প্রকাশিত:
৩০ আগষ্ট ২০২৪, ১৩:২৩
২০০৯ থেকে ২০২৪। দেড় দশকে গুম হন ছয় শতাধিক মানুষ। বিভিন্ন সময়ে এবং শেখ হাসিনা ভারতে পলানোর পর বেশকিছু মানুষ ফিরলেও এখনও নিখোঁজ অনেকে। তাদের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছেন স্বজনরা। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের সহযোগিতা চান তারা।
প্রায় ১১ বছর ধরে স্বামী পারভেজকে খুঁজে ফিরছেন স্ত্রী ফারজানা। শেখ হাসিনার আমলে ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর রাজধানীর শাহবাগ থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়া হয় বংশাল ছাত্রদল নেতা পারভেজকে। তখন চারমাসের গর্ভবতী ছিলেন তিনি।
ফারজানা বলেন, বিয়ের পর স্বামীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পাঁচ বছরের সংসার হয়নি আমার। সংসার কি সেটাই বুঝলাম না।
দুই সন্তান নিয়ে ছোট বোনের সঙ্গে থাকেন ফারজানা। গুম হওয়া জামাইকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরপারে চলে গেছেন তার শ্বশুর। আয়না ঘরসহ বিভিন্ন স্থানে আটকে থাকা অনেকে ফিরে এলেও ফেরেননি ছাত্রদল নেতা পারভেজ। তার ভাগ্যে কী ঘটেছে তা বলছে না কেউ।
ফারজানা আরও বলেন, প্রতিরাতে আমরা ঘুমাতে পারি না। এই বুঝি একটা ফোন আসবে আর শুনতে পাবো যে আমার লোক কোথায় আছে।
১০ বছরের আরাফ কোনোদিন দেখেননি তার বাবাকে। বাবা বলতে স্থিরচিত্রই সম্বল তার। ১৩ বছরের হৃদিরও বাবার স্মৃতিটা ঝাপসা-অস্পষ্ট। স্বজনরা পাশে থাকলেও বাবার অপূর্ণতা তো আর পূর্ণ হয় না।
পারভেজের সন্তানরা জানান, বাবার সাথে একসাথে ঈদ করতে মন চায় তাদের। হৃদি বলে, ছোট থেকে বাবার ছবি নিয়েই সব জায়গায় যাই কিন্তু বাবার হাত ধরে তো কোথাও যেতে পারি না। এই ছবিটাই আমার হাতে থাকে।
ওইদিন একই সঙ্গে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় আরেক ছাত্রনেতা চঞ্চলসহ মোট চারজনকে। চঞ্চল ফিরে আসবে এই আশায় নতুন সংসার পাতেননি স্ত্রী রেশমা আক্তার। এক সন্তানকে নিয়ে থাকেন স্বজনের বাসায়। আশায় বুক বেঁধে আছেন এই বুঝি ফিরবে তার স্বামী। বুকভরা হাহাকারের অবসান হবে ছেলে আহাদের।
রেশমা আক্তার বলেন, ওরা সবাই বেঁচে আছে। ফেরত আসবে। জীবনে এর চেয়ে বড় কষ্ট আর নেই। একা একটা বাচ্চা মানুষ করা, একা জীবন কাটানো যে কত কষ্টের।
চঞ্চলের ছেলে আহাদ বলেন, বাবার হাত ধরে যখন ছেলেরা মেলায় ঘুরছে তখন আমি আমার মার হাত ধরে যাই।
পরিবারগুলোর আশা গুম হওয়া সবাই ফিরবে তাদের স্বজনদের কাছে।
মন্তব্য করুন: