করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরাও। নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, যৌন কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত এই শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার তো দূরের কথা শিক্ষক হিসেবে রাখার কথা না। সেখানে কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদ রেজিস্ট্রার দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখার জন্য অনুরোধ করেন তারা।


জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ১৩ ধারা ব্যতয় ঘটিয়ে শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কর্মকর্তারাও। তারা বলেন, সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে যে কাউকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দিয়ে পরে নতুন রেজিস্ট্রার নিয়োগ দিত কিন্তু সেটা না করে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ১৩ ধারা ব্যতয় ঘটিয়ে শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দায়িত্ব দিয়েছেন।


জানা যায়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন রেজিস্ট্রার নিয়োগের জন্য গত ৩১ জানুয়ারি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই বিজ্ঞপ্তিতে যোগ্য প্রার্থীদের আবেদন মার্চ মাসের ১৮ তারিখের মধ্যে অফিস সময়ে জমা দিতে বলা হয়েছিল। তাদের আবেদনের মেয়াদ প্রায় এক মাস হয়ে গেল কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কিছু জানানো হয়নি। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দিয়ে চলছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম।


যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে অপসারণের বিষয়ে অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, যৌন কেলেঙ্কারির একটি ঘটনা ঘটেছিল, এটি সত্য। তবে তৎকালীন তদন্ত কমিটি সেখানে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা পায়নি। ঘটনা ঘটেছিল বাংলা বিভাগের দুই শিক্ষকের মধ্যে।


এবিষয়ে জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, আমিতো তার যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগে কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে অপসারণের বিষয়ে জানিনা। আমি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। আমিতো জানতাম তার একটা গ্রহণ যোগ্যতা আছে। বিষয়টি তাহলে খতিয়ে দেখতে হবে।###


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর