[email protected] সোমবার, ২১শে এপ্রিল ২০২৫, ৭ই বৈশাখ ১৪৩২

ট্রাম্প শুল্কে বিপাকে বাংলাদেশ, সুবিধা ভারতের

আবদুর রহিম হারমাছি

প্রকাশিত:
৪ এপ্রিল ২০২৫, ২৩:০৫

কর্মব্যস্ত পোশাক শ্রমিকরা।

বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক, আর এই পণ্যের বড় গন্তব্য হলো যুক্তরাষ্ট্র। ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক হার বাংলাদেশের জন্য মাথাব্যথার কারণ হওয়াটা স্বাভাবিকই।

কিন্তু সেই মাথাব্যথাটা আরও বাড়ে, যখন সেই বাজারে বাংলাদেশের অন্য প্রতিযোগীদের ওপর শুল্ক হারে বিভিন্নতা থাকে।

যদি বাংলাদেশের চেয়ে শুল্ক হার বেশি হয়, তাহলে নতুন সুযোগ তৈরি হয়। যেমন চীনের ওপর বেশি শুল্ক ধার্য করায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা খুশি হয়েছিলেন গত জানুয়ারিতেই।

চীন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ দেশ। তাদের ওপর বাড়তি শুল্কের পর বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানি গিয়েছিল বেড়ে। বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা পালে হাওয়া দেখছিলেন।

কিন্তু সেখানে বজ্রাঘাত এল বুধবার; যখন ট্রাম্প শতাধিক দেশের জন্য পাল্টা শুল্ক আরোপ করলেন বিভিন্ন হারে।

তাতে চীনের পাশাপাশি ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক ধরা হলেও বাংলাদেশের চেয়ে শুল্ক কম ধরা হয়েছে ভারতের। আর এতেই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন বাংলাদেশের শীর্ষ রপ্তানিকারকদের একজন ইভিন্স গ্রুপের কর্ণধার, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ।

কারণ তিনি দেখছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে এখন বাংলাদেশকে টপকে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে ভারতের।

পারভেজ বলেন, এমনিতেই গত বছর থেকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য বায়ারদের কাছ থেকে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছিলেন তারা। এখন যোগ হলো শুল্ক। আর এতে ভারতের সুবিধা নেওয়ার সুযোগ তৈরি হলো।

ভারতে রপ্তানিকারকদের সংস্থা ফিকোর মহাপরিচালক অজয় সাহা বলেছেন, “আমরা নিঃসন্দেহে ক্ষতিগ্রস্ত হব। তবে অন্য অনেক দেশের তুলনায় আমরা কিছুটা ভালো অবস্থায় আছি।”

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীন ও ভিয়েতনামের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। তার ঠিক একধাপ নিচে অর্থাৎ চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারত।

গত বছর বাংলাদেশ থেকে ৭৩৪ কোটি (৭.৩৪ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। একই বাজারে ভারতের রপ্তানি ছিল ৪৬৯ কোটি (৪.৬৯ বিলিয়ন) ডলার। গত বছর ভারতের রপ্তানি তার আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ বেশি হয়েছিল।

ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে সম্পূরক শুল্ক বসিয়েছেন ২৬ শতাংশ। এক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে যে তিনি খাতির করেছেন, তাও অকপটে জানিয়েছেন।

ট্রাম্প বলেছেন, “নরেন্দ্র মোদী আমার বন্ধু। সবে তিনি আমেরিকা থেকে দেশে ফিরেছেন। কিন্তু আমি তাকে বলেছি, আপনি আমার খুবই ভালো বন্ধু হতে পারেন, কিন্তু আপনি আমাদের সঙ্গে ঠিক ব্যবহার করছেন না। ভারত আমাদের পণ্যে ৫২ শতাংশ শুল্ক বসায়, আমরা ২৬ শতাংশ বসালাম।”

ভারতের পণ্যের ওপর আগে যুক্তরাষ্ট্রে আড়াই শতাংশ শুল্ক বসানো ছিল। এখন তার সঙ্গে ২৬ শতাংশ যোগ হলে সব মিলিয়ে দাঁড়াবে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ।

কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আগেই শুল্ক ছিল ১৫ শতাংশ; তার সঙ্গে এখন ট্রাম্প যোগ করলেন ৩৭ শতাংশ। ফলে দুই মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য ঢোকাতে ৫২ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। অর্থাৎ ১০০ ডলারের পণ্য রপ্তানি করলে ৫২ ডলার শুল্ক দিতে হবে।

এটা ভারতের প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকরা বাংলাদেশের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে ভারতের দিকে চলে যাবে বলে আশঙ্কা জাগছে দেশের পোশাক ব্যবসায়ীদের মধ্যে।

এর আগে চীনের পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধির কারণে যে সুযোগ বাংলাদেশ নিয়েছিল, এখন তেমনই সুযোগ নিতে চাইবে ভারতের ব্যবসায়ীরা।

পারভেজ বলেন, “আমাদের সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে। তালগোল পাকিয়ে গেছে সবকিছু। কী হবে, কিছুই বুঝতে পারছি না।

“এটা তো নিশ্চিত যে এই শুল্ক আমাদের রপ্তানির ওপর বড় প্রভাব ফেলবে। এখন কতটা পড়বে, তা নিয়েই আতঙ্কিত আমরা।”

তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা যেমন আতঙ্কিত, তেমননি বাংলাদেশ সরকারেরও শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

কারণ বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য হচ্ছে এই তৈরি পোশাক। সঙ্কটের মধ্যে এই খাতই ডলারের জোগানের বড় উৎস।

বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ে ৮০ শতাংশের বেশি অবদান তৈরি পোশাক খাতের। মোট রপ্তানি আয়ের ২০ শতাংশের মতো আসে যুক্তরাষ্ট্র েথকে। সেখানেও বড় অবদান তৈরি পোশাকের।

ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বিভিন্ন দেশে মোট ৩ হাজার ২৯৪ কোটি ২৬ লাখ (৩২.৯৪ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা। যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি।

এই আয়ের ৮১ দশমিক ৩৪ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। আট মাসে ২৬ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ে ছিল ২৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার।

হিসাব বলছে, জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৪০ কোটি ডলার বা বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় এক লাখ এক হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। তার মধ্যে পোশাক থেকে আয় হয় ৮৮ হাজার ৪০২ কোটি টাকা।

২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৩৬ শতাংশ বেড়ে ৯৭৩ কোটি (৯.৭৩ বিলিয়ন) ডলারে উঠেছিল। সেটা ছিল যাবৎকালের সবচেয়ে বড় অঙ্ক।

২০২৩ সালে রপ্তানি কমে গিয়েছিল। নেতিবাচক সেই ধারা চলে ২০২৪ সালেও। তবে বছরের শেষ দিকে এসে গতি বাড়ায় নামমাত্র প্রবৃদ্ধি দিয়ে শেষ হয়েছিল বছর।

তবে গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে ফিরেই চীন ও মেক্সিকোর ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন।

তাতে ওই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৮০ কোটি ডলারে উঠে যায়, যা গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে ৪৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি।

জানুয়ারির প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের ধারেকাছেও ছিল না চীন, ভিয়েতনাম, ভারতের মতো প্রতিযোগী অন্য দেশগুলো। চীনের বাজারও বাংলাদেশের দখলে আসবে বলে আশায় বুক বেঁধেছিলেন বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা। কিন্তু ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্তে তাদের আশার গুঁড়ে বালি পড়ল এখন।

বাংলাদেশ কোথায়, প্রতিযোগী অন্যরা কোথায়

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৭ হাজার ৯২৬ কোটি (৭৯.২৬ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি হয়েছিল।

এই বাজারে শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে- চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়া।

বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৃতীয় শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক। গত বছর ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে, যা তার আগের বছরের তুলনায় শূন্য দশমিক ৭৩ শতাংশ বেশি। গত বছর বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া প্রতি বর্গমিটার পোশাকের দাম ছিল ৩ দশমিক ১০ ডলার।

বাংলাদেশের পণ্যে নতুন করে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। আগের ১৫ শতাংশ মিলিয়ে এখন শুল্ক দাঁড়াল ৫২ শতাংশে।

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বরাবরই শীর্ষে চীন। গত বছর দেশটি ১ হাজার ৬৫১ কোটি (১৬.৫১ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিল।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমছে। এখন আবার ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প। আগের ২০ শতাংশ মিলিয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্য ঢুকতে হলে ৫৪ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এই অঙ্ক বাংলাদেশের চেয়ে বেশি।

ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। গত বছর তাদের রপ্তানির অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৪৯৮ কোটি (১৪.৯৮ বিলিয়ন) ডলার। এই রপ্তানি ২০২৩ সালের তুলনায় ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি।

ভিয়েতনামের ওপর চীন ও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি শুল্ক বসিয়েছেন ট্রাম্প, ৪৬ শতাংশ। ফলে গত কয়েক বছর দেশটির তৈরি পোশাক রপ্তানি যে গতিতে বাড়ছিল, সেটি শ্লথ হয়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশের পরের স্থানে থাকা ভারতের গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি ছিল ৪৬৯ কোটি (৪.৬৯ বিলিয়ন) ডলারের। তাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

ট্রাম্প ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। আগের আড়াই শতাংশ যোগ করলেও প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় তাদের ওপর আরোপিত শুল্ক কম। আবার দেশটির সরকার তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করেছে বলে ভারতে ক্রয়াদেশ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

২০২০-২১ থেকে ২০২৩-২৪ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ছিল ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার দেশ। ২০২৩-২৪ সালে ৭ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য ভারত রপ্তানি করেছে। ভারত থেকে তৈরি পোশাক ছাড়াও ওষুধ, টেলিকম যন্ত্রাংশ, দামি ও মাঝারি দামের পাথর, পেট্রোলিয়াম পদার্থ, সোনা ও অন্য ধাতু, লোহা-ইস্পাতের মতো পণ্য বেশি রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে।

পোশাক রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের পর পঞ্চম স্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে নতুন করে ৩২ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন ট্রাম্প। গত বছর ইন্দোনেশিয়া ৪২৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিল।

এছাড়া হন্ডুরাসের ওপর ১০ শতাংশ, ক্যাম্বোডিয়ার ওপর ৪৯ শতাংশ, পাকিস্তানের ওপর ২৯ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর ১৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। মেক্সিকোর ওপর এখন শুল্ক আরোপ না করা হলেও গত ফেব্রুয়ারিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসায় ট্রাম্প প্রশাসন।

ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ ১০ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের কেউই স্বস্তিতে নেই। পোশাক রপ্তানিকারক দেশ শ্রীলঙ্কার ওপরও ৪৪ শতাংশ শুল্ক বসেছে।

তবে সবমিলিয়ে ভারত একটু হলেও সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।

এখন কী করার

ট্রাম্পের শুল্ক ঝড় যে আসছে, সেই শঙ্কা আগেই প্রকাশ করেছিলেন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সেলিম রায়হান।

তিনি বলেছেন, “অনেকে ভাবছিলেন, এই রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ শুধু কয়েকটি দেশের ওপর টার্গেট করে করা হবে।

“আমি তখন বলার চেষ্টা করছিলাম যে ইউএসের সঙ্গে যাদের বাণিজ্য ঘাটতি আছে, ট্রাম্প অ্যাডমিনিস্টেশন তাদের সবাইকে টার্গেট করবে। তাই ঘটেছে।”

জানুয়ারিতে ট্রাম্প যখন বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছিলেন, তখন ভারতসহ অন্যান্য দেশ প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেও বাংলাদেশে তা হয়নি বলে হতাশা প্রকাশ করেন সেলিম রায়হান।

এখন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় গিয়ে কোনও সুবিধা করা যাবে না বলে মনে করেন তিনি। তাই নতুন করে চিন্তা-ভাবনার পরামর্শ তিনি িদয়েছেন।

সেলিম রায়হান বলেন, “আমাদের একট বড় বাজার ইউএস এবং সেখানে পোশাক সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে থাকি। এখন এ অতিরিক্ত শুল্ক, তার প্রভাবটা কী হতে পারে, এটা কিন্তু আমাদের দেখতে হবে।”

ট্রাম্পের শুল্কের বড় প্রভাব পড়লেও এখনই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানিতে ধস নামবে বলে মনে করেন না বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ।

তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই নীতি টেকসই হবে কি না, সেটা নিশ্চিত নয়। কারণ, বাড়তি শুল্কের চাপ শেষ পর্যন্ত তাদের ভোক্তার ওপর পড়বে। ফলে তাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হবে।”

তবে পারভেজ বলেন, “এই অতিরিক্ত শুল্কের চাপে মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের প্রথমেই পোশাকের দাম কমানোর ওপর চাপ দিতে পারে। এখন যে ক্রয়াদেশ আছে, সেগুলোর দামও কমাতে বলতে পারে। ফলে সম্মিলিতভাবে সেই চাপ সামাল দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।”

বেসরকারি খাতের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত কৌশল নির্ধারণ করতে সরকারকে পরামর্শ দেন তিনি।

নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেন। তাহলে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক কমাবে।

তিনি বলেন, “যেহেতু খুব বেশি পণ্য দেশটি থেকে আসে না, সেহেতু খুব বেশি ক্ষতি হবে না। বরং পাল্টা শুল্ক কমলে তৈরি পোশাকসহ অন্য পণ্যের রপ্তানি বাড়বে।

“যুক্তরাষ্ট্রের তুলা আমদানি করে পোশাক তৈরি করছি আমরা। সেই পোশাকের বড় অংশ আবার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হচ্ছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কাঁচামাল ব্যবহার করে উৎপাদিত পণ্য তাদের দেশে রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায়ের পদক্ষেপ নিতে পারে সরকার।”

সেলিম রায়হান দেশে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে ট্রাম্পের শুল্ক নীতির চুল-চেরা বিশ্লেষণের পরামর্শ দিয়েছেন সরকারকে।

সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নানা পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের অবশ্যই ইউএস পলিসি মেকারদের সঙ্গে এঙ্গেজ হতে হবে, শুধু বাণিজ্যের জায়গায় নয়, ডিপ্লোমেটিক লেভেলেও এঙ্গেজ হওয়া দরকার।”


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর